কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা, পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ওসিসহ আহত ১৩

গণ্ডামারা ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত গ্রেপ্তার

বাঁশখালী প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের আলোচিত চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলীকে চট্টগ্রাম জেলা ডিবি পুলিশ বৃহস্পতিবার ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর সুগন্ধা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে।

এর আগে ২৪ মামলার আসামি চেয়ারম্যান লিয়াকত তার দলবল নিয়ে বুধবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বালির ঠিকাদারি বিরোধকে কেন্দ্র করে গণ্ডামারায় ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দফায় দফায় বন্দুকের গুলি ছুঁড়ে ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। হামলাকারীরা ঠিকাদারের মালামালবাহী ৩টি ট্রাকেও ভাঙচুর করেছে।

হামলায় বাঁশখালী থানার ওসি তদন্ত সুমন চন্দ্র বণিক (৩৯), এস আই মো. মাসুদ(২৮), এস আই লিটন চাকমা(৩৯), এএসআই নজরুল ইসলাম (৩৫), এএসআই আব্দুল খালেক(৩০) ও পুলিশ সদস্য মফিজুল আলম(২৮), ঠিকাদার মো. সায়মন, শ্রমিকসহ ১৩ জন আহত হয়েছেন।

৬ পুলিশকে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। লিয়াকতকে গ্রেপ্তারের আগে বাঁশখালী থানায় ঠিকাদার, থানা পুলিশ এবং ডিবি পুলিশ বাদী হয়ে আরো ৩টি নতুন মামলা দায়ের করেছে।

উল্লেখ্য, বাঁশখালী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী ও তার বাহিনীর নেতৃত্বে ১৮বার হামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সন্ত্রাসীদের হামলায় মোট ১৩ জন নিহত ও আহত হয়েছে অন্ততঃ ৩ শতাধিক।

গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান পলাতক আসামি ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত আলী প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করে বক্তব্য দিয়ে আলোচিত হন এবং বাঁশখালীর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে টাকা দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অধিকাংশ স্কুলের সাময়িক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সৃজনশীল প্রশ্নে ‘তাঁর সাথে বঙ্গবন্ধুর তুলনা করে প্রশ্নপত্র করেছিল।

ওই প্রশ্নপত্রের কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার ১৩ জন শিক্ষক জেলে গিয়েছিলেন। এখনও মামলাটি চলমান। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে গত ২০১৭ সালের ২৫ মে চেয়ারম্যান পদে শপথ গ্রহণ করেন। ২০২২ সালের ৪ আগস্ট আবারো শপথগ্রহণ করে গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। কিন্তু তিনি একবারের জন্যও উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভা ও উপজেলা সমন্বয় সভায় কখনো অংশগ্রহণ করেননি।

সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) কামরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর পর গণ্ডামারা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় দেড় শতাধিক পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ডিবি পুলিশ চট্টগ্রাম শহরের সুগন্ধা আবাসিক এলাকার নিজ বাসা থেকে চেয়ারম্যান লিয়াকতকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে বাঁশখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাইনুল ইসলামের আদালতে সোর্পদ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাঁশখালী থানা, বাঁশখালী আদালত, আনোয়ারা থানা, বাকলিয়া থানাসহ বিভিন্ন থানায় লিয়াকতের বিরুদ্ধে ১৯৯৪ সাল থেকে পৃথক পৃথকভাবে নয়জনকে হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, অস্ত্র আইন, বিস্ফোরক উৎপাদনকারী আইন, নাশকতার ঘটনা, চেক জালিয়াতিসহ ২৪টি মামলা রয়েছে।

রহস্য ঘেরা পলাতক লিয়াকতের ২৪ মামলার কয়েকটি হচ্ছে১৯৯৪ সালে গণ্ডামারার আবু তাহের ও ১৯৯৯ সালে গণ্ডামারার নুরুল কবিরকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল গণ্ডামারার মর্তুজা আলী, মো. আংকুর. জাকের আহম্মদ ও জাকের হোসেনসহ ৪ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ আলীকেও প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, ২০১৪ সালে ১৮৭৮ সনের অস্ত্র আইনের ১৯() মামলা নং ১৭, ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বিস্ফোরক উৎপাদনকারী আইন ( সংশোধিত ২০০২) এর ৩/৪ এর ধারায় মামলা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচারুকলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের বাধা, মারধর
পরবর্তী নিবন্ধঅবশেষে পটিয়া থেকে আসামি শ্রাবণ গ্রেপ্তার