
আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আউশ চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ১২ হাজার কৃষক আউশ চাষ করবেন বলে আশা উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের। বছরের শুরুতেই গরমের তীব্র তাপদাহ ও যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় আউশের বীজবপণে কৃষকদের একটু পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। তারপরও সরকারি প্রণোদনা ও উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় আউশ চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টদের আশা।
আনোয়ারা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বরুমচড়া ইউনিয়নের ভরা শঙ্খ খালের মুখে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম হাইড্রোলিক এলিভেটর রাবার ড্যাম নির্মিত হওয়ায় এ বছর উপজেলার বরুমচড়া, বারখাইন আনোয়ারা ও বটতলী ইউনিয়নের বাসিন্দারা বোরো চাষে লোনা পানির প্রভাব মুক্ত হয়েছেন। তাছাড়া আনোয়ারা ইছামতি খালের কৈখাইন নোয়ারাস্তা এলাকায় খালের মুখে বাঁধ ও উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মিত হওয়ায় কৃষি জমির ভাঙন রোধ হওয়ার পাশাপাশি জোয়ারের লোনা পানির ওঠানামা বন্ধের ফলে এ বছর বোরো চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। সে হিসেবে অনুকূল পরিবেশ থাকলে চলতি আউশ মৌসমেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানা গেছে।
আনোয়ারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান জানান, চলতি আউশ মৌসুমে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ চাষের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য উপজেলার ১১ ইউনিয়নে ১২ হাজার কৃষক ইতিমধ্যে মাঠে বীজ তলা তৈরি শেষে কয়েক দিন ধরে আউশের চারা রোপণ শুরু করেছেন। আউশ চাষকে উৎসাহিত করতে উপজেলা কৃষি অফিস আনোয়ারায় সাড়ে ৭শ কৃষকের মাঝে প্রণোদনার সার ও বীজ বিতরণ করেছে।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে এ বছর নতুন জাতের হাইব্রিড, বিনা, টিয়া, হিরা, শক্তি নামের ৮৩,৮৫, ১২০৩, ১২০৫,১০, ১৫, ১৯ জাতের উন্নত বীজ দেয়া হয়েছে। যা কৃষকদের মধ্যে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির প্রচেষ্টায় উপজেলার বরুমচড়া ইউনিয়নের ভরা শঙ্খ খালের মুখে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম হাইড্রোলিক এলিভেটর রাবার ড্যাম প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় এ বছর বোরো চাষ ও শীতকালীন সবজি চাষে দারুণ সাফল্য এসেছে। এ বাঁধ নির্মিত হওয়ায় আনোয়ারার ৪ ইউনিয়নের কৃষকরা বোরো চাষ ও শীতকালীন ফসল চাষে লবণ পানি মুক্ত হয়েছেন। তাছাড়া উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মিত হওয়ায় রায়পুর, বরুমচড়া, জুইদন্ডি, বারখাইন, হাইলধর, চাতরি ও পরৈকোড়া ইউনিয়ন সহ আনোয়ারায় নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানির প্রভাব মুক্ত হয়েছে। কৃষিতে উৎপাদনও বেড়েছে। বর্তমানে বরুচড়া, বারখাইন, হাইলধর সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে আউশ চাষ শুরু হয়েছে। তাছাড়া আনোয়ারার কৃষি উন্নয়নে উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ দিক নির্দেশনা ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।
বারখাইন ইউনিয়নের শোলকাটা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মহিউদ্দিন জানাস, মৌসুমের শুরুতে গরমের তীব্র তাপদাহের কারণে সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় আউশ চাষ কিছুটা দেরিতে শুরু করেছেন। এ বছর তিনি ৭ একর জমিতে আউশ চাষ করবেন বলে জানান। সে অনুযায়ী বীজতলা তৈরির কাজও শেষ করেছেন। দুই এক দিনের মধ্যে পুরোদমে চাষাবাদ শুরু করবেন।