পাহাড় কাটা রোধে প্রয়োজন নাগরিকদের সমন্বিত উদ্যোগ

| বুধবার , ৯ জুলাই, ২০২৫ at ৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ

পাহাড় কাটার উৎসব চলছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। আমরা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করছি, বিভিন্ন স্থানে অবাধে পাহাড় কাটা চলছে। এই মাটি নিচু এলাকা ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন ট্রাক্টর বোঝাই করে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। পাহাড় কাটার কাজ শুরুর আগে সেখানে অনেক গাছগাছালি ছিল। সেগুলো প্রথমে পরিষ্কার করা হয়। তারপর তারা মাটি কেটে নিয়ে যায়। পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কাটা চলছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন পাহাড় কাটা বন্ধে কোনো ভূমিকা রাখছে না বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। পাহাড় কাটার কারণে বেশ কিছু বনজঙ্গল কাটা পড়েছে। ন্যাড়া হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পাহাড়ের বিশাল এলাকা। এভাবে পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।

গত ৬ জুলাই ‘বর্ষায়ও থেমে নেই পাহাড় কাটা’ শীর্ষক প্রকাশিত আজাদীর প্রতিববেদনে জানা যায়, নগরীতে থামছে না পাহাড় কাটা। থামানো যাচ্ছে না। রাতের আঁধারে কাটা হয় পাহাড়। কোনো কোনো এলাকায় দিনের বেলায় চলছে পাহাড় কাটা। ভর বর্ষার বৃষ্টিকে পুঁজি করেও কৌশলে কাটা হচ্ছে পাহাড়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানাভাবে তোড়জোড় চলে, পরিদর্শন করা হয়, মামলা হয়। জরিমানাও করা হয়। কিন্তু কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না পাহাড়খেকোদের। নগরীর বায়েজিদ, আকবরশাহ এবং খুলশী এলাকার পাহাড়গুলোতে কোদালশাবলের হানা অব্যাহত রয়েছে। গত শনিবার পাহাড় কাটার সময় তিন শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। পাহাড় কাটার নির্দেশদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় দুই শতাধিক পাহাড় ছিল। কিন্তু কাটতে কাটতে এখন ৬০৭০টিতে নেমে এসেছে। এগুলোতেও নিয়মিত কোদালের কোপ পড়ছে। নগরীর অন্তত ১০টি এলাকায় পাহাড় কাটা চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পাহাড় কাটা চলছে বায়েজিদ থানার চন্দ্রনগর কলাবাগান এলাকায়। এখানে সুযোগ বুঝে থেমে থেমে পাহাড় কাটা হচ্ছে। নগরীর আকবরশাহ, পাহাড়তলী, বায়েজিদ, জঙ্গল সলিমপুর, জঙ্গল লতিফপুর, খুলশী, লালখান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটা চলছে। ফৌজদারহাটবায়েজিদ লিংক রোড ঘিরেও চলছে পাহাড় কাটা।

সরকারি ছুটির দিনগুলোতে পাহাড় কাটা নতুন মাত্রা পায়। বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েও পাহাড় কাটা চলে। পাহাড় কাটা হয় বৃষ্টির সময়। পাহাড়ের পাদদেশ কৌশলে কেটে দেওয়া হয়, যাতে বৃষ্টির পানিতে উপরের পাহাড় ধসে পড়ে। জালালাবাদ, আরেফিন নগর, চন্দ্রনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কেটে প্রথমে খেতখামারের মতো করা হচ্ছে। পরে তোলা হচ্ছে পাকা অবকাঠামো। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে দফায় দফায় সতর্ক করা হলেও বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না।

পাহাড় কাটা বন্ধে ইতোপূর্বে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, তালিকা পূর্ণ করে মালিকদের নাম দিন। পাহাড় যখন কাটবে মালিককে গ্রেপ্তার করবেন, শ্রমিকদের নয়। দুজন মালিককে গ্রেপ্তার করবেন, দেখবেন পাহাড় কাটা বন্ধ হবে। এই টম অ্যান্ড জেরি খেলা আর আমাকে দিয়ে খেলাবেন না।

প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা রাতে পাহাড় কাটে। রাত জেগে পাহারা দেবেন। এটা আপনার দায়িত্ব। এটা সরকারের আইন। ৯টা৫টা অফিস কোনো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী করতে পারে না। কেউ বলতে পারবে না আমার অফিস টাইম ৯টা থেকে ৫টা। তাকে সব সময় প্রজাতন্ত্রের সেবায় থাকতে হবে। তিনি বলেন, মালিকদের নাম ধরে চট্টগ্রামের শীর্ষ পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞপ্তি দেবেন। এই দাগখতিয়ানে পাহাড় আছে, এগুলো কাটা যাবে না। তারপর চট্টগ্রাম শহরের কোথায় কোথায় পাহাড় আছে একটা স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি করেন। বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিডিএ, বন বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ সব সংস্থার প্রতিনিধি নিয়ে এটা করতে হবে। চট্টগ্রামকে সাতটা ভাগে ভাগ করে ফেলেন। সাতটা কর্মকর্তা সাতটা ভাগের দায়িত্বে থাকবে।

পাহাড়খেকোদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে পাহাড়খেকোরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো সাবাড় হওয়ার শঙ্কা দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে সমাজের স্বার্থান্বেষী মানুষ আর বিগত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে বিলুপ্ত হয়েছে চট্টগ্রামের প্রায় ১৩০টির অধিক পাহাড়। আধুনিক সভ্যতার আধুনিকায়নে চট্টগ্রামের পরিবেশ যেন এক গুমোট বাঁধা নৈরাজ্যের সাক্ষী। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে নগরী এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। তাই পাহাড় কাটা রোধে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে। এছাড়া চট্টগ্রামের পাহাড় কাটা রোধে প্রয়োজন নাগরিকদের সমন্বিত উদ্যোগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধসুখলতা রাও : শিশুসাহিত্যিক