চন্দনাইশে ককটেল বিস্ফোরণ, গুলি

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | সোমবার , ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচন চলাকালে কেন্দ্র দখল ও জাল ভোট দেয়ার ঘটনায় বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে পৌরসভার পূর্ব জোয়ারা এলাকার ফরিদ উদ্দীনের পুত্র ফোরকান উদ্দিন (২৮), মৃত নুরুল আমিনের পুত্র মেজবাহ উদ্দীন (৩৮), আবদুর রহিমের পুত্র মোহাম্মদ অভি (২১), উত্তর জোয়ারা এলাকার মৃত রস মোহন চৌধুরীর পুত্র দুলাল চৌধুরী (৭০), দক্ষিণ গাছবাড়িয়া এলাকার আবদুস ছোবহানের স্ত্রী আনজুমান খাতুন (৭০) এবং পূর্ব গাছবাড়িয়া এলাকার লেদ মিয়ার পুত্র মো. হাবিবের (২০) নাম জানা গেছে। আহতদের চন্দনাইশ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসার পর মেজবাহ উদ্দীন, হাবিব ও দুলালকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। গতকাল রোববার চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটলেও মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে কোনো ধরনের বিশৃক্সখলা চোখে পড়েনি।
জানা যায়, ৪র্থ ধাপে অনুষ্ঠিত চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচনে গতকাল সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শুরু থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলে। কিন্তু দুপুর সোয়া ১২টার সময় ৩ নং ওয়ার্ড দক্ষিণ পূর্ব জোয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থী মো. হেলাল উদ্দীন চৌধুরী (পাঞ্জাবি) ও মো. আনোয়ার হোসেনের (উটপাখি) সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় দুই পক্ষের সমর্থকরা হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয়। এতে উভয় পক্ষের ১০ জনের বেশি আহত হন।
খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রেজোয়ানা আফরিন, পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দক্ষিণ আফরুজুল হক টুটুল, র‌্যাব- ৭ এর এএসপি রকিবুল হাসান, ওসি নাসির উদ্দিন সরকার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাদের সাথে বিপুল সংখ্যক আনসার, পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় ওই কেন্দ্রে ২০ মিনিট ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে।
এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জহিরুল হক বলেন, কেন্দ্রের বাইরে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হলেও ভোট কেন্দ্রে কোনো ধরনের বিশৃক্সখলার ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৮ নং ওয়ার্ড দক্ষিণ গাছবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আবু তৈয়ব (ডালিম) ও মো. আবদুর রহিমের (উটপাখি) সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
১২টার দিকে ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা কবির আহমদ জানান, হঠাৎ ১০/১২ জন যুবক এসে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে সুমন (২৮), হাবিব (২৪) ও অজ্ঞাত এক নারীসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।
এছাড়া ৯ নং ওয়ার্ড গাছবাড়িয়া এন জে উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরেও কাউন্সিলর প্রার্থী মো. খোরশেদ আলম সবুজ (ব্ল্যাক বোর্ড) ও মো. লোকমান হাকিমের (গাজর) সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
১ নং ওয়ার্ডে কেন্দ্র দখল নিয়ে দুপুর ১টার দিকে কাউন্সিলর প্রার্থী অজয় দত্ত (ব্ল্যাক বোর্ড) ও সুজন সরকারের (পানির বোতল) সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয়রা জানান। দুপুর আড়াইটার দিকে কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে ৭ নং ওয়ার্ডের চন্দনাইশ আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্রের বাইরেও মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী (টেবিল ল্যাম্প) ও মো. শওকত হোসেনের (ডালিম) সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনার পর বিকাল ৩টার দিকে এ কেন্দ্রে ভোট বন্ধ হওয়ার পর আর ভোটগ্রহণ হয়নি।
এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জহির উদ্দীন জানান, ভোট কেন্দ্রের বাইরে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে মহিলা ভোটারদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে শেষ সময়ে ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়।
৫ নং ওয়ার্ড দক্ষিণ হারলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও দুপুরে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মৃদু উত্তেজনা দেখা দেয়।
সকাল সাড়ে ৯টায় গাছবাড়িয়া এন জে উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার মেয়র প্রার্থী মুহাম্মদ মাহাবুবুল আলম খোকা সাংবাদিকদের বলেন, সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট হচ্ছে। পর্যাপ্ত আইনশৃক্সখলা বাহিনী ভোটগ্রহণে সহায়তা করছেন। কোনো ধরনের বিশৃক্সখলা নেই। জনগণ আমাদের সাথে আছে এবং বিজয় নৌকারই হবে।
দুপুরে চন্দনাইশ সদরে ইসলামী ফ্রন্টের মেয়র প্রার্থী মুহাম্মদ ফারুক বাহাদুর সাংবাদিকদের বলেন, এখানে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। তারপরও নির্বাচন বর্জন করছি না। সর্বশেষ পরিস্থিতি দেখতে চাই। তিনি বলেন, প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে আমাদের এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। নৌকা মার্কার সিল মারা ব্যালট দেয়া হচ্ছে কয়েকটি কেন্দ্রে। নির্বাচনের নামে তামাশা হচ্ছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলংকিত করা হচ্ছে।
বিকেল ৩টার দিকে চন্দনাইশ আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থী মাহাবুবুল আলম চৌধুরী বলেন, চন্দনাইশের জনগণের সাথে নির্বাচন কমিশন তামাশা করছে। তিনি বলেন, ভোট শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রতিটি কেন্দ্র দখল করে নৌকা মার্কায় সিল মারা হয়েছে। কোনো ভোটারই মেয়র প্রার্থীর প্রতীকে ভোট দিতে পারেননি। নির্বাচনে অনিয়মের কথা উল্লেখ করে বিকালে তিনি ইউএনও ও রিটার্নিং অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে সকাল থেকে কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। বিশেষ করে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল বেশি। তবে কিছু কিছু কেন্দ্রে পুরুষ ভোটারের উপস্থিতিও দেখা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৪৮ সালে প্রথম রাষ্ট্রভাষা দিবসে আহত হন অনেক ভাষাকর্মী
পরবর্তী নিবন্ধকাউন্সিলর প্রার্থীর ভাই নিহত