নতুন বাংলাদেশে নতুন চট্টগ্রাম চাই

নগরীতে এনসিপির সমাবেশে নাহিদ চট্টগ্রাম স্বাধীনতার দুয়ার, কেউ চোখ তুলে তাকালে বিদ্রোহ করবে সমগ্র বাংলাদেশ কালুরঘাট থেকেই মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২১ জুলাই, ২০২৫ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার অংশ দাবি করে জাতীয় নাগরিক পার্টিএনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হচ্ছে এ চট্টগ্রাম। বাণিজ্যের লাইফলাইন হচ্ছে এ চট্টগ্রাম। কিন্তু আমরা জানি, আমরা দেখছি চট্টগ্রামকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নানা পরাশক্তি চট্টগ্রামের দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছে। আমরা হুঁশিয়ার করতে চাই, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার অংশ। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ভিত্তি। যদি চট্টগ্রামের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকায় সমগ্র বাংলাদেশ একসাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করবে। জাতীয় নিরাপত্তা আর সার্বভৌমত্বের জন্য চট্টগ্রামকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল মনে করি। চট্টগ্রামকে অথনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সমগ্র শক্তিকে বিজয় করতে হলে, ন্যায়ের শক্তিকে শক্তিশালী করতে হলে আমাদের এ চট্টগ্রামকে শক্তিশালী করতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি চট্টগ্রামকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলবে ইনশাআল্লাহ। নতুন বাংলাদেশে নতুন চট্টগ্রামও দেখতে চান তিনি।

গতকাল রোববার রাত ৮টার দিকে নগরীর দুই নম্বর গেট বিপ্লব উদ্যানে এনসিপির সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। নাহিদ বলেন, প্রিয় চট্টলাবাসী, আমরা এসেছি এ মাটিতে, যে মাটিতে শহীদ ওয়াসিম শহীদ হয়েছিলেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ শান্ত, শহীদ ফারুকসহ অসংখ্য শহীদ ও আহতরা এ চট্টগ্রামে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছিলেন। ঢাকার পরে দ্বিতীয় দুর্গ হিসেবে চট্টগ্রাম নিজেদেরকে ঘোষণা করেছিল। চট্টগ্রাম ফ্যাসিস্টদেরকে তাড়িয়েছে, নতুন কাউকে ফ্যাসিবাদ তৈরি করতে চাইলেও তাদের প্রতিরোধ করবে এ চট্টগ্রাম।

তিনি বলেন, আজকে অনেকে বাধাবিপত্তি, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এসেছেন। আমরা বলে দিতে চাই ‘বউত দিন খাইয়ো আর ন খাইয়ো’। আমরা আর কাউকে খাবার সুযোগ দেব না। আমরা এই চট্টগ্রামকে জনগণের চট্টগ্রাম, নাগরিকের চট্টগ্রাম হিসেবে ঘোষণা করলাম। গুটিকয়েক পরিবারের হাতে চট্টগ্রামকে আমরা ছেড়ে দেব না। এখানে পাহাড়িবিহারি, হিন্দুমুসলমান সকল জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করতে হবে। সকল সম্প্রদায়ের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। চট্টগ্রামকে বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতির নগর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

চট্টগ্রামের ইতিহাসঐতিহ্য নিয়ে নাহিদ বলেন, চট্টগ্রাম যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের পাতায় পাতায় বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করে আসছে। চট্টগ্রামের সিপাহি বিপ্লবের কথা আমরা জানি। সূর্যসেন আর প্রীতিলতার কথা জানি। ১৯৭১ সালে এই চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকেই মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার দুয়ার, আমাদের সার্বভৌমত্বের দুয়ার। ইসলাম সাম্য আর মানবতার বার্তা নিয়ে এই চট্টগ্রাম দিয়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। এজন্য চট্টগ্রামকে বলা হয় ইসলামের প্রবেশদ্বার, ইসলামের দরজা। চট্টগ্রাম বহু সংস্কৃতি আর বহু ভাষার নগরী। এই চট্টগ্রামে অনেক জাতিগোষ্ঠী, বহু সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বসবাস করছে।

তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি এ ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রামের নাগরিক সমস্যার সমাধান করতে চায়। এই ঐতিহাসিক নগরী নানা অবহেলার কারণে, নানা লুটেরার কারণে, নানা মাফিয়ার কারণে বেহাল দশায় রয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীকে নতুন করে সাজাতে হবে। এই চট্টগ্রাম নগরীকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। নতুন বাংলাদেশে আমরা নতুন চট্টগ্রাম দেখতে চাই। চট্টগ্রামের হারানো ঐতিহ্য আমরা পুনরুদ্ধার করব।

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা দেশ গড়ার জন্য পদযাত্রা শুরু করেছি। এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে বৈষম্য থাকবে না, চাঁদাবাজি থাকবে না, দুর্নীতি থাকবে না, স্বৈরতন্ত্র থাকবে না।

কঙবাজারের চকরিয়ায় পথসভায় বিএনপি নেতাকর্মীদের এনসিপির মঞ্চ ভাঙচুরের বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, বাধা দিয়ে তারুণ্যের শক্তিকে থামানো যাবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নাহিদ বলেন, আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী কঙবাজারে সত্য উন্মোচন করেছেন। সেই সত্য উন্মোচন করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। বাঁশখালীতে আমাদের সহযোদ্ধার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের সময় আমরা বলেছিলাম বাধা দিলে বাঁধবে লড়াই, এ লড়াইয়ে জিততে হবে। আজও বলতে চাই, বাধা দিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির তারুণ্যের শক্তি, চট্টগ্রামের শক্তিকে থামানো যাবে না। বক্তব্যের মাঝে তিনি স্লোগান ধরেন, ক্ষমতা না জনতা জনতা জনতা; আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম; মুজিববাদ মুজিববাদ মুর্দাবাদ মুর্দাবাদ; চট্টগ্রামের অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন, এনসিপির অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন।

সমাবেশে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, নতুন বাংলাদেশে আমরা লুটপাটের রাজনীতি দেখতে চাই না। ব্রিজ, কালভার্ট, বিল্ডিং দেখিয়ে এদেশের মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। ১০ হাজার টাকার প্রজেক্ট কিভাবে ৫০ হাজার টাকা হয়ে যায় বাংলাদেশের মানুষ তার জবাব চায়। বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘ সময় ধরে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। থানায়, পাসপোর্ট অফিসে, শিক্ষা ভবনে, নির্বাচন অফিসে, সচিবালয়ে গিয়ে হয়রানির শিকার হয় মানুষ। আমরা রাষ্ট্রীয় সেবার ক্ষেত্রে মানুষকে আর হয়রানির মধ্যে রাখতে চাই না। তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশকে নিয়ে দেশিবিদেশি নানা ষড়যন্ত্র চলছে। এই বাংলাদেশে যারা ঘাপটি মেরে থেকে সন্ত্রাস করতে চায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতাসার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের প্রতি আহ্বান, পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসনে মৌলিক সংস্কার করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কার এবং বিচার প্রয়োজন।

সমাবেশে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের অতীত প্রজন্ম আমাদের কিছু দিয়ে যায়নি। তারা আমাদের ভঙ্গুর অর্থনীতি, শিক্ষানীতি, ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আর সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষকলহ দিয়ে গেছে। আমরা যারা নতুন প্রজন্ম আছি, আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে; এসব সমস্যা সমাধান করতে হবে। আপনারা যদি সামনে এগিয়ে আসেন, এ তরুণ প্রজন্ম যদি দায়িত্ব নেয়, আমরা বিশ্বাস করি এ তরুণ প্রজন্মকে রক্ত দিয়ে, লোভ দিয়ে কেনা যায় না। হাসিনা চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কিনতে পারে নাই।

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ইমন সৈয়দ ও জোবায়রুল হাসান আরিফ, যুগ্ম সদস্য সচিব সাগুপ্তা বুশরা ও মীর আরশাদুল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আলী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সালমা নিভা এবং জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক তারেক আলী। এনসিপির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সামান্তা শারমিন, ডা. তাসনীম জারা ও তাসনুভা আলম।

এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে জমায়েতের পর পদযাত্রা নিয়ে ষোলশহর দুই নম্বর গেট বিপ্লব উদ্যানে যান এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। ঢোলবাদ্যের তালে তালে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যান নেতাকর্মীরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএনসিপির পদযাত্রায় স্লোগানে স্লোগানে মুখর নগরী
পরবর্তী নিবন্ধআইজিএমআইএস কলেজে এমবিএ’র ওরিয়েন্টেশন সম্পন্ন