চলমান কারফিউয়ে গোপালগঞ্জ জেলায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। বুধবার রাত থেকে সীমিত আকারে রিকশা চলাচল করলেও অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি, বন্ধ ছিল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হয়নি। রাতে শহরে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাস্তা–ঘাট, হাট–বাজারে মানুষের আনাগোনা নেই বললেও চলে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান।
এদিকে ব্যাপক সংঘাত–সহিংসতার প্রেক্ষাপটে গোপালগঞ্জ জেলায় জারি করা কারফিউ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ১৬ জুলাই রাত ৮টা থেকে ১৭ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে চলমান কারফিউ ১৮ জুলাই (শুক্রবার) সকাল ১১টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ থাকবে না। এরপর দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ চলমান থাকবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ২ জনকে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। আহত আরো ৩ জন পুলিশ সদস্যকে রাজারবাগ হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে।
এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এনসিপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে যাতে আর এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হবে। যারা অন্যায় করেছে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং হবে। কাউকে কোনো রকম ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন, যতোদিন পর্যন্ত সব অপরাধী ধরা না পড়বে, ততোদিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা এসময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে যান।
আগাম তথ্য ছিল না : জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপির কর্মসূচি ঘিরে গোপালগঞ্জে এত বড় ঘটনা ঘটবে, এ ধরনের আগাম কোনো তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে না থাকার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচি ঘিরে মঙ্গলবার রাত থেকে কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ায়। এ অবস্থায় বুধবারের পরিস্থিতি নিয়ে আগাম কোনো তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে ছিল কিনা, প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গোয়েন্দাদের তথ্য ছিল, তবে এতো পরিমাণ যে হবে ওই তথ্য ছিল না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে না পারার অভিযোগ করেছেন এনসিপি নেতারা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাতো আপনিও দিতে পারেন, যার যার বক্তব্য সে সে দিবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সেখানে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। এ ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গোপালগঞ্জের ঘটনায় জড়িত সকলকে গ্রেপ্তার করা না হলে এনসিপি ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি দেওয়ার কথা বলছে। এ ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যারা অন্যায় করেছে, তারা গ্রেপ্তার হবে।
এদিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচি ঘিরে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তো আমার মতে আমি যতটুকু দেখেছি ভালো ভূমিকা পালন করেছে। এবং তারা সফলভাবে সেখান থেকে প্রত্যেককে ইভাকুয়েট করতে পেরেছে। এবং আশা করছি, আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লিডারশিপে– যারা এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে, অস্ত্রশস্ত্রসহ হামলা করেছে– তাদেরকে তারা গ্রেপ্তার করবে। বৃহস্পতিবার বিডায় আয়োজিত এক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তিনি এ কথা বলেন।