নিজেদের মাঠে হার দিয়ে শুরু করা চট্টগ্রাম দ্বিতীয় ম্যাচে ফিরেছিল দুর্দান্তভাবে। রোববার মেহেদী হাসান মিরাজকে ঘিরে দিনভর নাটকের পর গতকাল আবার মাঠে নামে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। তবে মাঠের বাইরের সে ঘটনার প্রভাব যে মাঠে বেশ ভালই পড়েছে তার প্রমান চট্টগ্রাম দলের ব্যাটিং এবং বোলিং। বিপিএলের এবারের আসরের একমাত্র অপরাজিত দল কুমিল্লার সামনে উড়ে গেল চট্টগ্রাম বল হাতে চট্টগ্রামের বোলাররা দিয়েছে ১৮৩ রান। আর ব্যাটাররা সে রানের ধারে কাছেও যেতে পারেনি। বল হাতে নাসুম কিছুটা সচল হলেও বাকিরা ছিল সমান ব্যর্থ। আর ব্যাট হাতে সবাই যোগ দিয়েছে ব্যর্থতার মিছিলে। ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল উইল জেকস। আগের ম্যাচে ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরি করা জেকস এ ম্যাচেও ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন। কিন্তু দলকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে পারলেন না। মাঠের বাইরে এবং ভেতরে অস্বস্তির এক দিন কাটানো চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স হেরেছে ৫২ রানে। আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স তুলে নিয়েছে তিন ম্যাচে শতভাগ জয়। লিটন, ডুপ্লেসিস, ডেলফোর্ডদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর নাহিদুল, মোস্তাফিজ, শহীদুল, তানভীরদের হিসেবী বোলিংয়ের কাছে হার মানতে হয়েছে চট্টগ্রামকে। এই ম্যাচে চট্টগ্রামের ব্যাটাররা করেছে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতার প্রদর্শনী। ফল নিজেদের মাঠে তিন ম্যাচের দুটিতেই হার। ছয় ম্যাচে চট্টগ্রামের জয় তিনটি। আর কুমিল্লা তুলে নিয়েছে তিন ম্যাচে তিন জয়। জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাট করতে নামা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের শুরুটা ভাল হয়নি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ফিরেন মাহমুদুল হাসান জয়। দলের রান তখন মাত্র ৪। এরপর জুটি গড়েন লিটন দাশ এবং ফাফ ডু প্লেসিস। দু’জন মিলে দারুনভাবে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। গড়েন ৫৫ বলে ৮০ রানের জুটি। ৩৪ বলে ৪৭ রান করে নাসুমের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরেন লিটন। ৫টি চারের পাশাপাশি একটি ছক্কা মেরেছেন লিটন। পরের বলে আউট হয়ে যেতে পারতেন ডুপ্লেসিস। আম্পায়ার আউট দিলেও শেষ পর্যন্ত রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ডুপ্লেসিস। কিন্তু অধিনায়ক ইমরুল কায়েস এসে মাত্র ৭ বল সঙ্গ দিতে পেরেছিলেন ডু প্লেসিসকে। ফিরেছেন মাত্র ১ রান করে। এরপর ডুপ্লেসিসের সাথে জুটি বাধেন ক্যামেরন ডেলফোর্ড। আর তাতেই হু হু করে বাড়তে থাকে কুমিল্লার রান। এদুজন অবিচ্ছিন্ন থেকে যান ৪৯ বলে ৯৭ রান যোগ করে। আর তাতেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ১৮৩ রানে। ৫৫ বলে ৮টি চার এবং তিনটি ছক্কার মাহায্যে৮৩ রান করে অপরাজিত থাকেন ডুপ্লেসিস। আর ২৩ বলে ৪টি চার এবং তিনটি ছক্কার সাহায্যে ৫১ রান করে অপরাজিত থাকেন ডেলফোর্ড। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের পক্ষে ২টি উইকেট নেন নাসুম আহমেদ। জবাব দিতে নামা চট্টগ্রাম প্রথম ওভারেই উইকেট হারায়। ইনিংসের প্রথম বলেই চার মারেন কেনার লুইস। পরের বলে ক্যাচ দেন ডুপ্লেসিসের হাতে। পরের ওভারে মোস্তাফিজের বলে ফিরেন আফিফ হোসেন। সাব্বির রহমানও পারেননি দলের বিপদে হাল ধরতে। নাহিদুলের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরেন মাত্র ৫ রান করে। এরপর উইকেটে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আগের রাতে নানা নাটকের পর দলে থেকে যাওয়া মিরাজ বল হাতে ভাল করতে না পারলেও ব্যাট হাতে ভাল কিছু করার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। একটি ছয় এবং একটি চার মেরে শুরুটা ভাল করেছিলেন। কিন্তু পরের ওভারেই শেষ সব জারিজুরি। নাহিদুলের বলে স্টাম্পিং হয়ে ফিরলেন মিরাজ ১০ রান করে। অধিনায়ক নাইম ইসলামও হাঁটলেন আগের চার জনের পথে। তিনি ফিরলেন ৮ রান করে। দল যখন চরম বিপর্যয়ে তখন ব্যর্থ বেনি হাওয়েলও। তানভীরের বলে বোল্ড হযে ফিরেন তিনি ২ রান করে। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করে যাচ্ছিলেন উইল জেকস। কিন্তু অপর প্রান্তে তিনি কেবলই আসা যাওয়া দেখছিলেন। মৃত্যুঞ্জয় কিছুটা সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করলেও তিনি ফিরেছেন অপয়া ১৩ রান করে। অপরদিকে বেচারা জেকস আর কতক্ষনইবা লড়াই করবেন। এক পর্যায়ে তিনিও দিলেন রণে ভঙ্গ। দলকে ১২৩ রানে পৌঁছে দিয়ে তিনি ফিরেছেন তানভীরের বলে বোল্ড হয়ে। ফিরে আসার আগে ৪২ বলে ৭টি চার এবং ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৬৯ রান করে আসেন। এরপর নাসুম, শরীফুলরা আরো কিছুটা এগিয়ে যাবার চেষ্টা করলেও তাতে সফল হয়নি। ১৫ বল বাকি থাকতে অল আউট হয় ১৩১ রানে। চট্টগ্রামের আট জন ব্যাটসম্যান যেতে পারেনি দুই অংকের ঘরে। কুমিল্লার পক্ষে তিনটি উইকেট নিয়েছেন নাহিদুল। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ, তানভীর এবং শহীদুল। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ব্যাট হাতে ঝড় তোলা ফাফ ডুপ্লেসিস।