বিক্ষোভের মুখে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে। অভিযানের তৃতীয় দিনে এসে স্থানীয় পেশকার পাড়া বাসিন্দাদের বাঁধার মুখে ফিরে গেছে প্রশাসন। গতকাল বুধবার সকালে বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসনের বুলডোজারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পথ অবরোধ করে আটকে দেয় স্থানীয়রা। পরে পেছনে এসে নদীর অংশ থেকে অভিযান শুরু করার চেষ্টা করলে সেখানেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। জনতার বাধার মুখে উচ্ছেদকারী দলকে ফিরিয়ে নেওয়া হয় বলে জানান বিআইডব্লিটিএ–এর বন্দর বিভাগের পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন। ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যের উপস্থিতিতে নির্বাহী হাকিম জনতাকে সরে যাওয়ার জন্য বার বার আহ্বান জানালেও তাদের সরানো যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তাদের কাছে এসব জায়গার বৈধ কাগজ ও খতিয়ান রয়েছে। তারা প্রাণ দেবেন কিন্তু উচ্ছেদ অভিযান করতে দেবেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা ওমর আলী বলেন, হাসিনা জনগণের ওপর জুলুম করেছিল বলে বিতাড়িত হয়েছে। এখন ইউনুস সরকারও একই কাজ করছে। কোনো সরকার নিজের দেশের মানুষকে ঘরছাড়া করে না। আমরা কোনো অবস্থাতেই এই জায়গা ছাড়ব না। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারীদের পায়ে পড়ে আকুতি জানিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এক নারী বলেন, আমি মুদি দোকান করে সংসার চালাই। স্বামী নেই, ছোট ছোট বাচ্চা আছে। দয়া করে আমার মাথার ছাদ কেড়ে নেবেন না। খবর বিডিনিউজের।
মাটি হাতে নিয়ে সাজেদা আক্তার বলেন, এই ভিটা আমি অনেক কষ্টের পর পেয়েছি। আমার কাছে তো সব কাগজপত্র আছে। তবুও কেন ভিটেমাটি ভাঙবে? প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নদী তীরে বসবাস করছেন দাবি করে শায়েমা খাতুন বলেন, বাপ–দাদার আমল থেকে আমরা এখানে আছি। এখন যদি উচ্ছেদ করেন তাহলে মেয়েদের বিষ খাইয়ে আমিও বিষ খেয়ে মরব। এলাকাবাসীর দাবি, বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও রোহিঙ্গাদের মতো আচরণের শিকার হচ্ছেন তারা। তাদের অভিযোগ, খতিয়ান ও খাজনার কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে।
নিলামের বিষয়ে সরকারের কাছে জবাব চেয়ে এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের কাছে হোল্ডিং ট্যাক্সের কপি আছে। এই জায়গা যদি অবৈধ হয় তাহলে পৌরসভা ট্যাক্স নিল কেন? আর এই জায়গাগুলোর মালিক কি সরকার? তারা কোন অধিকারে এগুলো নিলাম করছে। আমাদেরকে জবাব দিতে হবে। একপর্যায়ে বেলা সোয়া ৩টার দিকে বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযানস্থল থেকে সরে আসেন। এতে তৃতীয় দিনে কোনো ধরনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি।
উচ্ছেদ করতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিটিএ কর্মকর্তা আরিফ উদ্দিন বলেন, কিছু কিছু কাজ দুই ধাপ আগানোর উদ্দেশে পেছানো হয়। সকাল থেকে আমরা কেমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি তা আপনারা সবাই দেখেছেন। এখানে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশে আমাদের কাজকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। তারা নানাভাবে বিশৃক্সখল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ অভিযান কাজে নিয়োজিত নির্বাহী হাকিমকে সঙ্গে নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বসে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিআইডব্লিটিএর এই পরিচালক।
বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধভাবে দখল করে তৈরি স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান শুরু হয় সোমবার। দুই দিনে অন্তত যেখানে ৭০ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। দ্বিতীয় দিন অভিযানের শুরুতে অবৈধ দখলদারদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে পুলিশের এক সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করা হয়। পরে আটক চারজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান কক্সবাজার সদর থানার ওসি ইলিয়াস খান।












