প্রতিমা বিসর্জনে লোকারণ্য কক্সবাজার সৈকত

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ৬ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, লাখো মানুষের মিলনমেলার মধ্য দিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অনুষ্ঠিত হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন। দেশের বৃহত্তম এ বিসর্জন অনুষ্ঠানে ভক্ত পূজারিদের পাশাপাশি পর্যটকও অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এ উপলক্ষে নেয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। করোনাকালে বন্ধ থাকার পর গতকাল বুধবার বিকালে সৈকতে ২ শতাধিক প্রতিমা এনে বিসর্জন দেওয়া হয়। কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল করের সভাপতিত্বে বিজয়া সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি সম্প্রীতির রাষ্ট্র, এটা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও প্রমাণিত হয়েছে। এই উন্নয়নশীল বাংলাদেশে একটা সময় সাম্প্রদায়িকতার যারা বীজ বুনে অপতৎপরতা চালিয়েছিল তারা চিহ্নিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানের আরও বক্তব্য দেন কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম ও পৌর মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।
হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, হাটহাজারীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজা উৎসব মহাসমারোহে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার বিজয়া দশমির দিন দেবী দুর্গাকে বিসর্জনের মাধ্যমে পূজার আনুষ্ঠানিক সম্পন্ন হয়। ফতেয়াবাদ চৌধুরীহাট, হাটহাজারী পৌরসভা, আমিচ নাথ সংঘ, এনায়েতপুর কালী বাড়ি, পশ্চিম ধলই শীতলাবাড়ি ও ফরহাদাবাদ শীল বাড়িতে আনুষ্ঠানিক প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়। শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য উপজেলা প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সার্বক্ষণিক সচেষ্ট ছিল।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে মাস্টার অশোক কুমার নাথ ও মাস্টার সুজন তালুকদার শান্তিপূর্ণভাবে পূজা অনুষ্ঠান উদযাপনে সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা করায় উপজেলা প্রশাসন, আইন-শৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী বিদ্যুৎ বিভাগ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, জনপ্রতিনিধি সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারের চকরিয়ায় পাঁচদিনব্যাপী সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। পৌরসভাসহ পুরো উপজেলাজুড়ে ৪৮টি মণ্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি মণ্ডপে সকাল থেকে গভীররাত পর্যন্ত মহা ধুমধামে পূজার্চনা করেন সনাতনী সম্প্রদায়। সাথে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের উপচেপড়া ভিড়ও ছিল প্রতিটি মণ্ডপে। প্রশাসন এবং আইন-শৃক্সখলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর কয়েকস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকায় উপজেলাজুড়ে কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষদিন বিজয়া দশমীতে গতকাল বুধবার প্রতিবছরের মতো প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানও সম্পন্ন হয়েছে মাতামুহুরী নদীতে। আইন-শৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নজরদারিতে মাতামুহুরী নদীর বাটাখালী সেতু পয়েন্টে একে একে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়। স্ব স্ব মণ্ডপের স্বেচ্ছাসেবকেরা নৌকায় তুলে প্রতিমাকে মাতামুহুরী নদীর মাঝখানে নিয়ে যান। এ সময় পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে নদীতে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করা হয়।
স্থানীয় প্রশাসন এবং প্রতিমা বিসর্জন কমিটির নেতারা জানান, মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা পয়েন্টে নদীতীরে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে প্রতিবছর অসাম্প্রদায়িক চেতনার মিলনমেলা বসে আসলেও গত তিনবছর ধরে চিরিঙ্গা পয়েন্টে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান করা যায়নি। কারণ নতুন সেতু নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় সেই পয়েন্টে প্রতিমা নিয়ে যাতায়াতের সুযোগ নেই। তাই ২০২০ সাল থেকে বিকল্প পয়েন্ট হিসেবে মাতামুহুরী নদীর বাটাখালী পয়েন্টে প্রতিমা বিজর্সন অনুষ্ঠান করতে হয়েছে।
নদীর বাটাখালী পয়েন্টে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান, চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তীসহ সনাতনী সম্প্রদায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সরেজমিন মাতামুহুরী নদীতীরে গিয়ে দেখা গেছে, বেলা দুইটার পর থেকে বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে ট্রাকযোগে প্রতিমা নিয়ে আসছেন ভক্তারা। এরপর নৌকায় তুলে প্রতিমাকে নদীতে বিজর্সন দেওয়া হচ্ছে। এভাবে পর্যায়ক্রমে মণ্ডপগুলোর প্রতিমা নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। আর সেই দৃশ্য দেখার জন্য মাতামুহুরী নদীর দুই তীরে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রতিটি প্রতিমা মণ্ডপে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল। সেজন্য বিপুল সংখ্যক পুলিশ এবং নারী-পুরুষ আনসার সদস্য সার্বক্ষণিক মণ্ডপে মণ্ডপে দায়িত্ব পালন করে। এছাড়াও র‌্যাব এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত ছিল মণ্ডপগুলোতে। এতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পাঁচদিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হয়েছে।
চকরিয়ার ইউএনও জেপি দেওয়ান বলেন, চকরিয়ার মানুষ বেশ অসাম্প্রদায়িক। এখানে যার যার ধর্ম সেই পালন করে থাকেন। এখানে সম্প্রদায় সম্প্রদায় কোনো ধরনের বিভেদ নেই। যা এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবের মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য চকরিয়াবাসীকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, বাঁশখালীতে সনাতনী সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসবের প্রতিমা বিসর্জন গতকাল বুধবার সকালে ও বিকালে পৃথক আয়োজনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এবার বাঁশখালীতে ৮৬টি সার্বজনীন পূজা ও ১৫১টি ঘটপূজা অনুষ্ঠিত হয়।
এবার পূজাতে বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী প্রতিটি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহসহ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা বাঁশখালী পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। এছাড়া বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব সাদলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী, থানার ওসি মো. কামাল উদ্দিন বাঁশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন ও তদারকি করেন।
বাঁশখালীতে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন করতে পারায় উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রণব কুমার দাশ, সাধারণ সম্পাদক ঝুন্টু কুমার দাশ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট, মহিলা দল নেত্রী কারাগারে
পরবর্তী নিবন্ধচোখের জলে দেবী দুর্গাকে বিদায়