উচ্চ আদালতের আদেশ ও নির্দেশনা থাকার পরেও কর্ণফুলী নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বন্দরের রশি টানাটানির অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের নেতারা। গতকাল সোমবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করে নেতারা বলেন, আদালতের নির্দেশনার পরে অবৈধ দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হলেও তা আবার থমকে গেছে। মাঝে মধ্যে অভিযান চালানো হলেও অদৃশ্য কারণে উচ্ছেদ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা থাকছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারি খাস খতিয়ানের জায়গায় গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ করার কথা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে ‘বন্দরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে’ উল্লেখ করে দায় সারছে জেলা প্রশাসন। সরকারি প্রতিষ্ঠান দুটির (জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ) বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালনে গড়িমসির অভিযোগও করেন চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে কর্ণফুলী দখল ও জরিপ প্রতিবেদন-২০২০ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান। গত ৩০ আগস্ট থেকে ২১ দিনব্যাপী কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতু থেকে নগরের ফিরিঙ্গিবাজারের মনোহরখালী পর্যন্ত এ জরিপ পরিচালনা করে ‘চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন’। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রকৌশলী এম. আলী আশরাফ, সহ-সভাপতি অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া, কর্ণফুলী গবেষক ড. মো ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, অধ্যাপক নোমান আহমাদ সিদ্দিকী, অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, অধ্যাপক মনোজ কুমার দে প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, কর্ণফুলী সেতু নির্মাণের সময় এডিবি মাস্টার প্ল্যান ও বিএস সিট অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর প্রস্থ ছিল ৮৮৬.১৬ মিটার। কিন্তু সাম্প্রতিক চালানো জরিপে শাহ আমানত সেতুর নিচে বর্তমানে কর্ণফুলী নদী ভাটার সময় প্রস্থ মাত্র ৪১০ মিটারে নেমেছে। তাছাড়া কর্ণফুলী ব্রিজের উত্তর অংশে ৪৭৬ মিটার নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের উচ্চতা বাড়লে নদীর দক্ষিণ অংশে ব্যাপক স্রোতের সৃষ্টি হয়। স্রোতের এই তীব্রতার চাপ কর্ণফুলীর দক্ষিণ প্রান্তে শাহ আমানত ব্রিজের সংযোগ সড়কের বর্ধিত অংশের পিলারে পড়ছে। যা শাহ আমানত সেতুর জন্য বিপজ্জনক। এতে বন্যা বা সাইক্লোন হলে শাহ আমানত সেতুর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদন আরও উঠে এসেছে, এডিবির মাস্টারপ্ল্যান ও বিএস শিট অনুযায়ী রাজাখালী খালের মুখে কর্ণফুলীর প্রস্থ ৮৯৮ মিটার, কিন্তু বাস্তবে তা মাত্র ৪৬১ মিটার। চাক্তাই খালের মুখে কর্ণফুলীর প্রস্থ ৯৩৮ মিটার হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে আছে ৪৩৬ মিটার। ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় কর্ণফুলীর প্রস্থ হওয়ার কথা ৯০৪ মিটার, কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ গাইড ওয়াল নির্মাণ করায় সেখানে নদীর প্রশস্ততা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫০ মিটারে।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ছয়টি সুপারিশ দেওয়া হয়। তন্মধ্যে- অবিলম্বে কর্ণফুলী মেরিনার্স পার্ক, সোনালী মৎস্য আড়ত, বেড়া মার্কেটসহ কর্ণফুলী নদী দখল করে গড়ে ওঠা সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর গতিপথ ফিরিয়ে আনা। নিয়মিত ড্রেজিং করে ও প্রয়োজনীয় নদীশাসনের মাধ্যমে বাংলাবাজার, সদরঘাট, চাক্তাই ও রাজাখালী এলাকার নৌবন্দর ঝুঁকিমুক্ত করা। নদীর পাড় স্থায়ীভাবে চিহ্নিত করা এবং প্রস্তাবিত হাইড্রো মরফলোজিক্যাল মডেল স্টাডির মাধ্যমে কর্ণফুলীর মোহনা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত নদীর প্রবাহ ও নদীশাসনের কাজ সম্পূর্ণ করার ব্যবস্থা নেয়া।