চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষা ও আধুনিক চেম্বার গঠনের অঙ্গীকার

চট্টগ্রাম চেম্বার নির্বাচনে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের ইশতেহার ঘোষণা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন (২০২৫২০২৭) উপলক্ষে ‘সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ’ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। গতকাল দুপুরে নগরীর পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু বেলভিউতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ইশতেহার ঘোষণা করেন প্যানেল লিডার এসএম নুরুল হক। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বারকে একটি জবাবদিহিতামূলক, ব্যবসায়ীবান্ধব ও বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষা, ভ্যাট ও ট্যাক্স সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন এবং ডিজিটালাইজেশন বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ব্যবসাবাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আমরা এমন একটি চেম্বার গঠন করতে চাই, যা প্রকৃত অর্থে ব্যবসায়ীদের কথা বলবে, তাদের সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এবং প্রশাসনের সঙ্গে কার্যকর সংযোগ স্থাপন করবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মো. কামরুল হুদা, মোহাম্মদ আইয়ুব, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, এস. এম. কামাল উদ্দিন, এটিএম রেজাউল করিম, আহমেদ রশিদ আমু, আহমেদউল আলম চৌধুরী (রাসেল), ইমাদ এরশাদ, জসিম উদ্দিন চৌধুরী, কাজী ইমরান এফ. রহমান, মো. আবচার হোসেন, মো. আরিফ হোসেন, মো. হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী, মোহাম্মদ আজিজুল হক, মোহাম্মদ রাশেদ আলী ও মোহাম্মদ মুছা। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান শাহজাহান মহিউদ্দিন।

এদিকে ঘোষিত ইশতেহারে ব্যবসায়ীদের ভ্যাট ও ট্যাক্স সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এই লক্ষ্যে গঠন করা হবে একটি “ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার”। যেখানে ব্যবসায়ীরা ভ্যাট, ট্যাক্স ও রিটার্ন সংক্রান্ত পরামর্শ ও আইনি সহায়তা এক জায়গায় পাবেন। এছাড়া আমদানিরপ্তানি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও সহজীকরণ আনতে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে ডিজিটাল পোর্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে সময় ও খরচ দুটোই কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এসএমই) উন্নয়ন এই ইশতেহারের অন্যতম অগ্রাধিকার। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে উদ্যোক্তারা যাতে সহজ শর্তে ঋণ পেতে পারেন। সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা সহায়তা তহবিল গঠনের কথাও ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা উন্নয়ন কর্মসূচি চালুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আধুনিক ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, হিসাবরক্ষণ, ডিজিটাল মার্কেটিং ও ইকমার্স বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলা হয়। যাতে তরুণ উদ্যোক্তারা আন্তর্জাতিক মানে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন।

ইশতেহারে আরও বলা হয়, বাজারে ন্যায্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত ও একচেটিয়াত্ব বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে সম্মিলিত ব্যবসায়ী জোট। বড় ও ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করাই হবে তাদের মূল লক্ষ্য। চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়ন, সড়ক ও অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তারা বলেন, চট্টগ্রামের অবকাঠামো যত শক্তিশালী হবে, ব্যবসাবাণিজ্য তত সমৃদ্ধ হবে।

ইশতেহারে আরও ঘোষণা দেওয়া হয়, অসুস্থ বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তায় ব্যবসায়ী কল্যাণ তহবিল গঠন করা হবে, যেখান থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জরুরি সময়ে ঋণ বা অনুদান পেতে পারবেন। পাশাপাশি চেম্বারের সব কার্যক্রম ডিজিটাল করার অঙ্গীকারও করা হয়। সদস্য নিবন্ধন, নবায়ন, সার্টিফিকেট গ্রহণ ও অভিযোগ দাখিলের সবকিছু অনলাইনে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধে লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স ডেস্ক গঠনের ঘোষণা আসে, যা ব্যবসায়ীদের আইনি সহায়তা ও সমন্বয় করবে। জাতীয় অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও এই ইশতেহারের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তারা আশা প্রকাশ করেন, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা এবং সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেল বিজয়ী হলে চেম্বার সত্যিকারের ব্যবসায়ী সমাজের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে চট্টগ্রামের অবদান আরও শক্তিশালী করবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যতীত বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই আমরা চেম্বারকে এমন একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, যা ব্যবসায়ীদের প্রকৃত সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এবং চট্টগ্রামকে বিশ্ব বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছে দেবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅবৈধ মোবাইল ফোন বন্ধে ১৬ ডিসেম্বর চালু হচ্ছে এনইআইআর
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাচারকালে ২৬ রোহিঙ্গা উদ্ধার