খাজা নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতা তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। পাকিস্তানকে আমরা ইসলামী রাষ্ট্ররূপে গঠন করতে যাচ্ছি।’ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দোহাই দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রদেশের ভাষা কী হবে তা প্রদেশবাসীই স্থির করবেন, কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। একাধিক রাষ্ট্রভাষা থাকলে কোনো রাষ্ট্র শক্তিশালী হতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে একুশটি কেন্দ্রে বাংলাভাষাকে আরবী হরফে লেখার প্রচেষ্টা সফল হয়েছে ও জনগণ নিজ উদ্যোগে নতুন কেন্দ্র খুলছে।’ খাজা নাজিমুদ্দিনের এই মন্তব্যটুকুই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের দাবানল সৃষ্টির পক্ষে যথেষ্ট ছিল। তাঁর বক্তৃতা রেডিওতে সরাসরি সমপ্রচার হয়েছিল। ফলে সারা পূর্ববঙ্গেই এর তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল।
নাজিমুদ্দিনের এ বক্তৃতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং ঢাকার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রতিবাদে ৩০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। এছাড়া সেদিনের সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে ছাত্র ধর্মঘটের আহ্বান জানানো হয়।
৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা শহরের সকল স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা এবং আরবি হরফে বাংলা ভাষার প্রচলনের চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ধর্মঘট পালন করে। বেলা ১১টা থেকেই শিক্ষার্থীরা মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমায়েত হতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীউল হক।
শিক্ষার্থীদের সেই মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলতলায় এসে শেষ হয়। সেখানে প্রদেশব্যাপী ২১ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটকে সফল করার আহ্বান জানানো হয়। ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতা ছিল একটি স্ফুলিঙ্গ। যা ৪ ফেব্রুয়ারি একটি দাবানলের মুখে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার মত বিস্ফোরিত হয়েছিল। আর তা প্রচণ্ড রূপ ধারণ করেছিল ২১ ফেব্রুয়ারি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগণতন্ত্র সূচকে ৪ ধাপ এগোল বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধআবাসিক এলাকা গড়ার অন্তরায় মৌজা দর