বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আলোচিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল আলম ও এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোরশেদুল আলমকেও তলব করা হয়েছে। তাদেরকে আগামী ৫ মার্চ দুদকে হাজির হতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এদিকে এস আলম পরিবারের আরও ৮ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া অর্থপাচারের অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ২৮ জনকে তলব করেছে দুদক। খবর বিডিনিউজের।
সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাস এবং অন্যান্য দেশে এক বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগে সাইফুল আলম এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। দুদকের উপপরিচালক আবু সাঈদ চিঠি পাঠানোর তথ্য দিলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে চাননি।
দুদকে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের অনুকূলে ৮৫০ কোটি টাকা ঋণ বা বিনিয়োগ বিষয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং টিআইএনসহ প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র সঙ্গে আনতে বলা হয়েছে। এর আগে এই অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ইসলামী ব্যাংক সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে অর্থপাচারের বিষয়টি সামনে আসে ২০২৩ সালের আগস্টে। তখন এ বিষয়ে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু হলেও তা আর এগোয়নি। ওই বছরের ২৪ আগস্ট সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও দুদকের অনুসন্ধান সম্পর্কিত বিষয়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে হাই কোর্ট।
এস আলম পরিবারের আরও ৮ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ : আলোচিত ব্যবসায়ী মো. সাইফুল আলম (এস আলম) ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ৮ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত গতকাল রোববার এ আদেশ দেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেছেন, দুদকের উপ–পরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক এই ব্যবসায়ীর পরিবারের শেয়ার অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন। পরে আদালত শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করে এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ৮ হাজার ১৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকার শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেয়।
দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং অভিযোগটি অনুসন্ধানে একটি টাস্কফোর্স টিম গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধানে দুদক জেনেছে এস আলম গ্রুপ ও তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে বেনামে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ নিয়ে তা আত্মসাতপূর্বক নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে দেশে–বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ করেছেন। এছাড়া এই ব্যবসায়ী ও তার পরিবারের সদস্যরা অস্থাবর সম্পদসমূহ অন্য জায়গায় হস্থান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করারও চেষ্টা করছেন বলে দুদক জেনেছে।
দুদকের ভাষ্য, অনুসন্ধান কাজ শেষ হওয়ার আগেই সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে পরবর্তীতে টাকা উদ্ধার করা কঠিন হয়ে যাবে। মামলা রুজু, আদালতে চার্জশিট দাখিল, বিচার শেষে সাজার অংশ হিসেবে অপরাধলব্ধ আয় থেকে অর্জিত সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করাসহ সকল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। সেজন্য এসব সম্পদ অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ২৮ জনকে তলব : অর্থপাচারের অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানসহ ২৮ জনকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আলোচিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাদের ডেকে পাঠানোর তথ্য সংবাদমাধ্যমে দিয়েছেন দুদকের উপপরিচালক আবু সাঈদ। আগামী ৬, ৯, ১০ ও ১১ মার্চ তাদেরকে দুদকে হাজির হতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও সাইপ্রাসসহ বিভিন্ন দেশে এক বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। ২৮ জনকে তলব করা হয়েছে এস আলম সুপার এডিবল ওয়েল লিমিটেডের অনুকূলে ৮৫০ কোটি টাকা, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডকে ৫০০ কোটি টাকা এবং এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজকে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও টিআইএনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে বলেছে দুদক।