কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে নাফ নদী হয়ে সেন্ট মার্টিনগামী নৌযান চলাচলে জারি করা নিষেধাজ্ঞা দুই দিনের মাথায় প্রত্যাহার করেছে উপজেলা প্রশাসন। তবে টেকনাফের কোনো নৌযান যেন বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করে মিয়ানমারের জলসীমায় প্রবেশ না করে সে ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন। গতকাল শুক্রবার বিকালে তিনি জানান, নাফ নদীতে দীর্ঘদিন ধরে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে; যা আগের সরকারের আমল থেকে কার্যকর আছে। তবে নাফ নদী দিয়ে সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলার যাতায়াত করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কোনোভাবেই যেন বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করে মিয়ানমারের কাছাকাছি না যায় তার জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।বিষয়টি নিয়ে ট্রলার মালিক ও জেলেদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের। এ ছাড়া টেকনাফ–সেন্ট মার্টিন পথে মাল ও যাত্রীবাহী নৌযান চলবে কোস্ট গার্ডের নিরাপত্তায়। সেন্ট মার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমদ বলেন, শাহ পরীর দ্বীপ থেকে সেন্ট মার্টিনের পথে সার্ভিস ট্রলার চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। শুক্রবার বিকালে শাহ পরীর দ্বীপ থেকে কোস্ট গার্ডের নিরাপত্তায় পণ্যবাহী তিনটি ট্রলার সেন্ট মার্টিনে পৌঁছেছে। এসব ট্রলারে শুঁটকি মাছের পাশাপাশি কিছু সংখ্যক সাধারণ যাত্রী গেছে বলে জানান তিনি।
কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে লড়াইয়ের পর ৮ ডিসেম্বর সকালে মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে আরাকান আর্মি। ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ হয়। পরে নাফ নদীর মিয়ানমারের অংশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিবৃতি দেয় আরাকান আর্মি। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার টেকনাফ–সেন্ট মার্টিন নৌপথসহ নাফনদীর বাংলাদেশ অংশেও সকল নৌযান চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বৃহস্পতিবার সেন্ট মার্টিনে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পৌঁছাতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। যার অংশ হিসেবে কোস্ট গার্ডের নিরাপত্তায় সেন্ট মার্টিন যায় পণ্যবাহী সাতটি ট্রলার।
শুক্রবার এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন টেকনাফের ইউএনও। এদিকে মিয়ানমারের মংডু শহর আরাকান আর্মিদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার খবরের পর কোনো শব্দ শোনা না গেলেও বৃহস্পতিবার রাত থেকে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে টেকনাফ সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা। সাবরাং সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম জানান, আগের মত বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে না। তবে গত রাতে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, স্থলভাগে বিশেষ কিছু নিয়ে গোলাগুলি হচ্ছে। আরাকান আর্মিদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী বা তাদের সমর্থিত রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর আত্মগোপনে থাকা স্থান ঘিরে এমন গোলাগুলির খবর শোনা যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
এমন পরিস্থিতিতে নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশে টহল জোরদারের কথা জানিয়েছেন টেকনাফ–২ বিজিবি ব্যাটালিয়ানের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা উপ–অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ।