খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সংঘাতের পর জুম্ম ছাত্র–জনতার ডাকা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ চলছে। রাঙামাটিতে অবরোধের পাশাপাশি পরিবহন ধর্মঘটও চলছে। অবরোধ ও ধর্মঘটে স্থবির দুই পার্বত্য জেলা। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। এদিকে শুক্রবার রাঙামাটিতে সহিংসতার পর থেকে শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এখানকার বেশিরভাগ হাট বসেনি, দোকানপাটও খুলেনি।
খাগড়াছড়িতে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ : খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর হামলা, খুন এবং বিহার ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র–জনতার ডাকা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ চলছে। অবরোধের প্রথম দিন গতকাল খাগড়াছড়িতে যান চলাচল বন্ধ ছিল। খাগড়াছড়ির সাথে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙাসহ আন্তঃউপজেলাগুলোতে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
ঢাকায় বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র–জনতার আয়োজিত সমাবেশ থেকে ঘোষিত তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘণ্টা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জানিয়েছে ইউপিডিএফ। অবরোধের সমর্থনে সকালে খাগড়াছড়ির সাজেক সড়ক, পানছড়ি ও রামগড় সড়কে টায়ার জ্বালান অবরোধকারীরা।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, অবরোধে জনজীবন স্বাভাবিক রয়েছে। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জেলা সদর ও উপজেলাগুলোতে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহল রয়েছে।
নিহত তিনজনের দাহক্রিয়া সম্পন্ন : বৃহস্পতিবার বিকালে সংঘর্ষের সময় নিহত ধনরঞ্জন চাকমার (৫০) দাহক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সকালে দীঘিনালা উপজেলার উদালবাগান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। ইউপিডিএফ ও পরিবারের স্বজনরা শ্রদ্ধা জানান। এ সময় ধনরঞ্জন চাকমার হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করা হয়। নিহত ধনরঞ্জন লারমা স্কয়ারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তার বাড়ি দীঘিনালার কামুক্কোছড়া তুলপাড়া গ্রামে।
এদিকে খাগড়াছড়ি সদর নারাঙহিয়া ও স্বনির্ভর এলাকায় নিহত দুজনের মধ্যে সকাল ১১টায় রুবেল ত্রিপুরার নিজ গ্রাম পল্টনজয় পাড়ায় তার দাহক্রিয়া সম্পন্ন হয়। দুপুর ২টায় জুনান চাকমাকে তার নিজ গ্রাম জামতুলি যুবরাজ পাড়ায় দাহ করা হয়। দাহক্রিয়ার আগে সর্বস্তরের জনগণ জুনান চাকমার মরদেহের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
পরিবহন ধর্মঘট ও অবরোধে স্থবির রাঙামাটি : রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ির পর শুক্রবার রাঙামাটিতে হামলা, সংঘর্ষ ও সহিংসতার পর থেকে শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শুক্রবার বিকালে পার্বত্য এই জেলা শহরের একমাত্র অভ্যন্তরীণ যানবাহন সিএনজিচালিত টেঙি কিছু সংখ্যক চলাচল করলেও পরিবহন ধর্মঘট ও অবরোধের কারণে গতকাল শনিবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন জেলা শহরে ও দূরপাল্লার গন্তব্যমুখী মানুষ। পরিবহন ধর্মঘট ও সড়ক অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ি–বান্দরবান ও চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সঙ্গে রাঙামাটির দূরপাল্লার যানবাহন বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে করে যানবাহন চলাচল বিচ্ছিন্ন ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে কার্যত স্থবির পড়েছে রাঙামাটি শহর।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে রাঙামাটি শহরে একমাত্র অভ্যন্তরীণ যানবাহন টেঙি চলাচল বন্ধ আছে। তবে মোটরসাইকেলের মাধ্যমে স্থানীয়রা যোগাযোগ করতে পারছেন। জেলা শহরের বনরূপার দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। বনরূপায় হাটবার থাকলেও বাজারে গতকাল ছিল সুনসান নীবরতা। তবে বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত রিজার্ভবাজার ও তবলছড়ি এলাকায় কিছু দোকানপাট খোলা দেখা গেছে।
শহরের বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। শহরের দোয়েল চত্বর, পৌরসভা এলাকা, হ্যাপির মোড়, নিউ মার্কেট, স্টেডিয়াম এলাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান দেখা গেছে। শুক্রবার আগুনের ঘটনায় সড়কের পাশে থাকা ব্রন্ডব্যান্ডের ফাইবার ক্যাবল পুড়ে গিয়ে অনেক এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ আছে। ইন্টারনেট সংযোগ সচল করতে সকাল থেকে কর্মীদের মেরামত করতে দেখা গেছে। তবে জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট সচল আছে।
পরিবহন মালিকদের ধর্মঘটে অভ্যন্তরীণ সব যানবাহন ও দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল থেকে বিরত আছেন পরিবহন শ্রমিকরা। নৌ–পথে লঞ্চ চলাচল ও স্পিড বোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিবহন মালিক নেতা মঈন উদ্দিন সেলিম জানান, শুক্রবারের সহিংসতায় রাঙামাটিতে যানবাহনে ভাঙচুরের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলবে। সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।
বান্দরবানে অবরোধে সাড়া নেই : বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় ৭২ ঘণ্টা সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ডাক দিলেও বান্দরবান জেলায় অবরোধের তেমন প্রভাব পড়েনি। গতকাল শনিবার সকাল থেকে বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম–ঢাকা ও কঙবাজারের উদ্দেশ্যে গণপরিবহন ছেড়ে গেছে। জেলা শহরসহ অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। জেলা সদরের কোথাও কাউকে পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। নিত্যদিনের মতো সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল, জনগণের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক চলেছে।
অভ্যন্তরীণ পরিবহন সংগঠনের নেতা জাফর আলম জানান, বান্দরবান জেলার সাতটি উপজেলায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি।
এদিকে অপ্রীতিকর ধরনের ঘটনা এড়াতে জেলা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন রয়েছে।