নগরীতে আবারও কিশোর গ্যাং নেতার টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। ওখানে এক কিশোরকে টানা ১০ ঘণ্টা আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। কেড়ে নেওয়া হয় তার কাছে থাকা চারটি মোবাইল। দাবি করা হয় এক লাখ টাকা। রাতভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ ওই কিশোরকে উদ্ধারের পাশাপাশি গ্রেপ্তার করে কথিত ছাত্রলীগ নেতা হেলাল বাদশা চৌধুরী (২৫) ও তার সাত সহযোগীকে।
গ্রেপ্তার বাকি সদস্যরা হলো রাকিব হোসেন (২২), মো. কাউসার (২২), মেহেরাজ সামি (২১), শেখ সাদি হাসান (২০), সাগর হোসেন (২৭), আবদুর রহমান (২১) ও সাইফুল ইসলাম শান্ত (২৬)। এদের মধ্যে রাকিব হোসেন নিজেকে ওমরগণি এমইএস কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বলে পরিচয় দিয়েছে। রাকিব ছাড়া বাকিদের কেউ পড়ালেখা করে না। তবে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। মূলত এ পরিচয়েই তারা জিইসি মোড়সহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।
অভিযানে আরিফের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া চারটি মোবাইল সেট, ঘটনায় ব্যবহৃত কিরিচ, লোহার পাইপ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া হেলাল বাদশার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাটা গলিতে অভিযান চালিয়ে একটি এলজি ও দুটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আটজনের বিরুদ্ধে আরিফের ভাই রাকিব হোসেন বাদী হয়ে একটি এবং পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন।
এর আগে গত মাসে নগরীর আকবরশাহ থানার পশ্চিম ফিরোজ শাহ এলাকায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বাধীন কিশোর গ্যাংয়ের টর্চার সেলের খোঁজ পেয়েছিল পুলিশ।
গত শুক্রবার বিকালে জিইসি মোড়ে এ ঘটনার সূত্রপাত হয় জানিয়ে খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ জানান, ওই কিশোর আরিফের ভাই রাকিব তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার খবর জানতে পেরে ট্রিপল নাইনে ফোন দেয়। এর ভিত্তিতে আমরা অভিযান শুরু করি। বাটা গলি এবং আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে জড়িতদের শনাক্ত করি। প্রথমে আরিফকে যে বাইকে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেটা বাকলিয়া এলাকা থেকে জব্দ করি এবং সঙ্গে আবদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করি। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আকবরশাহ থানার ইস্পাহানি রেলগেট এলাকায় পাহাড়িকা পেট্রোল পাম্পের পেছনে অভিযান চালাই। সেখান থেকে আরিফকে উদ্ধার করি এবং বাদশাসহ মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করি। সেই জায়গাটি বাদশা ও তার সহযোগীরা মূলত টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি।
ওসি জানান, নগরীর জিইসি মোড়সহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত বাদশা একটি ‘কিশোর গ্যাং’ পরিচালনা করে। গ্রেপ্তার সাত তরুণ ওই চক্রের সদস্য।
কিশোর আরিফ হোসেন তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে জানায়, নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে শুক্রবার বিকালে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট টুর্নামেন্টে বড় ভাই রাকিব হোসেনের খেলা দেখতে গিয়েছিল সে। এ সময় রাকিব তার নিজের এবং আরও দুই খেলোয়াড়ের দুটি মোবাইল আরিফকে রাখতে দেন। নিজেরটিসহ চারটি মোবাইল পকেটে নিয়ে কিছুক্ষণ খেলা দেখে সে শরবত খাওয়ার জন্য মাঠ থেকে বেরিয়ে রাস্তায় আসে। বাদশা ও তার সঙ্গে থাকা আরো ৩/৪ জন তার সামনে এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই থাপ্পড় মারে। এরপর আরিফকে টেনে হিঁচড়ে পাশে বাটা গলিতে নিয়ে যায়। আরিফ বলে, সেখানে আরও ৩/৪ জন তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। তারা আমাকে ঘুষি মারতে মারতে একপর্যায়ে পকেট থেকে মোবাইলগুলো নিয়ে নেয়।
পথচারীদের কেউ কেউ এসে ‘মারছে কেন’ জিজ্ঞেস করলে তারা বলে আরিফ মোবাইল চোর। এ সময় তারা আমাকে চোর সাজিয়ে মারধরের ভিডিও করে। বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে বাদশা আমাকে একটি বাইকে তুলে আকবরশাহ এলাকায় একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে রাত ১টা পর্যন্ত আটকে রেখে মারধর করে।
নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ওই কিশোর বলে, একেকজন আসছিল আর আমাকে মারধর করছিল। কেউ এসে থাপ্পড় মারছে, কেউ এসে লাঠি দিয়ে মেরেছে, কেউ হাতুড়ি দিয়ে হাঁটুতে আঘাত করছে, কেউ লোহার পাইপ দিয়ে মাথায় আঘাত করেছে। চাপাতি দিয়ে আমাকে কয়েকবার পেটে আঘাতের চেষ্টা করেছে। মাথায় অস্ত্র ধরে রেখেও ভয় দেখিয়েছে। তখন বাদশা আমার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।