নাম উল্লেখ করা ১৪ জনের মধ্যে ১২ জনই ছাত্রলীগের

চবির মামলা

চবি প্রতিনিধি | সোমবার , ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) উপাচার্যের বাসভবন ও পরিবহন দপ্তরে নারকীয় তাণ্ডবের ঘটনায় দুই মামলার আসামিদের পরিচয় সামনে আসলো। দুই মামলায় উল্লেখিত ৭ জন করে ১৪ জনের মধ্যে ১২ জনই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত। এছাড়া অন্তত ৯’শ জনকে অজ্ঞাত দেখানো হয়েছে মামলা দুইটিতে। দুই মামলার এজহার আজাদীর হাতে এসেছে। গত শনিবার হাটহাজারী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ ও ভারপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় মামলা দুইটি করেন। মামলা দুইটির এজহার অনুযায়ী উপাচার্যের বাসভবন ও স্মরণ চত্ত্বর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাব ভাঙচুরের ঘটনায় আসামিরা হলেন, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের ২০১৯২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল হোসেন আইমুন, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দীপন বণিক দীপ্ত, শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের ২০১৯২০ শিক্ষাবর্ষের রিয়াদ হাসান রাব্বি, ইংরেজি বিভাগের ২০২০২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মদ মান্না, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ ভূইয়া, পালি বিভাগের ২০১৮১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম, পদার্থবিদ্যা বিভাগের ২০১৫১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম। এছাড়া পরিবহন দপ্তর ও নিরাপত্তা দপ্তর ভাঙচুরের ঘটনায় আসামিরা হলেন, দর্শন বিভাগের ২০১৫১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইমরান নাজির ইমন, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের ২০১৮১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮১৯ বিভাগের শিক্ষার্থী নাসির উদ্দিন মো. সিফাত উল্লাহ, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮১৯ বিভাগের অনিক দাশ, বাংলা বিভাগের ২০১৮১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনিরুদ্ধ বিশ্বাস এবং একই বিভাগ ও শিক্ষাবর্ষের আজিমুজ্জামান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলায় উল্লেখিত ১৪ জনের মধ্যে শাকিল হোসেন আইমুন, দীপন বণিক দীপ্ত, নুর মোহাম্মদ মান্না, ইমরান নাজির ইমন ও আজিমুজ্জামান শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক চুজ ফ্রেন্ডস উইথ (সিএফসি) এর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। এছাড়া রিয়াদ হাসান রাব্বি, সৌরভ ভূইয়া, শফিকুল ইসলাম, আনিসুর রহমান, নাসির উদ্দিন মো. সিফাত উল্লাহ ও অনিরুদ্ধ বিশ্বাস বগিভিত্তিক সিঙটি নাইনের কর্মী। এছাড়া অনিক দাস বগিভিত্তিক বিজয়ের কর্মী, সাজ্জাদ হোসেন সাবেক শিক্ষার্থী ও আমিনুল ইসলাম সাধারণ শিক্ষার্থী।

আসামিদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন। শফিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, শাটলের দূর্ভোগ দীর্ঘদিনের। এটা নিয়ে আন্দোলনে আমি একমত। তবে ভাঙচুরের পক্ষে আমি ছিলাম না বরং যারা ভাঙচুর করেছে তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। প্রশাসনের অনেকেই এ বিষয়টি জানে। অনিক দাস বলেন, ঘটনাটি ঘটার পরপরই ওইদিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে আমি শহরে চলে গেছি। হাসপাতালে আহতদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে প্রমাণ পাওয়া যাবে।

সিঙটি নাইনের নেতৃত্বে রয়েছে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু। সিএফসির নেতৃত্বে রয়েছে শাখা সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সহসভাপতি মির্জা খবির সাদাফ। সাদাফ আজাদীকে বলেন, কেউ অপরাধ করলে সেটার শাস্তি সে পাবে। কোন গ্রুপের সেটা ব্যাপার না। আমি চাই সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার হোক।

মামলার বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, চবির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে হাটহাজারী থানায় দুটি এজাহার দায়ের করেছেন। চাঁদা দাবি ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলাগুলি দায়ের করা হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে শাটল ট্রেনের ছাদে যাতায়াত করতে গিয়ে গাছের আঘাতে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হন। এর পরপরেই শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এর মধ্যে আহত একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা ক্ষীপ্ত হয়ে জিরো পয়েন্টে অবস্থিত পুলিশ বঙ, উপাচার্যের বাসভবন, পরিবহন দপ্তরে ও শিক্ষক ক্লাবে ব্যপক ভাঙচুর চালান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হাঁটু গেড়ে কুশল বিনিময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর
পরবর্তী নিবন্ধভোগান্তি শেষে ৬ শর্তে শাটল চালু