চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেরিন সায়েন্স এন্ড ফিশারিজ অনুষদভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষার মাধ্যমে চবির ভর্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে ‘এ’ ইউনিটের দুই শিফটের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। দুই শিফটে মোট ৭৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরেই সব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে প্রথম শিফটের পরীক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করেন। তবে সকাল ১১টায় পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে ১৫ মিনিট দেরিতে শুরু হয় প্রথম শিফটের পরীক্ষা। ১২টা ১৫ মিনিটে পরীক্ষা শেষ হয়। এতে মোট ১৮ হাজার ৬৬৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্য থেকে ১৪ হাজার ৮২৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় শিফটে দুপুর ২টা ১৫ মিনিট থেকে পরীক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করেন। এ শিফটে নির্ধারিত সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় পরীক্ষা শুরু হয়ে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে। দ্বিতীয় শিফটে ১৮ হাজার ৬৭৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৪ হাজার ৮৪৫ জন উপস্থিত ছিলেন। সেই হিসাবে দুই শিফটে মোট ৭৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উপস্থিত ছিলেন।
এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সাব কো–অর্ডিনেটর ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. রাশেদ মোস্তফা এসব তথ্য আজাদীকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘এ’ ইউনিটের দুই শিফটের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। দুই শিফটে মোট ২৯ হাজার ৬৭২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। বুধবার (আজ) ‘এ’ ইউনিটের বাকি দুই শিফটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সকালের শিফটে ১৮ হাজার ৬৬৫ জন এবং বিকালের শিফটে ১৮ হাজার ৬৬৪ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে।
গতকাল পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রশ্ন ফাঁসের কোনো নজির নেই। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরও ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমরা সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছি। পরীক্ষার হলে কিংবা বাইরে কোনো প্রকার অনিয়ম জালিয়াতি চোখে পড়লেই সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দেরিতে পরীক্ষা শুরুর ব্যাপারে তিনি বলেন, শাটল ট্রেনে একটু সমস্যা হওয়ার কারণে ট্রেন আসতে ১৫ মিনিট দেরি হয়েছিল। তাই আমরা সকালের শিফটের পরীক্ষা ১৫ মিনিট দেরিতে শুরু করেছি যাতে পরীক্ষার্থীদের কোনো অসুবিধা না হয়।
আগামী বৃহস্পতিবার সকাল–বিকাল ও শুক্রবার কলা ও মানববিদ্যা অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা তিন শিফটে অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার ও রোববার ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দুই শিফটে অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ মে ‘ডি১’ উপ–ইউনিটের (শিক্ষা অনুষদভুক্ত ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ) ভর্তি পরীক্ষাও শুধু সকালের শিফটে অনুষ্ঠিত হবে।
চবি প্রক্টর ড. নূরুল আজিম শিকদার বলেন, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া প্রথম দিনের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আগত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া পরীক্ষার্থীদের যাতায়াত সুবিধার জন্য শাটল ট্রেনের বিশেষ শিডিউলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি।
সাতক্ষীরা থেকে ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষা দিতে আসা বকুল শীল বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যের কথা সবার মুখে শুনেছি। আজ দেখার সৌভাগ্য হল। তবে ক্যাম্পাস ঘুরে মনে হল এমন সুন্দর ক্যাম্পাসে পড়তে না পারলে নিজেকে দুর্ভাগা মনে হবে। মেহেরপুর থেকে আসা এহসান আহমেদ বলেন, ক্যাম্পাসটা সত্যিই অনেক সুন্দর। ক্যাম্পাস ঘুরে দেখব বলেই মূলত একটু আগেভাগে আসা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ শ্যামল ছায়াবৃত পরিবেশের মধ্যে নৈসর্গিক সৌন্দর্য রয়েছে। ক্যাম্পাসের নান্দনিক স্নিগ্ধতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়ে খুলনা থেকে আসা অভিভাবক তোজাম্মেল মিয়া বলেন, আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি। এখানে এসে আবাসন সংকটের সম্মুখীন হয়েছি। হোটেলগুলোতে সিট পাইনি। আপাতত এলাকার এক ভাতিজার কাছে আছি। তবে সেখানে থাকতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। এজন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও যদি বিভাগীয় শহরগুলোতে অনুষ্ঠিত হতো তাহলে দূরের শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হতো।












