অনুবাদ : শামসুদ্দীন শিশির
বিখ্যাত দার্শনিক দেকার্তে বলেছেন, ‘সব ভালো বইপড়া মানেই বিগত শতাব্দীর সেরা মানুষের সাথে কথোপকথন’। পড়া হলো অনুপ্রাণিত হওয়া এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করা। পড়া বিভিন্ন বিষয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।  পড়ার ভাষা সাক্ষরতার আসল সাক্ষ্য। এ কথার আসল মানে কী? সাক্ষরতা অর্জনে তরুণ শিক্ষার্থীদের পড়তে হবে; যা তাদের লেখার বিষয়ে শিখতে সাহায্য করে এবং যা তাদের ভাষা- সাক্ষরতার পরিপূরক। কীভাবে পড়তে হয়? তা কী রকেট সায়েন্স শেখার মতো? এই প্রশ্নটি দ্ব্যর্থহীন কারণ পড়ার ক্ষমতা ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হয়। গবেষণায় দেখা যায়, কিছু শিক্ষার্থী বোধগম্যতার সাথে অন্যদের তুলনায় দ্রুত পড়তে পারে। তবে ইংরেজি বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ধীরে ধীরে পড়ে। প্রায়শই দেখা যায় প্রতি মিনিটে শিক্ষার্থীরা ১০০ শব্দেরও কম পড়ে। সুতরাং পড়ার সুবিধা অসুবিধার মাত্রা বিতর্কিত। শ্রবণ বোধগম্যতা এবং শব্দ পাঠোদ্ধার হল পড়া বোঝার বিকাশে দুটো প্রধান নির্ধারক। এটির কারণ একটি শব্দ সব সময় তার বানান এবং উচ্চারণে সম্পর্কযুক্ত নয়। প্রায়শই ইংরেজি বানান তার উচ্চারণ থেকে প্রায় আলাদা হয়। এই বিচ্ছেদ পড়ার দক্ষতা অর্জনের জন্য রূপগত সচেনতার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করে। এই ধারণার সহজ অর্থ হলো শব্দাংশ বিশ্লেষণে উপসর্গ। প্রত্যয় এবং কাণ্ডের প্রতি ইচ্ছেকৃত মনোযোগ দেওয়া। এ বিষয়ে পল নেশন তাঁর ‘Learning Vocabulary In Order Language’ বইয়ে কিছু মজার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, একজন শিক্ষার্থীর একটি পাঠ্যের ৯৮ শতাংশের ব্যাপক পাঠ কভার করার জন্য ৯০০০ হাজার উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি স্টেম শব্দের শব্দ ভাণ্ডার থাকতে হবে। পড়ার সময় শিক্ষার্থীদের ইচ্ছেকৃত মনোযোগ উন্নত করার জন্য স্মিতের নোটিশিং হাইপোথিসিস কার্যকর হতে পারে।  ‘নোটিশিং হাইপোথিসিস হলো দ্বিতীয় ভাষা অর্জনের একটি তত্ত্ব। একজন শিক্ষার্থী ভাষাগত বৈশিষ্ট্যগুলো উপলব্ধি করতে পারে না যদি না তারা সচেতন ভাবে ইনপুটটি লক্ষ্য করে।  দুর্ভাগ্যজনক হলো,  বেশির ভাগ শিক্ষার্থী তাদের পড়ার দক্ষতা উন্নত করতে এমন সহায়ক ব্যাখ্যা পায় না। রূপতাত্ত্বিক সচেতনতার উপর মুষ্টিমেয় কিছু পাঠ শিক্ষার্থীদের পড়ার দক্ষতার পাশাপাশি শব্দ ভাণ্ডারের একটি পরিসর বিকাশে সহায়ক হতে পারে। বেশির ভাগ লোকের জন্য দ্বিতীয় ভাষার জ্ঞান দাবি করা মানে সেই ভাষায় কথা বলতে এবং লিখতে  সক্ষম হওয়া। শ্রবণ এবং পড়া সেই অর্থে গৌণ দক্ষতা।  তবে গবেষকরা ইতোমধ্যে এই ধারণাটি উড়িয়ে দিয়েছেন। বোঝার সাথে পাঠ্য বই পড়ার ক্ষমতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার অন্যতম মূল লক্ষ্য। তবে পড়া অনেক ধরনের আছে; অধ্যয়নের জন্য পড়া, মজা করার জন্য পড়া, বিশ্ব সম্পর্কে জানার জন্য পড়া (যেমন -সংবাদ পত্র পড়া) এবং নির্দেশাবলি অনুসরণ করার জন্য পড়া। এই ধরনের পঠন প্রধানত দুটো পদ্ধতিতে বোঝা যায়- নিবিড় এবং ব্যাপক। নিবিড় পঠন হলো এমন একটি পঠন পদ্ধতি যা শিক্ষার্থীরা সর্বাধিক বোঝার জন্য পাঠটি ছোট ছোট অংশে ভাগ করে মনোযোগ সহকারে এবং গভীর ভাবে পড়ে।  অন্যদিকে, বিস্তৃত পাঠ হলো শিক্ষার্থীদের উপযোগী স্বাধীনভাবে এবং নিঃশব্দে প্রচুর বই পড়ার সুযোগ। বিস্তৃত পাঠ একজন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এই সুযোগ আমাদের পড়ার দক্ষতা সহজ ও সমৃদ্ধ করে।  এখন আমার কাছে বাস্তবতা বদলে গেছে। এখন আমার পড়ায় আরো  মনোযোগী এবং আরো তথ্যপূর্ণ হওয়া জরুরি। আমি কীভাবে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে পারি একাডেমিক শৃঙ্খলা ও ইংরেজি শেখার জন্য তা-ই ভাবছি। যেমন – যোগাযোগ দক্ষতা আপগ্রেড করা, বিষয়বস্তু তৈরি এবং গবেষণা পত্র লেখার ব্যাপারে আরো বেশি পাঠক হয়ে উঠেছি। এই ফোকাস আমাকে বিস্তৃত পাঠকের চেয়ে নিবিড় পাঠক করে তুলেছে। স্কলাস্টিক এবং একাডেমিক পড়ার মধ্যে স্যান্ডউইচ হওয়ার কারণে আমি মনে করি আমি আমার আত্মার জন্য পড়ার আনন্দ ভুলে গেছি। আমি সব সময় একজন বিস্তৃত পাঠক হতে মনস্থির করি।  এর কারণ ব্যাপক পড়া প্রায়শই লোভনীয় হয়। এটা আমাদের মনকে আনন্দ দেয় এবং আমাদের আত্মাকে শান্ত রাখে। একজন পাঠক যে ধরনের পঠন বেছে নিন না কেন,  গবেষণার জন্য পড়া এবং আনন্দের জন্য পড়া উভয়ের জন্যই পরম মনোযোগ প্রয়োজন। এই পরম শুধু নির্জন পরিবেশেই পাওয়া যায়। তাই পাঠক হিসেবে নিজেকে উন্নীত করার জন্য কিছু সতর্কতা মাথায় রাখতে হবে। পড়ার জন্য অবশ্যই নিরিবিলি সময় বের করে নিতে হবে। নোবেল বিজয়ী জোসেফ ব্রডস্কি পড়ার প্রতি ঝোঁককে অপরাধ বলে মনে করেন। তিনি বিচক্ষণতার সঙ্গে বলেন,   ‘বই পোড়ানোর চেয়েও খারাপ অপরাধ আছে। তাহলো বই না পড়া’।
অনুবাদক : শিক্ষক প্রশিক্ষক।
        




