বর্ষা আতঙ্কে সীতাকুণ্ড পৌরসভার বাসিন্দারা

এখনো সংস্কার করা হয়নি খাল

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | শনিবার , ২২ মে, ২০২১ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় সীতাকুণ্ড পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে দিনের পর দিন পানিবন্দি থাকতে হয় তাদের। এলাকাবাসী এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ছুটে গেলে তারা আগামী মৌসুমের আগে সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু বর্ষা মৌসুম চলে এলেও খাল সংস্কার ও পুনঃ খনন না করা, খালের মুখে অকেজো স্লুইসগেটগুলো মেরামতের পদক্ষেপ না নেয়া এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ গ্রামীণ সড়কগুলোতে পানি চলাচলের ব্যবস্থা না করায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন এবারও বর্ষায় তাদের ভোগান্তি পোহাতে হবে।
স্থানীয়রা জানান, সীতাকুণ্ডে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে গতবছর সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে গত বছর তিন দফা বন্যায় বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে সম্পদ নষ্ট হয়েছিল। ভেসে গিয়েছিল বহু পুকুর ও জলাশয়ের মাছ। মৎস্যসম্পদ ও কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। গ্রামীণসড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছিল। আমন বীজতলা ও শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।
পৌরসভার আমিরাবাদ, ইদিলপুর, দক্ষিণ মহাদেবপুর, শিবপুর, সোবহানবাগ এবং চৌধুরী পাড়ায় এলাকা সরেজমিনে দেখা গেছে, খালের বিভিন্ন অংশে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় পানি নিষ্কাষণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। আমিরাবাদ এলাকায় ব্রিজ ও খালের অংশ দখল করে প্রভাবশালীরা বসতবাড়ি নির্মাণ করেছে। দাশ পাড়া এলাকার পাহাড়ি ঢলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খালটির অর্ধেক অংশ ভরাট করে ভুঁইয়া টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। পৌর এলাকায় জমির মূল্যে বৃদ্ধি পাওয়ায় বসতঘর নির্মাণের সময় পানি চলাচলের কোনো পথ রাখেনি।
গত বছর দেখা গেছে দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে পৌর এলাকার বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে খালের দুইপাশে আগাছায় ভরপুর হয়ে গেছে। এতে পানি প্রবাহের পথে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। যার কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সীতাকুণ্ড পৌর কর্তৃপক্ষ গত ৫ বছরের খাল খনন বা খানের দু’পাশের আগাছা পরিষ্কার করেনি। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড পৌর এলাকায় বাইপাসে দুটি কালভার্ট নির্মাণ ছিল অপরিকল্পিত। প্রায় আধাকিলোমিটার সড়কটিতে পূর্বে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাঁচটি কালভার্ট ছিল। বর্তমানে তা দুইটি করা হয়েছে। তাও পূর্বের কালভার্টগুলোর চেয়ে সরু। তাছাড়া খালের সাথে কালভার্ড দুটির সমন্বয় না থাকায় পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। যার কারণে পৌরসদরের সব কয়টি গ্রাম গত কয়েক বছর ধরে সামান্য বৃষ্টিতে প্লাাবিত হচ্ছে। এদিকে বশরতনগর এলাকার অপরিকল্পিতভাবে স্থাপিত রাবার ড্যামটি সীতাকুণ্ড পৌরসভা জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহিৃত করছে একদশক আগে। অথচ জনপ্রতিনিধিরা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো রাবার ড্যামটি অপসারণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
সীতাকুণ্ড পৌরসভার কাউন্সিলর দিদারুল আলম জানান, ছড়া নালাগুলো দখলমুক্ত করা জরুরি। অন্যথায় প্রতিবছরই বন্যা-জলাবদ্ধতা হবে। পৌরসভার প্রকৌশলী মো. নুরুন নবী জানান, সীতাকুণ্ডে বন্যা নয়, ফ্লাশ ফ্লাড হয়। পৌর এলাকার পানি প্রবাহের ছড়া, নালা ও খালগুলো বেদখল হওয়ায় সেগুলো পানি ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা প্রয়োজন।
রাবার ড্যামের প্রসঙ্গে পৌর মেয়র বদিউল আলম জানান, গতবছর পাঁচ দফা ভারি বর্ষণে বন্যা হয়েছে। পৌর সদরের মধ্যে ইদিলপুর, আমিরাবাদ ও শেখপাড়া ছড়া তিনটির পানি গিয়ে পড়ে সৈয়দপুর খালে।
এই খালের মুরাদপুর ইউনিয়নের বশরত নগর আছে রাবার ড্যামটি। ওই খাল দিয়েই তিন ছড়ার পানি বঙ্গোপসাগরে যায়। তাই রাবার ড্যামটি সংস্কার প্রয়োজন। তবে ড্যামটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া অবৈধ দখলদার এবং পর্যাপ্ত খাল খনন না করায় পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তৎকালীন সময়ে অবৈধ দখলদারদের দখলের সুযোগ দেয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রেম নিয়ে সহজ স্বীকারোক্তি ঐন্দ্রিলার