হূমায়ূন আহমেদ : বাঙালির আনন্দ বেদনার কথাকার

| শুক্রবার , ১৩ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

হূমায়ূন আহমেদ- সমকালীন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান পুরুষ। কথাসাহিত্যিক হিসেবে তিনি বিপুলভাবে খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় হলেও এটিই তাঁর প্রধান পরিচয় নয়। তিনি পরিভ্রমণ করেছেন সাহিত্য ও সংস্কৃতির বহূ বিচিত্র গলিপথে। নাটক, চলচ্চিত্র, সংগীত আর ছবি আঁকায় অসাধারণ কৃতিত্ব তাঁকে করে তুলেছে অনন্য। হূমায়ূন আহমেদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কুতুবপুরে। বাবা পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। বাবার চাকরিসূত্রে হূমায়ূন শৈশবে দেশের বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। প্রায় দু বছর কেটেছে চট্টগ্রামে। সে সময় তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করে আমেরিকার নর্থ ডেকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর কর্মজীবনের সূচনা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। কিন্তু সাহিত্য সাধনায় পুরোপুরি নিবেদিত হলে ছেড়ে দেন শিক্ষকতার পেশা। ছাত্রজীবনে ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে হূমায়ূন আহমেদের সাহিত্য চর্চার শুরু। এরপর নিরন্তর লিখে গেছেন। তাঁর রচনায় কল্পনা, বাস্তবতা, বিজ্ঞান চেতনা, রহস্যময়তা, হাস্যরস, মরমীবাদ ইত্যাদির চমৎকার সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়। পাঠকের একাধিক প্রজন্ম তৈরি হয়েছে তাঁর হাতে। মধ্যবিত্ত বাঙালির আনন্দ বেদনার অপরূপ রূপকার ছিলেন তিনি। অনায়াস দক্ষতা দেখিয়েছেন টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণে। তৈরি করেছেন নতুন নতুন অভিনেতা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রচুর কাজ রয়েছে তাঁর। ‘আগুনের পরশমনি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘১৯৭১’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ ইত্যাদি রচনায় যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ফুটিয়ে তুলেছেন নিপুণভাবে। সিনেমার প্রয়োজনে লিখেছেন প্রায় অর্ধশতাধিক গান।
বাংলা একাডেমির বইমেলার প্রধান আকর্ষণ ছিলেন হূমায়ূন আহমেদ ও তাঁর বই। তাঁর কথাসাহিত্যের বিশেষ শিল্পরীতি সরলতা, কিন্তু তাতে রয়েছে জাদুকরী কাহিনি বুননের স্বাদ। চার দশক ধরে একই ধারাবাহিকতায় মধ্যবিত্তের চিরসঙ্গি ছিলেন তিনি। কর্মকৃতির স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, হূমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক সহ আরো বহূ পুরস্কার ও সম্মাননা। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় হূমায়ূন আহমেদ প্রয়াত হন। সত্য, শুদ্ধতা আর সুন্দর – এই ত্রয়ী স্রোত তাঁর প্রতিটি লেখায় প্রবাহিত। হূমায়ূন আহমেদের সৃষ্টির বিপুল সম্ভার বাংলা সাহিত্যে অনাগত কালের জন্য দুর্লভ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধ২৪ নং ওয়ার্ড দাইয়াপাড়ায় রাস্তা নালা ডাস্টবিন ও ফুটপাতের কাজ দ্রুত করার আবেদন