হালদার পাড় ঘেঁষে সেই মেলা

রুমানা নাওয়ার | সোমবার , ১৮ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

বাড়ি থেকে মাইল দেড়েক হেঁটে মেলায় যেতাম। কত আনন্দ বুকে জড়িয়ে হাঁটতাম। বিশাল জায়গা জুড়ে মেলা বসতো। বাজার যেখানে মিলতো প্রতিনিয়ত- মূলত সেই জায়গাটাতে বৈশাখ চৈত্র সংক্রান্তির মেলা বসতো। এ মাথা থেকে ও মাথা। হেঁটে হেঁটে আমরা কদমা বাতাসার ঘ্রাণ নিতাম। আর টাকা দিয়ে সবচেয়ে সুন্দর নকশা করা মাটির রঙিন পাতিলে কিনে কিনে সব ভরতাম। নাগরদোলা আসতো মেলায়। ক্র্যাচ ক্র্যাচ আওয়াজে পুরো মেলা মাথায় তুলতো। আমার বয়সী সব কিশোর কিশোরী পাল্লা দিয়ে উঠতো নাগরদোলায়। আর মনে হতো ঘুরতে ঘুরতে এই বুঝি আকাশটা ছুঁয়ে দিলো। বুকের ভিতর আনন্দ, ভয় দুটোই কাজ করতো। পুতুল নাচ বসতো স্কুল মাঠে। অবাক চোখে দেখতো শিশুমন। আর স্কুল মাঠটা ছিলো একটা চমৎকার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের জায়গা। আমাদের নারায়ণ হাট এলাকাটা হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ সব ধর্মের মানুষের একসাথে বসবাসের জায়গা। একসাথে আনন্দ আয়োজন একসাথে উদযাপন। মেলাকে ঘিরে সব মানুষ আনন্দে মেতে উঠতো। এখানে কখনো বিদ্বেষ বিভেদ প্রতিহিংসা নেতিবাচক মনোভাব দেখিনি। সবাই সবার আপন ভাই ভাই। দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকেরা তাদের পসরা সাজিয়ে বসতো। রাত অবধি চলতো এ মেলা। কুমোর এর বানানো জিনিস গুলোর প্রতি আকর্ষণ থাকতো বেশি। কতো কতো জিনিস। আহা দেখেই চোখ জুড়াতো। মাটির ব্যাংক হাতি ঘোড়া পুতুল রাজা রানী সবই সারি সারি করে সাজানো হতো। সব কেনার সাধ্য না থাকলেও দেখতাম চোখ ভরে। তারপর বড় বেলায় ডিসি হিলের পহেলা বৈশাখ প্রণোদনা জাগাতো মনে। চট্টগ্রাম মহিলা কলেজর বাদামতল ছিল আমাদের বর্ষবরণের নান্দনিক মঞ্চ। সময়ের স্তরে স্তরে বৈশাখী মেলার আর বর্ষবরণ আড়ম্বরপূর্ণতায় ভরপুর ছিল। সব কিছু ছাপিয়ে হালদার পাড় ঘেঁষে নারায়ণ হাট বাজার এর সেই বৈশাখী মেলা আজও আমায় টানে। আজও ঘ্রাণ পাই সেই কদমা বাতাসার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসন্দেহ : অত্যন্ত নোংরা মনের পরিচয়
পরবর্তী নিবন্ধমৃত্যু