স্বস্তির বৃষ্টিতে অস্বস্তি

নিচু এলাকায় পানি, কাদায় একাকার সড়ক

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

কয়েকদিন ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ নগরবাসীর প্রত্যাশা ছিল বৃষ্টি। কাঙ্ক্ষিত সে বৃষ্টির দেখা মিলেছে গতকাল। কিন্তু এ বৃষ্টি কেবল স্বস্তি নয়, বয়ে আনে দুর্ভোগও। এর কারণ নিচু এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বাসা-বাড়ি, দোকানপাট এমনকি হাসপাতালেও পানি ঢুকে যায়। বৃষ্টি থামার পর শহরের ভাঙা সড়কগুলো রূপ নেয় মিনি পুকুরে। নষ্ট বহু সড়কে হয় কাদার ছড়াছড়ি। এতে ভোগান্তি বাড়ে পথচারীর। সবমিলিয়ে স্বস্তির চেয়ে অস্বস্তিই যেন বেশি ছিল।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দিবাগত মধ্য রাত থেকে শুরু হয় হালকা বৃষ্টি। গতকাল রোববার বিকেল ৩টা পর্যন্ত কখনো থেমে বা কখনো একটানা বৃষ্টি হয়েছে। শহরের কোথাও গুঁিড় গুঁড়ি এবং কোথাও হালকা বৃষ্টি হয়েছে। ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত কোথাও বৃষ্টি হয়নি। এরপর আবারও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে।
এর মধ্যে সকাল ৯টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১২২ দশমিক ৬ মিলিমিটার, দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার, বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৫২ দশমিক ৪ মিলিমিটার ও সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৪৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। বিষয়টি নিশ্চিত করে অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ও পূর্বাভাস কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি পাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, লঘুচাপের প্রভাবে আজ সোমবারও চট্টগ্রামে আকাশ মেঘলা থেকে অস্থায়ীভাবে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সেসাথে অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এদিকে বৃষ্টিতে গতকাল জলাবদ্ধতা হয় শহরের নিচু এলাকায়। বহাদ্দারহাট ও মুরাদপুরে হাঁটুর উপর পানি ছিল। মুরাদপুরে প্রধান সড়কে দুপুর ১২টার পর পানি নেমে যায়। হালিশহরে নয়া বাজারে বিকেল ৪টার দিকেও হাঁটুর উপর পানি ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সকালে সেখানে প্রায় কোমর সমান পানি ছিল। হালিশহর আই ব্লক, এল ব্লক, আগ্রাবাদ সিডিএ’তেও পানির গভীরতা ছিল বেশি। এছাড়া মুরাদপুর মোহাম্মদপুরে সাড়ে ১২টায়ও পানি ছিল। সেখানে বিভিন্ন দোকানপাটে পানি ঢুকে যায়।
চাক্তাই আছাদগঞ্জ শুটকি পল্লী, ড্রামপট্টি ও সোবহান সওদাগর লেনেও পানি উঠে। এছাড়া ২নং গেট, শোলকবহর, ষোলশহর, কাপাসগোলা, চকবাজার বাদুরতলা, আবদুল হামিদ লেন, চাক্তাই, বাকলিয়া, ডিসি রোড, চান্দগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকা, দক্ষিণ কাট্টলী ও কাতালগঞ্জ ডিসি রোড, ঘাসিয়া পাড়া, ফুলতলা, কে বি আমান আলী রোড, ঝর্ণাপাড়া ও রসুলবাগ এলাকায় জলযট সৃষ্টি হয়।
আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক, কমার্স কলেজ রোড, মল্লাপাড়া, ঈদগাঁ বউ বাজার, মকবুল সওদাগর লেন, জঙ্গি শাহ মাজার এলাকা, বগারবিল ও পেরেক ফ্যাক্টরি, ইছহাকের পুল ও মিয়া খান নগরেও জলযটে দুর্ভোগে পড়েন স্থানীয়রা।
আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের নিচ তলা প্রায় হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন রোগী ও তাদের স্বজনরা। এদিকে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সকালে ঘর থেকে বের হওয়া কর্মজীবী ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে।
জলাবদ্ধতায় আটকে পড়ে নির্দিষ্ট সময়ে স্টেশনে পৌঁছুতে না পারায় গাড়ি মিস করার কথা জানান ঢাকাগামী যাত্রী নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এ্যানেল। তিনি বলেন, জিইসি সংলগ্ন গরীব উল্লাহ শাহ মাজার স্টেশন থেকে সকাল ৯টায় গাড়ির ছাড়া সময় ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছার জন্য চান্দগাঁও বাসা থেকে বেরও হয়েছি। কিন্তু জলাবদ্ধতায় আটকে পড়ি। মুরাদপুরে প্রায় কোমর সমান পানি ছিল। গাড়ি ছাড়ার সময়ে সেখানেই আটকে ছিলাম। পরে অনেক কষ্টে স্টেশনে পৌঁছে সাড়ে দশটায় ঢাকাগামী আরেকটি গাড়িতে করে রওয়ানা হই।
চকবাজারের মুহাম্মদ আলি শাহ দরগাহ লেনের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল হামিদ বলেন, রাস্তার অবস্থা তো করুণ ছিলই। ঘরের ভেতরও এক হাঁটুর বেশি পানি ছিল। আসবাবপত্রসহ অন্যান্য মালামাল নষ্ট হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেও এখানে ঘরে পানি ঢুকে যায়। হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের সুফল পাচ্ছি না আমরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালেদার মুক্তির মেয়াদ বাড়ল আরও ছয় মাস
পরবর্তী নিবন্ধদক্ষিণ চট্টগ্রামকে পৃথক জেলা করার দাবি