সত্যিই বদলে গেছে আলুটিলা

স্বর্ণতোরণ, ঝুলন্ত সেতু, আম্ফি থিয়েটার পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | সোমবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে বদলে গেছে খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলা। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রটি নান্দনিক রূপ পেয়েছে। জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে দুই পাহাড়ের মাঝখানে নির্মাণ করা হয়েছে ঝুলন্ত সেতু, নন্দনকানন পার্ক, কুঞ্জছায়া ভিউ পয়েন্ট ও স্বর্ণতোরণ। এ ছাড়া আম্ফি থিয়েটার ও খুমপুই রেস্ট হাউস নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। এ সব নান্দনিক স্থাপনা নির্মাণ হওয়ায় পর্যটকদের বাড়তি আর্কষণে পরিণত হয়েছে আলুটিলা। এতে জেলার পর্যটন অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের প্রবেশমুখে নির্মাণ করা হয়েছে স্বর্ণতোরণ। পর্যটন কেন্দ্রের ভেতরে নির্মাণ করা হয়েছে ঝুলন্ত সেতু। দৈর্ঘ্য ১৮০ ফুট। ঝুলন্ত ব্রিজটি আলুটিলার দুই পাহাড়কে সংযুক্ত করেছে। এতে করে পর্যটকরা এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাতায়াত করতে পারছে। ব্রিজ পার হলেই নন্দনকানন পার্ক, কুঞ্জছায়া ভিউ পয়েন্ট। এ ছাড়া আম্ফি থিয়েটার ও খুমপুই রেস্ট হাউস নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। নতুন নান্দনিক স্থাপনা হওয়ায় খুশি পর্যটকরা। খাগড়াছড়ির আলুটিলায় বেড়াতে আসা পর্যটক চেমি দেওয়ান, ত্বন্নি বড়ুয়া বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও এখানে মানুষ কেবল প্রাকৃতিক গুহা দেখতে আসত। অন্য কোনো স্থাপনা ছিল না। সব বয়সী পর্যটক গুহায় প্রবেশ করতে পারত না। তবে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র এখন অত্যন্ত মনোরম। এখানে ঝুলন্ত ব্রিজ, পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। আগের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর। এখান থেকে পাখির চোখে পুরো খাগড়াছড়ি শহর দেখা যায়।’ ব্যবসায়ীরা বলেছে আলুটিলাকে ঘিরে ম্যাউন্টেন ট্যুরিজমের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে আলুটিলায় বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির অনুরোধ জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা। তিনি বলেন, আলুটিলা আমাদের প্রধান পর্যটন আর্কষণ। বর্তমানে আলুটিলায় যেসব পর্যটনবান্ধব স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে তার কাজ শেষ হলে দেশের পর্যটন অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে। পর্যটন এলাকায় বেসরকারিভাবে বিনিয়োগে নতুন নতুন রিসোর্ট কটেজ গড়ে উঠবে। পর্যটকদের রাত যাপনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, খাগড়াছড়িতে পর্যটনই অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত। তাই পর্যটন অর্থনীতির বিকাশের স্বার্থে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছি। এতে পর্যটক সমাগম বেড়েছে। নান্দনিক ঝুলন্ত ব্রিজ, নন্দন পার্ক এ সব স্থাপনা পর্যটকদের আরো মুগ্ধ করবে। পাহাড়ের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে নির্মাণ করা হচ্ছে আম্ফি থিয়েটার। থিয়েটারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রাচীন গ্রিসে আম্ফি থিয়েটার সাংস্কৃতিক পরিবেশনার জন্য ব্যবহার করা হত। আলুটিলা পর্যটন পার্ক সৃষ্টির সময়ে পাহাড়ের প্রাকৃতিক একটা কার্ভ দেখে আম্ফি থিয়েটার নির্মাণের চিন্তা মাথায় আসে। খাগড়াছড়িতে ঘুরতে আসা অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক এই আম্ফি থিয়েটারের মঞ্চে পাহাড়ে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত নৃত্য-গীত উপভোগ করবে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সাথে সবার পরিচয় হবে। এর ফলে একদিকে যেমন এই ধরনের সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়বে অন্যদিকে পাহাড় ও সমতলের মাঝে এক অদৃশ্য সেতু বন্ধন তৈরি হবে। আমাদের জানা মতে প্রায় ৫০০ আসনের এ আম্ফি থিয়েটার বাংলাদেশে প্রথম। এ সব স্থাপনা নির্মাণে ৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই সন্তানকে ঘরের বাইরে রেখে মায়ের আত্মহত্যা
পরবর্তী নিবন্ধসিএনজি টেক্সি চুরি করতে চালককে খুন করল দুর্বৃত্তরা