ইকোনমি লাইফ পেরিয়ে যাওয়া ১৩ হাজার সিএনজি চালিত টেক্সি স্ক্র্যাপ করছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। শেষ দফায় প্রায় চার হাজার গাড়ি স্ক্র্যাপকরণ কাজ চলছে। কোভিড প্রাদুর্ভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সরকারি নির্দেশনা মেনেই এসব গাড়ি স্ক্র্যাপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ। বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলছেন, স্ক্র্যাপ করাতে আসা ৩০-৩৫ শতাংশ গাড়িতে টেকনিক্যাল ত্রুটি পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম বিআরটিএতে স্ক্র্যাপ করার জন্য টেক্সিগুলোর লম্বা লাইন পড়েছে। বিআরটিএর আঙিনা পেরিয়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কে স্থান করে নিয়েছে এসব টেক্সি। প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় স্ক্র্যাপকৃত গাড়িগুলো বিআরটিসি রেস্টহাউজের সামনে মজুদ করে পরিবেশ দূষণ করলেও এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। প্রত্যেকটি গাড়ি স্ক্র্যাপ করার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট স্ক্র্যাপক্রেতারা নিজেদের ট্রাকে উঠিয়ে নিচ্ছেন।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১৩ হাজার করে ২৬ হাজার সিএনজিচালিত টেক্সি নিবন্ধন দেয় বিআরটিএ। এসব গাড়ির মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ বছর করে। যে কারণে পরিবেশগত ক্ষতির প্রভাবমুক্ত হতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইতোমধ্যে ঢাকায় নিবন্ধিত ১৩ হাজার সিএনজি স্ক্র্যাপ করে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। চট্টগ্রামে ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ মডেলে প্রস্তুতকৃত এমন সাড়ে আট হাজার সিএনজি টেক্সি ২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রায় ১০ মাস বন্ধ ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ অবশিষ্ট টেক্সিগুলোর স্ক্র্যাপকরণ। গত ১৬ নভেম্বর থেকে পুনরায় স্ক্র্যাপকরণ কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম বিআরটিএ। এ দফায় ২০০৪ ও ২০০৫ সালে প্রস্তুতকৃত মোট তিন হাজার ৯৪৪টি টেক্সি স্ক্র্যাপিং করা হচ্ছে। শেষ দফায় প্রায় পাঁচ শতাধিক টেক্সি ইতোমধ্যে স্ক্র্যাপিং সম্পন্ন করেছে বিআরটিএ। ধারাবাহিকভাবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবশিষ্ট মেয়াদোত্তীর্ণ টেক্সি স্ক্র্যাপ করা হবে। স্ক্র্যাপকৃত এসব টেক্সির মালিকদের অনুকূলে নতুন কেনা গাড়ির নিবন্ধন দেবে বিআরটিএ।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) তৌহিদুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘গত ১৬ নভেম্বর থেকে শেষ দফায় মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি টেক্সি স্ক্র্যাপ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে।’ তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (গতকাল) আমরা ১২০টি টেক্সি স্ক্র্যাপ করেছি। এবারে ৫শ’র মতো গাড়ি স্ক্র্যাপ সম্পন্ন হয়েছে। যতগুলো গাড়ি স্ক্যাপ করার জন্য আসছে তন্মধ্যে ৬৫-৭০ শতাংশ গাড়ি আমরা সঠিক পাচ্ছি। ৩০-৩৫ শতাংশ গাড়িতে টেকনিক্যাল ত্রুটি পাওয়া যাচ্ছে। গ্যারেজে গাড়ির যত্ন নেওয়া হলে এই সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এজন্য গাড়ির চালক ও মালিকদের সচেতন হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ বৃহস্পতিবার দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার জন্য নিবন্ধিত টেক্সিগুলোর ইকোনমি লাইফ (সময়সীমা) ইতোমধ্যে ১৫ বছর হয়েছে। পরিবেশবান্ধক নগরী গড়তে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক মেয়াদোত্তীর্ণ এসব টেক্সি স্ক্র্যাপিং করা হচ্ছে। স্ক্র্যাপ করার পর এসব সিএনজি টেক্সির নিবন্ধন নম্বর ও তথ্য সার্ভার থেকে মুছে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে গাড়ি মালিকদের নতুন করে গাড়ি পুনঃস্থাপনপূর্বক নতুন নিবন্ধন নম্বর দেওয়া হবে।