শহীদ মিনারকে দৃষ্টিগোচর করতে ৭ সদস্যের কমিটি

১৬ জানুয়ারি পরিদর্শনের পর প্রয়োজনীয় পরামর্শ দ্রুততম সময়ে জনবান্ধব করার পথ খুঁজতে হবে : মেয়র

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১১ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:১৮ পূর্বাহ্ণ

নবনির্মিত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে আরো দৃষ্টিনন্দন ও দৃষ্টিগোচর করা এবং সর্বশ্রেণির মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী ১৬ জানুয়ারি শহীদ মিনার পরিদর্শন করে গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট স্থপতি, প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবে। কমিটির সমন্বয়ক হচ্ছেন নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার। সদস্যরা হচ্ছেনস্থপতি আশিক ইমরান, স্থপতি জেরিনা খান, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, স্থপতি সোহেল মোহাম্মদ শাকুর ও স্থপতি আবদুল্লাহ আল ওমর।

নবনির্মিত শহীদ মিনার দৃশ্যমান নয় দাবি করে গত কয়েক মাস ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীরা। একইসঙ্গে দৃশ্যমান না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় দিবসে এ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আপত্তি জানান। গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পরিবর্তে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ অবস্থায় শহীদ মিনারকে দৃশ্যমান করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানে গত মাসের শেষ সপ্তাহে কমিটি করা হয়। গতকাল বুধবার টাইগারপাসস্থ নগর ভবনে মেয়র দপ্তরে কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নবনির্মিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও তৎসংলগ্ন স্থাপনাসমূহের বিষয়ে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে উঠা আপত্তিসমূহ সমাধানের পথ দ্রুততম সময়ে খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, শহীদ মিনার আমাদের চেতনার উৎস। জনগণের মূল দাবি শহীদ মিনারকে দৃশ্যমান করা। বর্তমানে শহীদ মিনারে যেতে চারটা সিঁড়ি বেয়ে যেতে হচ্ছে। যা সাধারণ মানুষ বিশেষ করে বয়স্কদের উপযোগী নয়। এছাড়া সিঁড়িগুলোর গঠন এমন যে বড় কোনো আয়োজনে প্রচণ্ড ভিড় হলে এ সিঁড়ির কারণে মানুষের হাতপা ভাঙবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের স্থপতিদের সাথে বসে দ্রুততম সময়ে এ সমস্যার সমাধান বের করে একে জনবান্ধব করতে হবে।

সভায় আহমেদ ইকবাল হায়দার বলেন, আগের শহীদ মিনারের যে একটা সহজিয়া ব্যাপার ছিল সেটা ফিরিয়ে আনতে হবে। শহীদ মিনারকে জনবান্ধব করতে হবে, সবুজায়ন করতে হবে। শহীদ মিনার জনগণের আবেগের কেন্দ্র। প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, সরকারের আন্তরিকতাকে প্রচণ্ডভাবে অপচয় করেছি। বিশেষ করে শহীদ মিনারে গমনাগমনের সিঁড়ি একবারেই জনবান্ধব হয়নি। প্রকল্প পরিচালক লুৎফুর রহমান বলেন, আমি সচিব মহোদয়ের সাথে আলাপ করেছি। সব পক্ষের মতামত নিয়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বদরুল আলম খান বলেন, আমাদেরকে আগে সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। এরপর বাজেটের বিষয়টি নিশ্চিত করে কাজ করতে হবে। আমরা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে সমাধান খুঁজব।

জানা গেছে, গত ২ ডিসেম্বর শহীদ মিনার নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরা শহীদ মিনার নিয়ে একটি সভা করেন। এতে শহীদ মিনার দৃশ্যমান না হওয়ার জন্য নবনর্মিত মুসলিম ইনস্টিটিউট ও গণগ্রন্থাগার ভবনের সঙ্গে শহীদ মিনারকে যুক্ত করা ২১ ফুট উঁচু প্লাজা’কে দায়ী করা হয়। এ প্লাজার কারণে নিচের সড়ক থেকে প্লাজার উপরে থাকা শহীদ মিনার দৃশ্যমান নয় বলে দাবি করা হয়। সেটা ভেঙে ফেলারও দাবি উঠে ওই সভায়। এ বিষয়ে গতকালকের সভায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ বলেন, প্লাজার নিচে, ওয়াসার একটা গুরুত্বপূর্ণ পাইপ আছে। এ পাইপটা কখনো নষ্ট হলে ক্রেন দিয়ে তুলতে হয়। আবার ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচলের বিষয়ও আছে। এজন্য টানেলের অংশটিকে উঁচু করতে হয়েছে।

জানা গেছে, ২৮১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেঙ প্রকল্পের কাজ চলছে। ইত্যেমধ্যে ২০৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৮৭ শতাংশ এবং আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ প্রকল্পের আওতায় পুরনো শহীদ মিনারের আদল ঠিক রেখে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন শহীদ মিনার ও উন্মুক্ত গ্যালারি। এছাড়া পুরনো পাবলিক লাইব্রেরি ভেঙে ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ভবন ও পুরনো মুসলিম হল ভেঙে নির্মাণ করা হয়েছে ৮ তলা ভবন। গত ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধনের দিন চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেঙ প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে কোনো স্মৃতিসৌধ নেই। তাই ২১ ফেব্রুয়ারির পাশাপাশি ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চসহ জাতীয় দিবসগুলো চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পালন করা হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পালন করা হয় বিজয় দিবসের কর্মসূচি। এরপর ২৭ ডিসেম্বর পুরনো কাঠামোটা ভাঙার কাজ শুরু হয়। একইসঙ্গে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে অস্থায়ী শহীদ মিনার করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।

২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর নবনির্মিত শহীদ মিনারে বিজয় দিবস উদযাপন করা নিয়ে গত একই বছরে ১৮ নভেম্বর ও ২ ডিসেম্বর দুটি মতবিনিময় করেন মেয়র। এতে সংস্কৃতিকর্মীরা নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ছাড়া এ শহীদ মিনারে ফুল দিতে আপত্তি জানান। এর মধ্যে ২ ডিসেম্বরের সভায় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে গঠিত ওই কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হল গতকাল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদ্বিতীয় প্রজন্মের ৪ এমপি, একটি সেলফি, কিছু স্বপ্ন
পরবর্তী নিবন্ধহাছান মাহমুদ ও নওফেল পূর্ণমন্ত্রী