‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠন র্যাবের নেটওয়ার্কে ধরা পড়লেও এতে কত সদস্য, নেতৃত্বে কারা কিংবা কী পরিমাণ অস্ত্র রয়েছে তাদের হাতে, সেসব নিয়ে এখনও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার তিনজন তত্ত্বাবধায়ক বা প্রশিক্ষক এখন পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫ জনের মতো নতুন সদস্য নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের তথ্য দিয়েছেন। এদের মধ্যে র্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন চারজন। কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া দুই ছাত্রসহ সাতজনকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। খবর বিডিনিউজের। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- পটুয়াখালীর মাদ্রাসা শিক্ষক হোসাইন আহম্মদ (৩৩), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়ের (৩৪), পটুয়াখালীর কম্পিউটার ব্যবসায়ী বণি আমিন (২৭), কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ছাত্র ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত (১৯) ও হাসিবুল ইসলাম (২০); তাদের সঙ্গে নিখোঁজ হওয়া গোপালগঞ্জের ডিপ্লোমা প্রকৌশলী রোমান শিকদার এবং ঢাকার একটি ছাপাখানার কর্মী মো. সাবিত (১৯)। তাদের কাছ থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠনের তিন ধরনের প্রচারপত্র, বিস্ফোরক তৈরির নির্দেশিকা সম্বলিত পুস্তিকা, জঙ্গি সংগঠনটির কর্মপদ্ধতি (খসড়া মানহায), উগ্রবাদী বই ‘নেদায়ে তাওহীদ’, জিহাদী উগ্রবাদ ভিডিও সম্বলিত একটি ট্যাব উদ্ধারের কথা জানানো হয়েছে। র্যাবের পরিচালক জানান, গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে
হোসাইন, নেছার ও বণি আগেই উগ্রবাদে দীক্ষিত ছিলেন। এই তিনজনই সাম্প্রতিক সময়ে নতুন সদস্য নিয়োগ ও প্রশিক্ষণে যুক্ত ছিলেন।
এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা কত- এ প্রশ্নের উত্তরে র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, আমরা সর্বোচ্চ আঞ্চলিক নেতা পর্যন্ত আটক করতে সক্ষম হয়েছি। এরা কাট-আউট মেইনটেইন করে। তাতে এই সংগঠনের নামটি আমরা পেয়েছি। বিভিন্ন সংগঠন থেকে লোক চলে এসে তারা প্রথমত একসঙ্গে কাজ শুরু করে। শূরা সদস্য কয়জন বা তাদের আমির কে এসব এখনও জানি না। জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। সংগঠনটির সদস্যের বিষয়ে ধারণা চাইলে তিনি বলেন, সিলেটের চারজন ডিসেম্বর থেকেই নিখোঁজ। আর গ্রেপ্তার সদস্যরা কেউ বলেছে, তারা ২২-২৫ জনের কথা জানে।
র্যাব কর্মকর্তা মঈনের ভাষ্য, নিলয়ের দেওয়া তথ্য মিলিয়ে বিভিন্ন হোটেল থেকে সিসি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করে পালিয়ে যাওয়া তরুণদের শনাক্ত করা হয়। সেই তথ্য অনুযায়ী বণি আমিনকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক এলাকা থেকে এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এলাকা হতে নেছারকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে হোসাইন আহম্মদ, রিফাত, হাসিব, রোমান শিকদার ও সাবিতকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মঈন জানান, গ্রেপ্তার হাসিব ও রিফাত এক বছর আছে কুমিল্লার কোবা মসজিদের ইমাম হাবিবুল্লাহর কাছে এই জঙ্গি সংগঠনের বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা পায়। পরবর্তীতে হাবিবুল্লাহ তাদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে ফাহিম ওরফে হানজালা নামের আরেকজনের কাছে পাঠায়। ফাহিম তাদেরকে কুমিল্লার বিভিন্ন মসজিদে নিয়ে গিয়ে আশপাশের দেশসমূহে মুসলমানদের উপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞান দিত এবং উস্কানিমূলক ভিডিও দেখাতেন। মূলত দেশের বিচার ব্যবস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা কথাবার্তা বলে তাদের সুপ্ত ক্রোধ উস্কে দেওয়া হয়, বিক্ষুব্ধ করে তোলা হয়। এইভাবে তাদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী করে তোলা হয়।











