বন্যায় রাউজানে কৃষিখাতের ক্ষতি হয়েছে ১৪ কোটি ৭৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা। গত আগস্টের শেষ দিকে সৃষ্ট বন্যায় স্বপ্ন ভেঙে দেয়া কৃষকরা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় মাঠে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষি বিভাগের মতে খাল–নদীর বাঁধ ভাঙা পানির চাপে আমন চাষাবাদে কৃষকরা পিছিয়ে পড়েছে। স্থানীয় কৃষকরা বলেন, ইতিমধ্যে আমন চারা রোপণের সময় পার হয়ে গেছে। বন্যায় অধিকাংশ বীজতলা পানির নিচে চাপা থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে। এখন অনাবাদি জমিতে চারা রোপণের প্রয়োজনে নতুন করে বীজ তলা তৈরি সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে কৃষকরা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে চারা সংগ্রহের জন্য ছোটাছুটি করছে।
জানা যায়, গত মাসের শেষের দিকে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে নদীর বর্ধিত জোয়ার আর টানা বৃষ্টিতে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির স্রোতে প্রায় প্রতিটি এলাকায় বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার আগে যেসব জমিতে আমন চারা রোপণ করা হয়েছিল সেসব চারা কাঁদা মাটিতে লেপটে গেছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কৃষি পরিবারসমূহ আমন চাষাবাদ নিয়ে শংকার মধ্যে আছে।
খবর নিয়ে জানা যায় রাউজান উপজেলার মধ্যভাগ ও উত্তর–দক্ষিণ দুই প্রান্তে থাকা খাল নদী দিয়ে বয়ে যাওয়া পানির স্রোতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নের ফসলি জমি সপ্তাহকালের বেশি সময় ধরে তলিয়ে থাকে। ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় রোপণ করা আমন চারা ও বীজতলা, নষ্ট হয় নিচু এলাকায় থাকা মৌসুমি সবজি ক্ষেত।
মাঠ পর্যায়ে কাজে থাকা কৃষি কর্মকর্তাগণ বলেছেন, এই উপজেলার হলদিয়া, ডাবুয়া, চিকদাইর, নোয়াজিশপুর, গহিরা, বিনাজুরী, পশ্চিম গুজরা, উরকিরচর, ও নোয়াপাড়া ইউনিয়নের অবস্থান হলদা নদী, সর্তা ও ডাবুয়া খালের পাশ ঘেঁষে। এসব নদী খালে প্রবল স্রোত হয়ে এবার নেমে এসেছে পাহাড়ি ঢল। বাঁধ ভাঙা পানির স্রোতের তীব্রতায় রাস্তাঘাট ধসে প্রায় পানি গড়িয়েছে ফসলি জমির উপর দিয়ে। পানি বন্দি হয়ে পড়ে নিচু এলাকা সমূহ। বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধকতায় দ্রুত বন্যার পানি নামতে না পারায় কৃষি খাতের ক্ষতি হয়েছে।
আমন চাষাবাদ নিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছে পশ্চিম গুজরার রুবেল দে। উপজেলার উত্তরাংশে রয়েছে ডাবুয়া ও সর্তা খাল। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল থেকে এই দুটি খাল হয়ে বর্ষার পানি নেমে আসে প্রবল স্রোতে। খালের বাঁধ ভেঙে আসা পানির চাপে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় উত্তরাংশের কয়েকটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুম কবির বলেছেন, এই বন্যায় রাউজানের ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় দুর্যোগ কবলিত জমির পরিমান ৩২৫০ হেক্টর, সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ৮২০ হেক্টর জমির ফসল। টাকার অংকে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৭৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা। এই কর্মকর্তা বলেন দুর্যোগ কবলিত কৃষকরা এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় মাঠে মাঠে ব্যস্ত সময় কাজ করছে। তাদের পাশে রয়েছে রাউজান উপজেলা কৃষিবিভাগ।