মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে

| শুক্রবার , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

এমন কিছু ঘটনা ঘটছে, যা অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদে বোঝা যায়, সমাজের মানুষের মধ্যে সহনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। ক্রমশ মানুষ অস্থির ও অমানবিক হয়ে পড়ছে। ১৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি সংবাদে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ায় গরুর রশি খুলে নেয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে দুই ভাই খুন হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটার দিকে উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম খুরুশিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা একই এলাকার জহির আহমেদের ছেলে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন। ঘটনার পর অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে ধরে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। তাদের বাড়িও ওই এলাকায়। গ্রেপ্তার ঘাতক পিতা-পুত্রকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আবার ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত অন্য একটি খবরে জানা যায়, হাটহাজারীতে জুয়ার টাকা যোগাড় করতে দেড় মাস বয়সী ছেলে সন্তানকে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক পাষণ্ড বাবার বিরুদ্ধে। পরে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শিশুটি উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। হাটহাজারী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড আলীপুর গ্রামে মদিনা আবাসিকের সামনে বাবা মো. হুমায়ুন তার দেড় মাস বয়সী মাসুম নামের ছেলেকে বিক্রি করার ঘটনাটি ঘটে।

সে একজন ভাঙারি ব্যবসায়ী ও পেশাদার জুয়ারি। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক রয়েছে। সন্তানের মা মর্জিনা বেগম (৩২) বলেন, আমার দেড় মাস বয়সী ছেলেকে স্বামী জুয়ার টাকার জন্য ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। এর আগেও সে তার আরেক বউয়ের শিশু সন্তানকে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। ছেলেকে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে পার্শ্ববর্তী এগার মাইল এলাকায় এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেছে বলে খবর পাই। গতকাল সকালে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই ব্যক্তির টাকা ফেরত দিয়ে আমার কলিজার ধনকে ফিরে পেয়েছি।

সমাজে মানুষে মানুষে সম্পর্ক সুদৃঢ় করার ওপর গুরুত্বারোপ করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। তাঁরা পরিবারে মানবিক শিক্ষার বিস্তারকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। তাঁরা বলেন, পরিবার বলতে আমরা বুঝি এমন এক ধরনের গোষ্ঠী- যেখানে রক্তের বন্ধনে সবাই আবদ্ধ থাকেন। সবাই একসঙ্গে একটি পরিবারে বাস করেন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া ও যোগাযোগ বিদ্যমান। তারা স্বামী-স্ত্রী, মাতা-পিতা, ছেলে-মেয়ে ও ভাই-বোন হিসেবে পরস্পর মিলেমিশে অন্তরঙ্গ সম্পর্কে আবদ্ধ। প্রতিটি পরিবারের কিছু সাধারণ একই ধরনের কার্যাবলি থাকে- যা সর্বজনীন ও বিশ্বজনীন।

অর্থাৎ পরিবারের কিছু অপরিহার্য কার্য রয়েছে- যার মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের মৌলিক চাহিদা ও অধিকারগুলো পূর্ণ হয়। তাই পরিবারের এসব কার্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে এবং একটি পরিবার ঘিরে এসব কার্য আবর্তিত হয়। পরিবার বেশকিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে থাকে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ, নিরাপত্তামূলক কাজ, সামাজিক মর্যাদাবিষয়ক কাজ। পরিবার হচ্ছে সব সময় সব পরিস্থিতিতে আশ্রয়ের কেন্দ্রস্থল। পরিবারকে বিশ্লেষণ করলে আমরা যা দেখতে পাই, তা বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপট ভিন্ন কিছু বলছে। নগরায়ণের এই যুগে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে একক পরিবার গঠিত হচ্ছে। যেখানে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে না, সেখানে সমাজের অন্য মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হবে কী করে? এখানে দরকার মানবিক শিক্ষার বিস্তার।

শিক্ষাকে বলা হয় মানবজীবনের এক অমূল্য সম্পদ। কারণ সামগ্রিকভাবে একজন মানুষের বিকশিত হতে যেসব অপরিহার্য হাতিয়ার প্রয়োজন, তম্মধ্যে শিক্ষার স্থান সর্বাগ্রে। শিক্ষাবিদরা বলেন, শিক্ষা মানুষের অন্তর্নিহিত সুপ্ত শক্তিকে উন্মোচিত বা বের করে আনার এক অনিবার্য উপায়। দার্শনিক প্লেটোর মতে, শিক্ষা হচ্ছে সেই শক্তি যার দ্বারা শিক্ষার্থীর দেহে ও মনের সব সুন্দর ও অন্তর্নিহিত শক্তি বিকশিত হয়। অ্যারিস্টটলের মতে, শিক্ষা দেহ-মনের সুষম ও পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমে ব্যক্তিজীবনের প্রকৃত মাধুর্য ও পরম সত্য উপলব্ধিতে সহায়তা করে। বলা বাহুল্য যে, সামগ্রিক দিক দিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে।

পাঠ্যশিক্ষার হার বাড়ছে দিন দিন। প্রতিবছর লক্ষাধিক সাধারণ গ্র্যাজুয়েট, প্রকৌশলী, চিকিৎসকসহ নানা বিষয়ে উচ্চশিক্ষিত মানুষ আমাদের সমাজে যোগ হচ্ছেন। কিন্তু মানবিক সমাজ তৈরি হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত হানাহানির মধ্যে এগিয়ে চলছে সমাজ। যেখানে ভ্রাতৃত্ব নেই, বন্ধুত্ব নেই, মানবিকতা নেই। একজন আরেক জনের পেছনে লেগে আছে। একজন চায় না অন্যের ভালো। এ অবস্থায় দেশ এগোতে পারে না। এজন্য মানবিকতা সঞ্চার করতে হবে। জাগ্রত করতে হবে সমাজকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে