মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ঠিকাদারদের গার্ড ও চালকদের হাত–পা ও চোখ বেঁধে ৪টি স্কেভেটর, ৩টি ট্রলি গাড়ি ও একটি ড্রেজার মেশিনসহ ৮টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ কাজের বন্দর রক্ষা বাঁধের জন্য ব্লক তৈরি ও বালি ভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে ডাইক তৈরি কাজের বালি তোলার জন্য ওই গাড়ি ও মেশিনগুলো আনা হয়। এর আগে দিনের বেলায় বালি তোলা নিয়ে স্থানীয়দের সাথে ঠিকাদারদের দ্বন্দ্বও হয়। ২২ জানুয়ারি দিবাগত রাত ২টার দিকে মাতারবাড়ী বন্দর চ্যানেলের ধলঘাটার অংশে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আনুমানিক ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন ঠিকাদারের লোকজন।
জানা গেছে, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের চ্যানেল সংলগ্ন বন্দর চ্যানেল রক্ষা বাঁধের ডাইক নির্মাণের কাজ পায় তাজ এন্টারপ্রাইজ ও জাহানারা ট্রেডিং কোং নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাজ এন্টারপ্রাইজ থেকে সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজ পায় স্থানীয় আইটি এন্টারপ্রাইজ ও জাহানারা ট্রেডিং কোম্পানি থেকে সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজ পায় শাকিল এন্টারপ্রাইজ নামের আরও একটি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় আইটি এন্টারপ্রাইজ কাজ পেয়ে ৩টি সেভেন পাওয়ার স্কেভেটর, ৪টি পাওয়ার টিলার ভাড়া করে ধলঘাটা চরে নিয়ে যায়। একইভাবে স্থানীয় ঠিকাদার শাকিল এন্টারপ্রাইজও ১টি সেভেন পাওয়ার স্কেভেটর, জেনারেটর ও ড্রেজার মেশিন ভাড়া করে ধলঘাটা চরে নিয়ে যায়। দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত ২২ জানুয়ারি বিকালে একসাথে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করে। তারা ‘অবৈধ’ভাবে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বেড়িবাঁধ সংলগ্ন জায়গা থেকে শত শত জিও ব্যাগ নিয়ে বালিভর্তি করার সময় স্থানীয়রা কাজে বাধা দেন। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এসেও কাজে বাধা দেন। ফলে বালি ভরা শত শত জিও ব্যাগ ঠিকাদারের লোকজন রাতারাতি সরিয়ে নেয়।
কিন্তু রাত দেড়টায় কে বা কারা কাজে নিয়োজিত সিকিউরিটি গার্ড ও গাড়ি চালকদের চোখে–মুখে কম্বল দিয়ে ঢেকে রেখে হাত–পা বেঁধে স্কেভেটর, পাওয়ার টিলার ও বাসায় আগুন ধরিয়ে দেয়। সব কিছু আগুনে পুঁড়ে ছাই হয়ে যায় বলে ঠিকাদারের লোকজন অভিযোগ করেন। তারা বলেন, স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্ত তাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে না পাওয়ায় এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাকিল এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শাকিল বলেন, রাত দেড়টায় অজ্ঞাতনামা ২০–৩০ জনের একদল মুখোশধারী সন্ত্রাসী এসে কাজে নিয়োজিত সিকিউরিটি গার্ড ও গাড়ি চালকদের চোখে মুখে কম্বল চাপা দিয়ে হাত–পা বেঁধে স্কেভেটর, পাওয়ার টিলার ও বাসায় আগুন ধরিয়ে দেয়। সব কিছু আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্ত আমাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে না পাওয়ায় এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
তাজ এন্টারপ্রাইজের পরিচালক জমির উদ্দিন মেম্বার বলেন, স্থানীয় কতিপয় চাঁদাবাজ লোক আমাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা দাবি করেছিল। আমরা চাঁদা না দেওয়ায় বালি তোলার কাজে বাধা দেয়। পরে রাতের আঁধারে আমাদের প্রতিষ্ঠানের গাড়িতে আগুন দিয়ে ক্ষতিসাধন করেছে।
এদিকে ধলঘাটা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম পুতুর নেতৃত্বে উত্তর সুতরিয়া ও মহুরিঘোনা এলাকার লোকজন তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধনে তাঁরা অবৈধভাবে বালি উত্তোলন কাজে বাঁধা দেওয়ায় উত্তর সুতরিয়ার নিরীহ লোকজনকে ‘মিথ্যা’ মামলায় ফাঁসাতে এ আগুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বিষয়ে ওয়াপদার উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী জামাল মোরশেদ জানান, বালি উত্তোলনের বিষয়ে তদন্ত করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়টি জানানো হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে দ্রুত।
ঘটনার বিষয়ে মাতারবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের আইসি রাইটন দেব বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছি। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।