মই দিয়ে উঠতে হয় সেতুতে

সংযোগ সড়ক সংস্কার হয়নি এক যুগেও সোনাদিয়ায় কাজে আসছে না দুটি সেতু

ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী | শনিবার , ১৫ জুন, ২০২৪ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে ২ হাজার ৯শ ৬৬ একরের সোনাদিয়া দ্বীপ। পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় দ্বীপ এটি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) মাধ্যমে এখানে করা হয়েছে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজম জোন। সোনাদিয়া দ্বীপের উত্তরপূর্ব পাশে রয়েছে প্রায় ২০০ মিটার প্রস্থ দরবেশকাটা নদী। মূলত এই নদীই সোনাদিয়া দ্বীপকে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।

মহেশখালীর মূল ভূখণ্ডের সাথে সোনাদিয়া দ্বীপের সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য এলজিইডি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) ২০০৬ সালে ওই নদীর ওপর প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭০ মিটার ও ২২০ মিটার লম্বা দুটি সেতু নির্মাণ করে। কিন্তু ভেঙে যাওয়া সংযোগ সড়ক সংস্কার না হওয়ায় দীর্ঘ ১২ বছরেও সেতু দুটি চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে ঘটিভাঙ্গা সোনাদিয়া এলাকার ১৫ হাজার মৎস্যজীবী ও শ্রমজীবী মানুষসহ হাজার হাজার পর্যটক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। গত ১২ বছর ধরে সেতু দুটিতে উঠতে বাঁশের তৈরি মই ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা। সেতু দুটির বেহাল অবস্থার কারণে যেকোনো মুহূর্তে ওইগুলো ভেঙে যেতে পারে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঘটিভাঙ্গা থেকে সোনাদিয়া দ্বীপে সড়ক পথে যাওয়ার জন্য দরবেশকাটা খালের ওপর সেই সেতু দুটির পাশে সড়কপথ নেই। স্থানীয় লোকজন মই দিয়ে উঠে সেতু পার হচ্ছে। এছাড়া সেতু দুটি সংস্কারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে এবং রেলিং ভেঙে পড়েছে।

ঘটিভাঙ্গার বাসিন্দা এবাদুল্লাহ বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে সোনাদিয়ায় ইঞ্জিন নৌকা দিয়ে যাত্রী পারাপার করি। সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় সোনাদিয়ায় কোনো গাড়ি যাতায়াত করতে পারে না। ফলে বাধ্য হয়ে পর্যটকদের ইঞ্জিন নৌকা দিয়ে যেতে হয়। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। যদি রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়, চলাচলের জন্য অনেক সুবিধা হবে।

জানা যায়, ২০০৬ সালে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় সেতু দুটি। সেগুলো নির্মাণের তিন বছর পর ২০০৯ সালে ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়। কিন্তু টেকসই না হওয়ায় নির্মাণের তিন বছরের মাথায় ২০১১ সালের জলোচ্ছ্বাসে সড়কটি ভেঙে বিলীন হয়ে যায়। এরপর প্রায় এক যুগ পেরিয়ে গেলেও সেতু দুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়নি। স্থানীয়দের দাবি, সেখানে দ্রুত টেকসই সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হোক।

কুতুবজোম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ কামাল জানান, ২০১১ সালের জলোচ্ছ্বাসে সোনাদিয়াঘটিভাঙ্গা সড়কটি ভেঙে বিলীন হয়ে যায়। সেই থেকে আর মেরামত বা নির্মাণ করা হয়নি সংযোগ সড়কটি। সোনাদিয়া দ্বীপে প্রায় ২ হাজার মানুষের বসবাস। সড়কটি নির্মিত হলে সবাই সেতু ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারতেন। এখন সোনাদিয়ার বাসিন্দাদের জোয়ারভাটার ওপর নির্ভর করে চলাচল করতে হয়। অবশ্যই এর একটি কারণও রয়েছে। তা হলো, বেজার অধিগ্রহণে পড়েছে ওইসব জায়গা। যার কারণে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ বা জেলা প্রশাসন চাইলেও সেখানে কাজ করা সম্ভব নয়। এখন সেতু দুটির বেহাল অবস্থা। যেকোনো মুহূর্তে ব্রিজগুলো ভেঙে যেতে পারে।

মহেশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বলেন, সোনাদিয়া দ্বীপে সৃষ্ট প্যারাবন আমাদেরকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। অথচ কিছু স্বার্থান্বেষী মহল প্যারাবন কেটে ধ্বংস করে চিংড়িঘের নির্মাণ করছে। সোনাদিয়ার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। পাশাপাশি সোনাদিয়ার যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করা প্রয়োজন। এসব জায়গা বেজার অধিগ্রহণে পড়েছে। হয়তো তারা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরকার হাট এলাকায় ৮ ঘণ্টা ধরে তিন কিলোমিটারের বেশি যানজট
পরবর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে চরাঞ্চলের মহিষের হাট, বাড়ছে চাহিদা