বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সন্তুষ্টি

| বুধবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের একাধিক ঢেউ নাড়িয়ে দিয়ে গেলেও সরকারের দ্রুত ও সময়োচিত পদক্ষেপে বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আন্তর্জাতিক এই ঋণদাতা সংস্থা বলছে, সংক্রমণের হার কমে আসায় এবং সরকারের অনুকূল নীতি সহায়তা অব্যাহত থাকায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে। বাংলাদেশ মিশনের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এই গতিপথ ধরে রাখতে পারলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে আইএমএফ’র সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। এতে বলা হয়েছে, ক্ষত সারিয়ে অর্থনীতি যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য সরকারের সহযোগিতা দিয়ে যাওয়া জরুরি। সেই সাথে বিদ্যমান দুর্বলতাগুলোও কাটিয়ে উঠতে হবে। সেজন্য রাজস্ব খাতের আধুনিকায়ন, রাজস্ব ব্যয়ের যৌক্তিকিকরণ, সঞ্চয়পত্রকে বাজেটের সরাসরি অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত না রাখা এবং জ্বালানির দাম নির্ধারণে একটি আধুনিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার সুপারিশ করেছে আইএমএফ।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল ১৯৭২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। বিশ্বব্যাংক তখন বলেছিল, ‘সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের উন্নয়ন সমস্যাটি অত্যন্ত জটিল।’ সেই বিশ্বব্যাংকই ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ ২০২০: একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত সমীক্ষা শিরোনামে বাংলাদেশ নিয়ে একটি গবেষণা করে। অর্থাৎ স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোথায় যাবে-এটাই ছিল গবেষণার বিষয়বস্তু। সেখানে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়, তখন সাধারণ মানুষের ব্যাপক প্রত্যাশা ছিল যে রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থনৈতিক মুক্তি আনবে, দারিদ্র্যের অবসান ঘটাবে, দেশ হবে সমৃদ্ধিশালী। কিন্তু ২৫ বছর পর এখন দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অর্জন থাকলেও হতাশার জায়গাও অনেক বেশি। দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ অশিক্ষিত, ২৫ বছর ধরে দেশটি গড়ে মাত্র ৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে, এতে দেশটি বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছে, আর বাংলাদেশ বৈদেশিক সাহায্যের ওপর সত্যিকার অর্থেই নির্ভরশীল। প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ কি আগামী ২৫ বছরেও একই রকম থাকবে?
বিশ্বব্যাংকের নেই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা ছিল, ২০২০ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ এক সময়। তখন বাংলাদেশের বয়স হবে ৫০ বছর। এ জন্য বাকি আছে আরও ২৫ বছর। এ সময় বাংলাদেশের প্রথম ও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানবসম্পদে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। কেননা, একটি শক্তিশালী সমাজ ও অর্থনীতি গড়তে সবার আগে প্রয়োজন শক্তিশালী মানুষ। অথচ বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে মা ও শিশুরা চরম অপুষ্টির শিকার। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ২ শতাংশ ব্যয় করে বাংলাদেশ। এশিয়ার গড় হচ্ছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সুতরাং মানবসম্পদে অনেক বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। আর সামগ্রিকভাবে অগ্রগতির জন্য উন্নত শাসন প্রতিষ্ঠা করাটাও খুবই জরুরি। গবেষণায় ২৫ বছরের মধ্যে অর্জন করতে হবে এ রকম বেশ কিছু লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছিল সেই গবেষণায়। লক্ষ্যগুলো ছিল-দারিদ্র্যের হার দ্রুত নামিয়ে আনা, প্রবৃদ্ধির হার ৭-৮ শতাংশে উন্নীত করা, ৫ কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানিপণ্য বহুমুখীকরণ, পরিবেশের কার্যকর সংরক্ষণ, ২০২০ সালের মধ্যে বার্ষিক ৮০০ কোটি ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আনা ইত্যাদি। বিশ্বব্যাংক ১৯৯৫ সালেই ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন হবে, তার একটি ছক তৈরি করেছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, প্রায় সব কটি লক্ষ্যই অর্জন করেছে বাংলাদেশ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেক বেশি এগিয়েও রয়েছে। তবে বেসরকারি বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানো, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিদেশি বিনিয়োগ আনা-এসব ক্ষেত্রে যথেষ্ট পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধি হলেও সে তুলনায় কর্মসংস্থান হয়নি, কমেনি আয়ের বৈষম্য। বাংলাদেশের অগ্রগতি সকলের জন্য বিস্ময়। সব ধরনের ঘাটতি নিয়েই বাংলাদেশ অর্থনীতিতে বিস্ময়কর অগ্রগতি দেখিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে