বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ (সংশোধিত ২০০২) অনুযায়ী, পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন নিষিদ্ধ। আইন অমান্য করলে শাস্তির বিধানও আছে। এরপরও চট্টগ্রামসহ সারাদেশে থেমে নেই পলিথিনের ব্যবহার। এ অবস্থায় পলিথিনের অবাধ ব্যবহার বন্ধের লক্ষ্য ভিন্ন কৌশল নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। যাদের মাধ্যমে পলিথিনের ব্যবহার বাড়ছে সেইসব বিক্রেতাদের সম্পৃক্ত করে পলিথিনের ব্যবহার রোধ করতে চায় সংস্থাটি। এর অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে নগরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারকে পলিথিনমুক্ত করা হচ্ছে। বাজার তিনটি হচ্ছে কাজীর দেউরী, কর্ণফুলী মার্কেট এবং চকবাজার কাঁচাবাজার।
আজ সোমবার সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী পলিথিনমুক্ত বাজার কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। তবে আগামী ১ ডিসেম্বর তথা বুধবার থেকে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। অর্থাৎ আজ এবং আগামীকাল মঙ্গলবার কিছুটা ছাড় দেয়া হবে। বুধবার থেকে বাজারগুলোতে কোনো ব্যবসায়ীর কাছে পলিথিন পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে চসিকের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেক্ষেত্রে জরিমানা গুনতে হবে।
চসিকের দায়িত্বশীলরা বলছেন, আইন অনুযায়ী যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো বাজারে পলিথিনের ব্যবহার দেখলে জরিমানা করার সুযোগ আছে। কিন্তু প্রথমে সেটা না করে ব্যবসায়ীদের সচেতন করতেই তিনটি বাজার থেকে কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। তিনটি বাজারে সাফল্য পেলে পর্যায়ক্রমে নগরের সব বাজার পলিথিনমুক্ত করা হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, পলিথিনমুক্ত বাজার নিশ্চিতে প্রতিটি বাজারে দুইজন করে সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ‘বেটার ফিউচার বাংলাদেশ’, ‘ভলন্টিয়ার ফর বাংলাদেশ’ এবং ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি-সিপিপি’র স্বেচ্ছাসেবকগণ সহযোগিতা করবেন চসিককে। স্বেচ্ছাসেবকগণ আগামী ১০ দিন বাজারগুলোতে অবস্থান করে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সচেতন করবেন এবং পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করবেন। সচেতনতা তৈরিতে বাজারগুলোতে মাসব্যাপি মাইকিং (রেকর্ডকৃত) করা হবে। ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে ক্রেতাদের। এছাড়া নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। বাজারগুলো যে ওয়ার্ডের অধীন ওই ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে বাজারগুলোর ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন চসিকের দায়িত্বশীলরা। সেখানে পলিথিন ব্যবহার বন্ধে সবাই একমত হয়েছেন। কাজীর দেউরী বাজারে ১৫০ জন, চকবাজারে ৭৫ জন এবং কর্ণফুলী বাজারে ৭৫ থেকে ৮০ জন ব্যবসায়ী আছেন। প্রাথমিকভাবে প্রতিটি বাজারে ১০ হাজার পিস করে কাপড়ের ব্যাগ দেয়া হবে ব্যবসায়ীদের।
জানতে চাইলে চসিক পরিবেশ উন্নয়ন স্থায়ী কমিটির সভাপতি শৈবাল দাশ সুমন দৈনিক আজাদীকে বলেন, একটু আন্তরিক হলেই পলিথিনের ব্যবহার ছাড়াই বাজার করা সম্ভব। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে চটের বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে লোকজনকেও একটু সচেতন হতে হবে। পরীক্ষামূলকভাবে তিনটা বাজারে শুরু করছি। এতে কোথায় সমস্যা আছে সেটা চিহ্নিত করতে সুবিধা হবে। যা পরবর্তীতে সবগুলো বাজারের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে।
দোকানদাররা পলিথিন দিবে না এটা কীভাবে নিশ্চিত করবেন প্রশ্নে শৈবাল দাস সুমন বলেন, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে আমরা একাধিকবার সভা করেছি এবং কথা বলেছি। তারাও পলিথিনমুক্ত বাজারের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। তাছাড়া পলিথিন তো এমনিতেই নিষিদ্ধ। আমরা চাইলে পলিথিন ব্যবহারের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করতে পারি। এরপরও প্রাথমিকভাবে জরিমানা না করে সচেতন করছি।
প্রসঙ্গত, পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি নিষিদ্ধ পলিথিনসামগ্রী উৎপাদন করে, তাহলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা, এমনকি উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। সেই সঙ্গে পলিথিন বাজারজাত করলে ছয় মাসেই জেলসহ ১০ হাজার টাকার জরিমানার বিধান রয়েছে।