পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকারকে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিতে হবে

| সোমবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ দিবস উদযাপিত হচ্ছে। মহামারী করোনার কারণে পর্যটন শিল্পে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশে পড়েছে করোনার নেতিবাচক প্রভাব। পর্যটন হিসেবে খ্যাত স্পট কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটিসহ বিভিন্ন স্থানে লোকজন যেতে পারেনি। বন্ধ ছিল সকল পর্যটন স্পট। তবে অতি সম্প্রতি দেশের বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ায় পর্যটন শিল্প আবার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে।
এ কথা আজ অনস্বীকার্য যে, সারা বিশ্বে পর্যটন শিল্প একটি অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত। বলা যেতে পারে পর্যটন শিল্প বর্তমান বিশ্বের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার। পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশ এক অপার সম্ভাবনার নাম। এ দেশের প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্য পৃথিবীর অন্য দেশ থেকে অনন্য ও একক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।
‘দেশে পর্যটন শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধে মজিবর রহমান লিখেছেন, পর্যটন হচ্ছে সেবা খাতের অন্তর্ভুক্ত একটি খাত। মোট দেশজ উৎপাদনে সেবা খাতের অবদান ক্রমাগত বাড়ছে, পর্যটন শিল্প সেই অবদানে গতি সঞ্চার করে জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতিকে আরো ঊর্ধ্বমুখী করে তুলতে পারে। খাতটি বর্তমানে বেশ সম্ভাবনাময়। দেশের মানুষের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আগের তুলনায় অধিক নগদ অর্থের মালিক, ঘোরাফেরায় অর্থ ব্যয়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন তারা। বিদেশিরাও বাংলাদেশকে চিনতে শুরু করেছে। আয়তনে ছোট হলেও এর আনাচে-কানাচে অনেক কিছুই আছে দেখার মতো। পর্যটকদের আকৃষ্ট হওয়ার চিরায়ত স্পট বন-পাহাড়-সমুদ্র তো আছেই, আছে অনিন্দ্যসুন্দর হাওর ও চরাঞ্চল যা একান্ত ব্যতিক্রম। দেখানোর ব্যবস্থা করাই এখন মূল বিবেচনার বিষয়। এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও ২০১০ সালে গঠিত বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। রয়েছে ১৯৯২ সালে প্রণীত পর্যটন নীতিমালা। মোদ্দা কথা, পর্যটনের বিকাশে অবকাঠামো উন্নয়নসহ যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করা এসব প্রতিষ্ঠান ও নীতিমালার উদ্দেশ্য।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, আমাদের দেশের উন্নয়নে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত হতে পারে আশীর্বাদ। এজন্য দেশি বিনিয়োগই শুধু নয়, প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা সরকারের উঁচু স্তর থেকে নিম্নস্তর পর্যন্ত। আমাদের মনে রাখা দরকার যে, পৃথিবীর বৃহত্তর প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার বাংলাদেশে অবস্থিত। তদুপরি রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। মালদ্বীপের ন্যায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা পাল্টে দিতে পারে। সুন্দরবন ও কক্সবাজার পর্যটন শিল্প বিকাশের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে। অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্য, প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শনসমৃদ্ধ বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের প্রচুর পর্যটন আকর্ষণ রয়েছে। ফলে এখান থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারে। পর্যটন শিল্প হচ্ছে একটি বহুমাত্রিক শিল্প। অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাজস্ব খাতে তার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে জায়গা করে নেয়াসহ ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে পূর্বের তুলনায় বিভিন্ন পর্যটক আকর্ষণীয় স্থানে ভ্রমণের সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কক্সবাজার ও সুন্দরবনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক স্থান পর্যটক আগমন বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক গতিশীলতা আনয়নসহ দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এতে কোনো সংশয় নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। পর্যটন সকলের একটি পছন্দের বিষয়। জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্প নিয়ে কাজ করার সুযোগ অনেক বেশি। ষড়ঋতুর দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষণের বৈচিত্র্যও অনেক বেশি। তাঁরা বলেন,
‘বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন টেক-অফ স্টেজে আছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পর্যটন করপোরেশনের সব স্তরের কর্মকর্তাদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
পর্যটন শিল্পকে আরো আকর্ষণীয়, প্রাণবন্ত করে গড়ে তুলতে সরকারকে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে বেসরকারি বিনিয়োগকারী সংস্থার সাথে অংশীদারিত্বের সমঝোতা করে পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্বপর্যটন দিবস