দেশে মোট জনসংখ্যার ৫৭ শতাংশ তরুণ

পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা সামান্য বেশি এক-তৃতীয়াংশের বসবাস শহরে মোট জনসংখ্যার ২০.১৩ শতাংশ বাস করে চট্টগ্রাম বিভাগে

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ১০ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ

দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৭ শতাংশ বা প্রায় ৯ কোটি ৪০ লাখ মানুষের বয়স ২৯ বছরের কম। অর্থাৎ তারুণ্যের কারণে জনসংখ্যার যে জনমিতিক সুবিধা, তা পুরোপুরি বাংলাদেশের অনুকূলে রয়েছে। ষষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনার সমন্বয়কৃত প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএস। সেখানে দেখা যাচ্ছে, দেশে ২৯ বছরের কম বয়সীদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৭ শতাংশ। এর মধ্যে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এ বয়সী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭২ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ১০ শতাংশ। গতকাল রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে গত বছরের জুনের জনশুমারির সমন্বয়কৃত তথ্য প্রকাশ করা হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন এবং বিবিএসের মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমানও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। খবর বিডিনিউজের।

মূল প্রবন্ধে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ প্রকল্পের পরিচালক মো. দিলদার হোসেন বলেন, গত বছরের ১৫ থেকে ২১ জুন বিবিএস দেশব্যাপী যে জনশুমারি ও গৃহগণনা করেছিল তার প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের গণনাকৃত মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। নিয়ম অনুযায়ী সেই শুমারি যাচাই করে বিআইডিএস। সরকারি এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের ১০ থেকে ১৬ অক্টোবর দেশের মোট ৩৭৮টি গণনা এলাকায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পিইসি জরিপ পরিচালনা করে। বিআইডিএসের ওই যাচাই জরিপে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বা ৪৬ লাখ ৭০ হাজার মানুষ গণনা থেকে বাদ পড়েছিল বলে জানানো হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি বিআইডিএসের এক অনুষ্ঠানে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন বলে জানানো হয়।

দিলদার বলেন, বিশ্বে জনশুমারির তথ্য এভাবে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যাচাই করা হয়। তবে এবার প্রাথমিক গণনা থেকে বাদ পড়ার সংখ্যা অন্যান্য বারের চেয়ে কম। অন্যান্য বার প্রায় ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রাথমিক গণনায় বাদ পড়ে যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে। যাচাইকৃত সেই শুমারির তথ্য থেকে সমন্বয়কৃত মোট জনসংখ্যার গ্রাম, শহর, বিভাগ, লিঙ্গ, ধর্ম ও বয়সভিত্তিক জনশুমারির প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিবিএস।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, সমন্বয়কৃত মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। অর্থাৎ শুমারির প্রাথমিক গণনার চেয়ে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪৬ লাখ ৭০ হাজার। সমন্বয়কৃত গণনা অনুযায়ী দেশে ২৯ বছরের কম বয়সী জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার ৫৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অর্থাৎ বর্তমানে দেশে প্রায় ৯ কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার বয়স ২৯ বছরের কম।

প্রতিবেদনে বয়সভিত্তিক জনসংখ্যার হিসাবে দেখা যায়, দেশে বর্তমানে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা ১ কোটি ৬৮ লাখ বা ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, ৪ বছরের কম বয়সী রয়েছে ১ কোটি ৬২ লাখ ৬৩ হাজার বা ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী জনসংখ্যা ১ কোটি ৫৮ লাখ বা ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ; ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা ১ কোটি ৫৫ লাখ বা ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী জনসংখ্যা ১ কোটি ৪৭ লাখ বা ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ৩৫ বছরের কম বয়সীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশের কিছু বেশি বা ১০ কোটি ৮৭ লাখের কিছু বেশি।

অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, এটা একটা বিশাল সুসংবাদ। আমরা যে জনমিতিক সুবিধার কথা বলি সেটা এখনো ভালোমতো বহাল আছে। এখনো আমাদের মোট জনসংখার গড় বয়স মাত্র ২৮ বছর। সুতরাং বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিতভাবেই এগোচ্ছে। বিশাল এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে আরও উন্নত গবেষণার ওপর জোর দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের এই মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ গ্রামে এবং ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ শহরে বাস করে। প্রাথমিক প্রতিবেদনে পুরুষের সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন; নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন এবং হিজড়ার সংখ্যা ১২ হাজার, ৬২৯ জন। সমন্বয়কৃত গণনার তথ্য অনুযায়ী, পুরুষের সংখ্যা ২ দশমিক ৮১ বেড়ে ৮ কোটি ৪০ লাখ ৭৭ হাজার ২০৩ জন; নারী ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়ে ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার ১২০ জন হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক দিলদার জানান, সমন্বয়কৃত জরিপে সবচেয়ে বেশি ২৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ জনসংখ্যা ঢাকা বিভাগে, ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯১৫ জন। প্রাথমিক জরিপে এই সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ কোটি ৪২ লাখ ৭৮ হাজার ৫৮১ জনের বসবাস চট্টগ্রাম বিভাগে, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ২ কোটি ৩ লাখ ৫৩ হাজার রয়েছে রাজশাহী বিভাগে, যা মোট জনসংখ্যার ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, যোগাযোগ প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নয়নের এই সময়ে এত বিপুল ব্যয় করে জনশুমারির বিপক্ষে তিনি। একই সঙ্গে একটি শুমারির জন্য দশ বছর অপেক্ষা না করে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতি বছর শুমারি হালনাগাদ করার পক্ষে মত দেন তিনি।

চলমান জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। মন্ত্রী বলেন, এটা আরও অনেক কম ব্যয়ে পরিচালনা করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। ডিজিটাল পদ্ধতিতে আরও কম ব্যয়ে কীভাবে করা যায় এটা আমাদের বের করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘স্পেশাল’ কর্মচারী সরকারি ওষুধ নিয়ে যাচ্ছিল বাইরে
পরবর্তী নিবন্ধআগ্রহের কেন্দ্রে যেসব পোশাক