দুর্ঘটনা রোধে ফুটওভার ব্রিজ হবে?

নতুন মেয়রের সামনে চ্যালেঞ্জ ৬

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

নগরের বিভিন্ন সড়কে প্রতিদিন আনুমানিক তিন লাখের বেশি মোটরযান ও রিকশা চলাচল করে। ফলে সবসময় ব্যস্ত থাকে সড়কগুলো। বিপুল সংখ্যক যানবাহনের চাপে রাস্তা পার হতে বেগ পেতে হয় পদচারীদের। এতে প্রায় ঘটে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ মোড়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে সবসময় ছোটখাট দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন সময় দাবিও উঠেছিল ফুটওভার ব্রিজ বা পদচারী সেতু নির্মাণের। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)-সিডিএ’র দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা একাধিকবার প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্ত কাঙ্খিত পদচারী সেতু হয় নি। এমন প্রেক্ষাপটে ঘনিয়ে আসছে চসিক নির্বাচন। নগরবাসীও তাই চেয়ে আছে আগামীর মেয়রের দিকে। তাদের প্রত্যাশা, নির্বাচিত মেয়রের হাত ধরেই নগরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে নির্মিত হবে পদচারী সেতু। অবশ্য সেই প্রত্যাশা পূরণের চ্যালেঞ্জ কি মেয়র গ্রহণ করবেন? এমন প্রশ্নও আছে নগরবাসীর মাঝে। শহীদ নামে এক পথচারী বলেন, পথচারী সেতুর অভাব আছে। অথচ কেউ সে অভাব পূরণে এগিয়ে আসছে না। পদচারী সেতু না থাকায় লালখান বাজার, ওয়াসা, জিইসি, বহদ্দারহাট, রাস্তার মাথা, নিউমার্কেট, আগ্রাবাদসহ অনেকগুলো মোড়ে রাস্তা পার হতে সমস্যা হচ্ছে। আশা করছি- নতুন মেয়র অগ্রাধিকার দিয়ে এ বিষয়ে কাজ করবেন।
পথচারী সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের : বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনায় জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে ‘জাবালে নূর’ পরিবহনের একটি বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। আহত হন আরো ১৫ শিক্ষার্থী। ঘটনার পর ‘নিরাপদ সড়ক’র দাবিতে সারা দেশে আন্দোলনে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওই সময় চট্টগ্রামেও আন্দোলনকারীরা পদচারী সেতু নির্মাণের দাবি করেন।
একই বছরের ১২ আগস্ট তৎকালীন সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের সাথে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল নগর ভবনে মতবিনিময় করেন। এতে শিক্ষার্থীরা নিউ মার্কেট মোড়, আগ্রাবাদ বাদামতলির মোড়, জিইসি মোড়, মুরাদপুর মোড়ে পদচারী সেতু বা আন্ডারপাস নির্মাণের দাবি জানান। ওই সভায় মেয়র নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর যে অংশে বা মোড়ে লোক পারাপারের হার বেশি সেখানে পদচারী সেতু নির্মাণের ঘোষণাও দিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে এক বছরেরই সেপ্টেম্বর মাসে সড়ক সম্প্রসারণে তিন হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে চসিক। প্রকল্পের ডিপিপিতে ৫৭ কোটি টাকায় ৩৮টি পদচারী সেতু নির্মাণের প্রস্তাব আছে। যদিও প্রকল্পটি এখনো একনেকে অনুমোদন পায়নি।
এদিকে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর নগরের ১০টি মোড়ে পদচারী সেতু নির্মাণে সিএমপি থেকে চসিক প্রশাসককে প্রস্তাব দেয়া হয়। মোড়গুলো হচ্ছে- নিউমার্কেট মোড়, বাদামতল মোড়, জিইসি মোড়, দেওয়ানহাট মোড়, টাইগারপাস মোড়, ইস্পাহানি মোড়, ষোলশহর ২সং গেইট, ওয়াসা মোড়, চৌমুহনী মোড় ও কর্নেলহাট মোড়।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে নগরের পুরাতন চান্দগাঁও থানা মোড় এলাকায় পদচারী সেতু নির্মাণের দাবি করেছেন স্থানীয়রা। সল্টগোলা রেল ক্রসিংয়ে পদচারী সেতু নির্র্মাণে ২০১৯ সালে ‘বৃহত্তর হালিশহর ঐক্য পরিষদ’ ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে ‘নগর ও নাগরিক’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে লালখান বাজার মোড়সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্পটে পদচারী সেতু নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। সংগঠনটি ওই সময় সিটি মেয়রকে স্মারকলিপিও দেন একই দাবিতে।
এদিকে নগরে সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি চসিকের উদ্যোগে জাকির হোসেন রোডের ওয়ার্লেস মোড়ে স্কেলেটরসহ নির্মিত পদচারী সেতু উদ্বোধন করেন মেয়র। ৬৫ফুট দৈর্ঘ্য ও ৯ফুট প্রশস্ত পদচারী সেতুটির ব্যবহার তুলনামূলক কম হয়। এক্ষেত্রে জায়গা নির্বাচন সঠিক ছিল না বলে বিভিন্ন মহল দাবি করে থাকে। এছাড়া স্কেলেটরটি সবসময় চালু থাকে না বলে অভিযোগ আছে।
এর আগে নগরের মুরাদপুরে ২০১৯ সালের মে মাসে পদচারী সেতু নির্মাণ করেছিল সিডিএ। ১৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রশস্ত স্টিল স্ট্রাকচারের ফুটওভার ব্রিজটি দিয়ে প্রতিদিনি হাজার হাজার লোক রাস্তা পার হয়। ২০১৯ সালে জিইসি মোড়ে আরেকটি পদচারী সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করেছিল সিডিএ। পরে অজ্ঞাত কারণে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়।এদিকে স্টেশন রোড ও মিউনিসিপ্যাল স্কুলের সামনে পদচারী সেতু থাকলেও সেগুলোর ব্যবহার একেবারে কম পথচারীরা। তবে ইপিজেডের সামনের পদচারী সেতুতে সবসময় ভিড় লেগে থাকে।
মেয়র প্রার্থীর বক্তব্য :
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, পথচারী পারাপারের জন্যে ফুটওভার ব্রিজ খুবই জরুরি। ফুটওভার ব্রিজগুলো পরিচ্ছন্ন রাখা এবং রক্ষণাবক্ষণেও যত্নশীল হতে হবে। সেখানে হকার ও মাদকাসক্তদের আস্তানা করতে দেয়া যাবে না। মেয়র নির্বাচিত হলে আমি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিব।
তিনি বলেন, শহরে নতুন করে ফুটওভার ব্রিজ স্থাপনে আমি সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সাহায্য নিব। যে সব মোড়গুলোতে গণপারাপারে তারা দীর্ঘস্থায়ী বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, সেসব মোড়ে আমি ফুটওভার নির্মাণ করবো। জনগণের প্রত্যাশাও পূরণ করবো। জিইসি মোড়, লালখান বাজার ইস্পাহানি মোড়, আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়, বহাদ্দারহাট মোড়ে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ জরুরি। এসব স্পটে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে জনদাবি আছে। সেগুলো পূরণ করবো। স্টেশন রোড ও মিউনিসিপ্যাল স্কুলের সামনে দুটি ফুটওভার ব্রিজের সংস্কার করতে হবে। তুলনামূলককভাবে ব্যবহার কম হবে এমন জায়গায় অপরিকল্পিত ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ অর্থের অপচয়। সেটাও খেয়াল রাখবো। একটি মেগাসিটির ফুটওভার ব্রিজগুলো আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন, দৃষ্টিনন্দন হওয়া উচিত। সেভাবে পদক্ষেপ নিব।
বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, নির্বাচিত হলে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের চাহিদা পূরণে উদ্যোগ নেব। ঝুঁকি আছে সেখানে অগ্রাধিকার দিয়ে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করবো। ওয়াসা, জিইসি মোড়, লালখান বাজার, চট্টগ্রাম কলেজের সামনেসহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পদচারী সেতু নির্মাণ করবো। জনগণের জন্য যেখানে দরকার সেখানেই নির্মাণ করবো। আমার পরিকল্পনা আছে, যারা বিশেষজ্ঞ তাদেরকে দিয়ে পুরো শহরে জরিপ করে কোথায় কোথায় পদচারী সেতু প্রয়োজন তা চিহ্নিত করে প্রকল্প প্রণয়নের মাধ্যমে নির্মাণ করবো। সিটি কর্পোরেশনের যে প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেব। তিনি বলেন, পদচারী সেতুর পাশাপাশি শহরে রিকশা ও সাইকেলের জন্য আলাদা লেইন করার পরিকল্পনা আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গভ্যাক্স মানবদেহে পরীক্ষার জন্য আবেদন
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আরও ৬৫ জন শনাক্ত