দশ বছর পর আটক গিট্টু মানিক

চাঁদা না পেয়ে অগ্নিসংযোগ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৮ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ

দশ বছর পালিয়ে থাকার পর অবশেষে ধরা পড়েছে দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার বিদেশ পলাতক সাজ্জাদের অনুসারী গিট্টু মানিক (৪০)। এক-এগারোর সময় অনেক সন্ত্রাসী গা-ঢাকা দিয়েছিল। কিছু র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে মারা যায়। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা বিদেশে পলাতক থাকলেও তাদের অস্ত্র ভান্ডারের রক্ষক হিসেবে কাজ করতে থাকে উঠতি বয়সের সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে তারাই অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। তাদেরই একজন গিট্টু মানিক। গত মঙ্গলবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। চাঁদা না পেয়ে গত ২০ জুলাই ভোরে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার হাজীরপুল এলাকায় একটি ফোম কারখানায় অগ্নিসংযোগের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। গিট্টু মানিক নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার হামিদপুর এলাকার বাসিন্দা।
বায়েজিদ বোস্তামি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফেরদৌস জাহান বলেন, কারখানায় আগুন দেওয়ার ঘটনায় মোবারক ও জিসান নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ইতোপূর্বে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মানিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছিল মানিক। তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় আরও ছয়টি মামলা আছে। কয়েক বছর ধরে সাজ্জাদের নামে নগরীতে চাঁদাবাজির বিভিন্ন অভিযোগ জমা পড়ছিল পুলিশের কাছে। চাঁদা না পেয়ে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণসহ একাধিক ঘটনাও ঘটানো হয় তার নির্দেশে। সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেপ্তারকৃত সাজ্জাদের অনুসারীরাই জানিয়েছে, সাজ্জাদ বিদেশ থেকে দেশে থাকা তার সহযোগীদের সংগঠিত করে চাঁদাবাজি চালিয়ে আসছে।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার তৎকালীন ওসি (বর্তমানে সহকারি কমিশনার) এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম আজাদীকে বলেন, ২০১১ সালের ৪ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের বিশ্বরোড চৌরাস্তার মোড় থেকে চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও শিবির ক্যাডার সরওয়ার এবং ম্যাক্সনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গ্রেপ্তার দুজনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ সেই বছরের ৬ জুলাই ভোর ৪টায় বায়েজিদ থানার ওয়াজেদিয়া হামিদপুর এলাকায় তাঁদের সহযোগী শিবির ক্যাডার মানিকের বাড়ির পেছনে পুকুরপাড় থেকে এক বস্তা অস্ত্র উদ্ধার করে। অস্ত্রগুলোর মধ্যে ছিল একটি একে-৪৭ রাইফেল ও ২৭ রাউন্ড গুলি, একটি বিদেশি পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলি, দেশে তৈরি একটি বন্দুক, একটি দেশি ওয়ান শুটার গান এবং একটি এলজি। এ সময় পুলিশ মানিককেও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
মহিউদ্দিন সেলিম আরো বলেন, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় উল্লেখিত তিন শিবির ক্যাডারকে আসামি করে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় তিনজনকে অভিযুক্ত করে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা বায়েজিদ বোস্তামি থানার তৎকালীন এসআই জহির হোসেন। পরের বছর ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি আদালত ১৯৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (ক) ও ১৯ (চ) ধারায় তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ ১২ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনকে উপস্থাপন করে। এর মধ্যে আটজন সাক্ষী মামলার এজাহারে আনা অভিযোগের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বাকি তিনজন আসামিদের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তদন্ত শেষে একই বছরের ৮ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট ওই অস্ত্র মামলায় সরওয়ার ও ম্যাক্সনের উপস্থিতিতে তিন সন্ত্রাসীর প্রত্যেককে ২১ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছিলেন আদালত। এক বছর জেল খাটার পর উচচ আদালত থেকে জামিন নিয়ে তারা কারাগার থেকে ছাড়া পান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাজধানীতে বায়ুদূষণে এক বছরে ২২ হাজার মানুষের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নবজাতকের মৃত্যু