তিন কেন্দ্রে উত্তাপ, বাকিগুলো শান্ত

নগরের চার আসনে ভোটের চিত্র

মোরশেদ তালুকদার ও জাহেদুল কবির | সোমবার , ৮ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:১২ পূর্বাহ্ণ

একটি কেন্দ্রের বাইরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, একটি কেন্দ্রে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভাঙচুর এবং একটি কেন্দ্রে ধাওয়াপাল্টা ধাওয়া ছাড়া বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি নগরে। উত্তাপ ও উত্তেজনা থাকলেও শান্তিপূর্ণভাবে গতকাল শেষ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্র্বাচনে নগরের আসনগুলোতে ভোটগ্রহণ।

চট্টগ্রামে ১৬টি আসনের মধ্যে চারটি (চট্টগ্রাম, , ১০ ও ১১) নগরের। দিনভর আসনগুলোর বিভিন্ন কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। অবশ্য কোনো কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়নি। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া নিবন্ধিত অন্য দলগুলোর এজেন্টও দেখা যায়নি বেশিরভাগ কেন্দ্রে। অবশ্য এ বিষয়ে কোনো অভিযোগও পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের লাইন দেখা না গেলেও কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীর কর্মীসমর্থকদের ভিড় দেখা গেছে।

সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ওয়াসা সংলগ্ন হাই লেভেল রোডের বাড্‌স কিন্ডারগার্টেন ভোটকেন্দ্রে দেখা গেছে, ভোটারের লাইন নেই। কিন্তু কেন্দ্রের বাইরে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মীসমর্থকদের ভিড় ছিল। এ কেন্দ্রে সাতটি বুথ রয়েছে। প্রতি বুথে আওয়ামী লীগ ও দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্ট দেখা গেছে। অন্য প্রার্থীদের এজেন্ট দেখা যায়নি। চট্টগ্রাম১০ আসনের এ ভোটকেন্দ্রটির মোট ভোটার ৩ হাজার ২৭৪ জন। তবে সকাল ১১টা পর্যন্ত ৭১টি ভোট পড়েছে বলে আজাদীকে জানান কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। স্থানীয় কিছু নেতাকর্মী প্রভাব দেখিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে কৌশলে প্রতিহত করেছে। ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর পর ভোটার উপস্থিতি ছিল। পরে উপস্থিতি কমতে থাকে।

বাড্‌স কিন্ডারগার্টেনের পাশে রয়েছে শাইনিং আইডিয়াল স্কুল ভোটকেন্দ্র। সোয়া ১১টার দিকে এ কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারের লাইন দেখা যায়নি। কেন্দ্রে প্রবেশ করতেই দেখা যায় সিএমপির এসআই সামশুল ইসলামকে। তিনি বলেন, ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। প্রিসাইডিং অফিসার মাহমুদুল হাসানের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, এ কেন্দ্রের মোট ভোটার ৩ হাজার ২১২ জন। ১০টা পর্যন্ত ১৫৮ ভোট কাস্ট হয়। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম। আশা করছি বেলা বাড়ার সাথে ভোটারের উপস্থিতি বাড়বে।

এদিকে কেন্দ্রটিতেও নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্ট ছাড়া অন্যদের এজেন্ট দেখা যায়নি। এ বিষয়ে প্রিসাইডিং অফিসার বলেন, অন্য প্রার্থীদের এজেন্ট আসেনি। আমরা কেন্দ্র এবং কেন্দ্রের বাইরে এজেন্টদের খুঁজেছি, কিন্তু কাউকে পাইনি।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম৯ আসনের মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়নি। তবে কিছুক্ষণ পর পর কয়েকজন ভোটার এসে নির্বিঘ্নে ভোট প্রয়োগ করেন। এ কেন্দ্রের মোট ভোটার ৫ হাজার ১৭৯ জন। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার অফিসার শুভজিৎ পাল বলেন, কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই সবাই ভোট দিচ্ছেন। তবে ভোটারের উপস্থিতি এখনো কিছুটা কম।

সকাল ১১টা ৩৭ মিনিটে লালখান বাজার সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে মানুষের জটলা দেখা গেছে। এ সময় ভোটারের ভিড় না থাকলেও মাঝেমধ্যে দুয়েকজন ভোটার আসতে দেখা গেছে। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. একরামুল হক জানান, কেন্দ্রের মোট ভোটার ৩ হাজার ৩০৩ জন। প্রথম দুই ঘণ্টায় কাস্ট হয়েছে ১৭৫ ভোট। কেন্দ্রে ৬টি বুথ থাকলেও ইসলামিক ফ্রন্টের প্রার্থীর একজন এবং নৌকা ও স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর প্রতি বুথে এজেন্ট ছিল।

দুপুর সোয়া ১২টায় ঈদগাহ মুসলিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে আছেন। মাঝেমধ্যে দুয়েকজন ভোটার আসছেন। তবে কেন্দ্রের বাইরে প্রচুর লোক সমাগম ছিল। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সুব্রত মজুমদার আজাদীকে বলেন, কেন্দ্রের ৪ হাজার ৮৩১ ভোটারের মধ্যে ১২টা পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে ১২৭৫ ভোট। ১০টায় ছিল ৭০২। কেন্দ্রে বুথ আছে ১০টি। সকালে ভোটারের লম্বা লাইন ছিল বলে জানান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ কেন্দ্রে নারী ও পুরুষ ভোটারের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।

পাহাড়তলী কলেজের কেন্দ্র রয়েছে চারটি। দুপুরে উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, সবগুলো কেন্দ্র প্রায় ফাঁকা। তবে কিছুক্ষণ পরপর ভোটার আসতে দেখা গেছে। এর মধ্যে একটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মিজান উদ্দিন খান আজাদীকে বলেন, ২ হাজার ৬০৩ জন ভোটার রয়েছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১৪ শতাংশের কিছু বেশি।

আরেক প্রিসাইডিং অফিসার (কেন্দ্র ২০৬৬) দেলোয়ার হোসেন বলেন, কেন্দ্রে ভোটার রয়েছে ২ হাজার ৭৮০ জন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১৬ শতাংশ। ২০৬৭ নম্বর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আনিসুর রহমান বলেন, ২ হাজার ৮৯৮ জন ভোটারের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১৫ শতাংশ। ২০৬৮ নম্বর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ২ হাজার ৮৭২ জন ভোটারের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।

পাহাড়তলী কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন সত্তরোর্ধ বৃদ্ধ আইয়ুব আলী। তিনি আজাদীকে বলেন, আমি দীর্ঘ সময় ধরে ভোট দিচ্ছি। ভোট আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। ভোট দিতে ভালো লাগে, তাই এসেছি। আছিয়া আকতার নামে এক মহিলা ভোটার বলেন, স্বামীসহ ভোট দিলাম। কোনো ঝামেলা ছাড়া ভোট দিয়েছি। ভালো লাগছে।

দুপুর ১টায় চট্টগ্রাম৮ আসনের চান্দগাঁও মৌলভী পুকুর পাড় এলাকার আল হিকমাহ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল কেন্দ্রে দেখা গেছে, কেন্দ্রের প্রধান ফটক ভাঙা। কেন্দ্রের ভিতরে গ্লাসের ভাঙা টুকরা ও ইট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এ কেন্দ্রে ২টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল ভোটগ্রহণ। কেন্দ্রটিতে নির্বাচন বিরোধীরা ভাঙচুর চালিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন আজাদীকে বলেন, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে প্রায় দুই শতাধিক লোক জোরপূর্বক কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। কেন্দ্রে মোট ভোটার রয়েছে ৩ হাজার ৯৬৬ জন। ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৫ শতাংশের কিছু বেশি।

সকালে চট্টগ্রাম১১ আসনের পাঠানটুলি সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে (মহিলা কেন্দ্র) ভোটারের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। এই কেন্দ্রে দেড়টার দিকে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। এ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. তৌহিদুল আলম জানান, ২ হাজার ৭৮৫টি ভোটের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে ৩৩১টি। পাঠানটুলী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (পুরুষ কেন্দ্র) প্রিসাইডিং অফিসার আতিকুর রহমান জানান, কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৬৭৭টি। ১২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়েছিল ৪৬৮টি। ১০টা পর্যন্ত ভোট সংগ্রহ ছিল ১৪০টা।

পাঠানটুলী সিটি কর্পোরেশন বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার মীর মো. শিবলী জানান, কেন্দ্রের মোট ভোটার ২ হাজার ৫৪৫ জন। দুপুর ১টা পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে ৬০০টি।

চট্টগ্রাম১১ আসনের সরকারি কমার্স কলেজের মহিলা কেন্দ্রে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রার্থীর কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার জানান, সকালে কয়েকটি দলের কয়েকজন এজেন্টকে দেখেছিলাম। তবে কিছুক্ষণ পর দেখি তারা কেন্দ্র থেকে উধাও হয়ে গেছেন। বুথে গিয়ে দেখি কাগজপত্র আছে, কিন্তু এজেন্ট নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ ভোট
পরবর্তী নিবন্ধনির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে : সিইসি