নগরের বৈদ্যুতিক তার, ইন্টারনেট ক্যাবলসহ অন্যান্য তার মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া হবে। থাকবে না কোনো বৈদ্যুতিক খুঁটিও। এর মধ্য দিয়ে তারের জঞ্জালমুক্ত শহর হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। এতে কমবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। তবে প্রথমদিকে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ১৫টি সাব স্টেশনভুক্ত বৈদ্যুতিক তার মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এ লক্ষ্যে ‘এনার্জিট্রোন’ নামে অস্টেলিয়ার একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্যতা যাচাইও শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বৈদ্যুতিক তার মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার জন্য আন্ডারগ্রাউন্ডিং প্রকল্প গ্রহণ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠান ‘এনার্জিট্রোন’ এবং ‘আর অ্যান্ড ডি কে আই এস গ্রুপ’কে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয় বিপিডিবি। ওই দিন বিপিডিবি’র সাথে প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি চুক্তিও হয়েছিল।
চুক্তি অনুযায়ী, কোম্পানিগুলো বিপিডিবি’র চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে মাটির নিচের বৈদ্যুতিক তার নিয়ে যাওয়া তথা আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক সিস্টেম স্থাপন কাজের সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রাক্কলন, ডিজাইন এবং প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরির কাজে পরামর্শ দেবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড মনে করে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিপিডিবি’র চারটি বিতরণ অঞ্চলের আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য রুট নির্ধারণ করা সহজ হবে, বিদ্যমান ওভারহেড বিতরণ নেটওয়ার্ক এবং প্রস্তাবিত আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল নেটওয়ার্ক এর রুট জানা যাবে। এতে তারবিহীন নগরী তথা আধুনিক শহরের সৌর্ন্দয্য বৃদ্ধি পাবে। ফলে নির্ভরযোগ্য ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
এদিকে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের অংশ হিসেবে ‘এনার্জিট্রোন’ এর একটি প্রতিনিধি দল গতকাল বুধবার সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সাথে টাইগারপাসস্থ নগর ভবনে বৈঠক করেন। এছাড়া পর্যায়ক্রমে সিডিএ, ওয়াসা, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবেন।
গতকাল বৈঠকে উপস্থিত পিডিবি চট্টগ্রামের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যত ৩৩ কেভি, ১১ কেভি ও শূন্য দশমিক ৪ কেভি লাইন আছে সবগুলো আন্ডারগ্রাউন্ড করবে। জিপিএস এর মাধ্যমে সবগুলো কন্ট্রোল করা হবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম সূত্রে জানা গেছে, ১৫টি সাব স্টেশনের মাধ্যমে নগরে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হয়। এসব সাব স্টেশনের আওতায় ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইন আছে ৩৪ কিলোমিটার এলাকায়। এছাড়া ১১ কেভি সঞ্চালন লাইন আছে ৯৫৫ কিলোমিটার এবং শূন্য দশমিক ৪ কেভি সঞ্চালন লাইন আছে এক হাজার ৪০৬ কিলোমিটার। প্রাথমিকভাবে এসব সঞ্চালন লাইন ঘিরেই সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
‘এনার্জিট্রোন’ এর প্রতিনিধি দলকে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমরা ট্যানেলের মত উন্নত প্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করছি। মাটির উপরে কোন সংযোগ লাইন না রাখলে নগরীর সৌন্দর্য্য বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। মেয়র সব সংযোগ লাইন খুঁটি অপসারণ করলেও সিটি কর্পোরেশনের সড়কবাতির খুঁটি যাতে অপসারণ করা না হয় সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে বলেন। অন্যথায় আলোকায়নে সমস্যা হবে বলেও জানান।
চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) রেজাউল বারী ভূঁইয়া দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা প্রকল্পের ডিপিপি দিতে বলেছি। সেটা পেলে আমরা স্টাডি করে মতামত জানাবো বলে এনার্জিট্রোনকে জানিয়েছি।
বিপিডিবি আন্ডারগ্রাউন্ড প্রকল্পের উপদেষ্টা এ.কে.এম মোস্তফা কামাল বলেন, আধুনিক বিশ্বের কোথাও সড়কের উপর কোনো বিদ্যুতের খুঁটি, ইন্টারনেট, ক্যাবল অপারেটরের ক্যাবল ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে না। যা শুধুমাত্র বাংলাদেশে দেখা যায়। এধরনের ঝুলন্ত বৈদ্যুতিক, ইন্টারনেট ও ক্যাবল অপারেটরের সংযোগ ক্যাবল ও বিদ্যুতের খুঁটি জঞ্জালের সৃষ্টি করে। পাশাপাশি দুর্ঘটনারও ঝুঁকিও বাড়ায়। এসব ক্যাবল ও খুঁটির কারণে যেকোন সময় নগরীতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শংঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এনার্জিট্রোন এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখবে।











