ব্যাটসম্যানদের একপেশে দাপট দেখানো ম্যাচ এখন ড্রয়ের পথে। অতি নাটকীয় কিছু আজ শেষ দিনে না হলে বাংলাদেশ-শ্রীলংকার প্রথম টেস্টের ভাগ্যে ড্র ছাড়া আর কিছু নেই। চার দিনে সব মিলিয়ে উইকেট পড়েছে মোটে ১০টি। ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানরত বাংলাদেশ-শ্রীলংকার প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিনে উইকেট তার আচরণ পরিবর্তন করেনি। ফলে সেই ব্যাটিং স্বর্গে বাংলাদেশের সাদামাটা বোলিং কাজে লাগিয়ে দুই লঙ্কান ব্যাটসম্যান দিনকে রাঙিয়েছেন নানা অর্জনে। অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে নিয়েছেন প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ। আর দেড়শ ছুঁয়ে অপরাজিত আছেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। দুজনের রেকর্ড গড়া জুটিতে পুরো দিনে উইকেটের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। উইকেট খরার চতুর্থ দিন শেষে শ্রীলংকার সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৫১২।
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের চেয়ে তারা পিছিয়ে আছে মাত্র ২৯ রানে। আলোকস্বল্পতায় দিনের খেলা ২২ ওভার আগেই শেষ হওয়াতে লিডে যেতে পারেনি শ্রীলংকা। নইলে লিড হয়ে যেত এ দিনই। নিস্প্রাণ উইকেটে ৪১৯ বলের ম্যারাথন ইনিংসে ২৫ চারে ২৩৪ রানে অপরাজিত আছেন করুণারত্নে। ২০ চারে ২৭৮ বলে ১৫৪ রানে খেলছেন ধনাঞ্জয়া। ৫২৪ বলে এই দুই জনে গড়েছেন ৩২২ রানের জুটি। চতুর্থ উইকেটে যা বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার জেসন গিলেস্পি ও মাইক হাসির ৩২০। শ্রীলংকার জন্য এটি বাংলাদেশের বিপক্ষে রেকর্ড। আগের সেরা ছিল তৃতীয় উইকেটে মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারার ৩১১, ক্যান্ডিরই আরেক মাঠ অ্যাসগিরিয়ায় ২০০৭ সালে। গতকাল শনিবার দিনের প্রথম ঘণ্টায় বোলিংয়ে কিছুটা ধার ছিল বাংলাদেশের। এরপর আর কোন নিয়ন্ত্রণই দেখা যায়নি। আক্রমণাত্মক কিংবা রক্ষণাত্মক, কোনো পরিকল্পনাই ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেনি তারা। বরাবরই সচল থেকেছে লংকানদের রানের চাকা। বাংলাদেশি বোলারদের যে কোন আক্রমণ বিভিন্ন ধরনের শট খেলে সামাল দিয়েছেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান করুনারাত্নে এবং ধনাঞ্জয়া। বাংলাদেশের পেস এবং স্পিন কোন বোলারই সুবিধা করে উঠতে পারেননি। দুজনের হার না মানা ব্যাটিংয়ে সারাদিনে ৭৬ ওভারে আসে ২৮৩ রান। টেস্টে এ নিয়ে চতুর্থবার সারাদিনেও একটি উইকেট নিতে ব্যর্থ হলো বাংলাদেশ।
২০০৮ সালে চট্টগ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সবশেষ এমন দিন দেখেছিল তারা। ৩ উইকেটে ২২৯ রান নিয়ে শনিবার দিন শুরু করা শ্রীলংকা শুরুতে ছিল সাবধানী। দ্বিতীয় নতুন বলে তাসকিন আহমেদ ও আবু জায়েদ চৌধুরীর স্পেল কাটিয়ে দেওয়ার পর বাড়ায় রানের গতি। এর পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাদের। বাংলাদেশ খুব বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। নতুন বলের প্রথম ওভারে তাসকিনের বলে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হতে হতে বেঁচে যান ধনাঞ্জয়া। আবু জায়েদ পরের ওভারে করুনারত্নের এলবিডব্লিউর রিভিউ নিয়ে সফল হয়নি বাংলাদেশ। পরে তাইজুল ইসলামের বলে করুনারত্নের কঠিন একটি ক্যাচ নিতে পারেননি লিটন দাস। সে সময় লংকান অধিনায়ক ছিলেন ১৬৬ রানে। ৮৫ রান নিয়ে দিন শুরু করা করুনারত্নে পানি পানের বিরতির আগেই পৌঁছে যান সেঞ্চুরিতে, ২৪৭ বলে। বাংলাদেশের বিপক্ষে যেটি তার দ্বিতীয় শতক, টেস্টে একাদশ। ডানহাতি ধনাঞ্জয়া ১০২ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি। পরে বলে-বলে রান করে ১৫৩ বলে পৌঁছান সেঞ্চুরিতে। ৩৫ টেস্টেই করে ফেললেন সাত সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয়। তৃতীয় সেশনে আলোকস্বল্পতায় এক পর্যায়ে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় ১৯২ রানে ছিলেন করুনারত্নে। আবার খেলা শুরু হলে তাসকিনের ওভারে দুটি বাউন্ডারিতে পৌঁছান ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিতে। তার আগের সেরা ছিল ১৯৬, পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৭ সালে দুবাইয়ে। বোলারদের খাটুনির আরেকটি দিনে রান দেওয়ার সেঞ্চুরি হয়ে গেছে মিরাজ ও তাইজুলের। কাছেই আছেন তাসকিন। বেশি দূরে নেই ইবাদত হোসেন। দেড়শ ওভারের মধ্যে কেবল ১৩ ওভার বোলিং করেছেন বাংলাদেশের মূল পেসার আবু জায়েদ।











