রাঙ্গুনিয়ার শেখ রাসেল অ্যাভিয়ারি অ্যান্ড ইকো পার্ক। এটি বাংলাদেশের একমাত্র পাখিশালা। এখানে দেশি প্রজাতির পাখির পাশাপাশি আফ্রিকার পলিক্যান, ইলেকট্রাস প্যারট, সোয়ান, রিং ন্যাক, মেকাউ ও টার্কি রয়েছে। রয়েছে দেশের দীর্ঘতম ক্যাবল কার। এই ধরনের পার্ক নির্মাণে উদ্যোগ নেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পার্কটিতে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ে। কিন্তু গত কয়েক বছরে বনবিভাগের নানা প্রশাসনিক জটিলতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে পার্কটির জীর্ণ অবস্থা। ওমান প্রবাসী আজগর হোসেন কয়েক মাস আগে দেশে এসেছেন।
স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ইকো পার্কে বেড়াতে আসেন। টিকেট কেটে পার্কের ভিতর প্রবেশ করার পর জানতে পারেন ক্যাবল কার বন্ধ। শিশুদের জন্য নেই কোনো রাইড। দেশি-বিদেশি পাখির খাঁচাগুলো অনেকটা ফাঁকা। যে কয়টা পাখি আছে সেগুলোও রোগগ্রস্ত। পার্কে বেশিক্ষণ সময় ব্যয় না করে হতাশ হয়ে ফিরে যান তিনি। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দেবাশীষ রায় পরিবার নিয়ে আসেন পার্কে। কিন্তু পার্কের অবস্থা দেখে হতাশ হয়ে তিনিও ফিরে যান। আজগর ও দেবাশীষ রায়ের মতো প্রতিদিন অনেক পর্যটক ক্যাবল কার বন্ধ থাকায় ফটক থেকে ফিরে যাচ্ছেন। বনবিভাগের পরিচালনাধীন প্রায় ৫০০ একর বনাঞ্চলের উপরে তৈরি করা পার্কের প্রধান আকর্ষণ ক্যাবল কার দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ক্যাবল কার বন্ধ থাকায় পার্কে আসা অনেক দর্শনার্থী হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। জনবল না থাকায় ক্যাবল কার চালানো যাচ্ছে না জানিয়েছেন পার্ক কর্তৃপক্ষ।
পার্কে গিয়ে দেখা যায়, দর্শনার্থীরা পার্কে প্রবেশ করে খোঁজ নেন ক্যাবল কারের। কিন্তু ক্যাবল কার বন্ধ থাকায় হতাশ হয়ে ফিরছেন। বনবিভাগের রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে পার্কের উদ্বোধন হলেও ক্যাবল কার সংযোজন হয়েছে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। এই পার্কে ক্যাবল কার রয়েছে ১২টি। একেকটি ক্যাবল কারে যাত্রী উঠতে পারেন ছয়জন করে। ক্যাবল কার পরিচালনার জন্য একজন প্রকৌশলীসহ ৮ জন কর্মী ছিল। ভূমি থেকে প্রায় ১০০ ফুট উপর দিয়ে যাতায়াত করে এই ক্যাবল কার। কারে চড়ার সময় পথে পথে ছোট হ্রদ, কয়েকটি উঁচু-নিচু পাহাড়, ধানক্ষেত আর পার্কের নানা সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। ম্যানুয়্যালি চালানো ক্যাবল কারটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ওয়ারলেস সেটে বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হয়। ক্যাবল কারে চড়ে ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে পাহাড় চূড়া হয়ে আবার ফিরতে ২০ মিনিট সময় লাগে। তবে পর্যটক চাইলে পাহাড় চূড়ায় নেমে বেড়াতেও পারেন। যাওয়া-আসা মিলিয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল কারটি দেশের সবচেয়ে দ্রুতগতির। পার্কে প্রবেশ ফি জনপতি ২৩ টাকা হলেও ক্যাবল কারে চড়তে হলে জনপতি ২৫০ টাকার টিকেট কেটে উঠতে হয়। কিন্তু ক্যাবল কার ও পার্কের জীর্ণ অবস্থার কারণে পর্যটকে ভাটা পড়েছে রাঙ্গুনিয়ার শেখ রাসেল অ্যাভিয়ারি পার্কে।
মুঠোফোনে কথা হয় ক্যাবল কারের প্রকৌশলী পবিত্র বড়ুয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ভারতের পিআরএসপিএল নামে একটি কোম্পানি ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যাবল কারটি তৈরি করে। ক্যাবল কার চালুর পর থেকে প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা কাজ করছি। অনেকদিন হচ্ছে প্রকল্প শেষ হয়েছে। ক্যাবল কার বন্ধ থাকলেও আমি পার্কে গিয়ে বসি। ক্যাবল কার অচল না হওয়ার জন্য মাঝেমধ্যে মেশিন চালু করা হয়।
পার্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বনবিভাগের রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাসুম কবির বলেন, প্রকল্প শেষ হওয়ার কারণে ক্যাবল কার চালানোর লোকজন এখন আর নেই। জনবল না থাকায় ক্যাবল কার আপাতত বন্ধ রয়েছে। ক্যাবল কার চালু না থাকলেও পর্যটক কমেনি দাবি করে তিনি বলেন, নতুন প্রকল্পের জন্য অনেকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লেখালেখি হয়েছে। আশা করি অচিরেই প্রকল্প পাশ হবে। তখন পুরোদমে ক্যাবল কার চলবে।