জাতিসংঘের আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচারের পথ খুলল

মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ

| শনিবার , ২৩ জুলাই, ২০২২ at ৫:১০ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলায় মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ করে দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায়) এই রায় পড়ে শোনান আইসিজে সভাপতি বিচারপতি জোয়ান ই ডনোগু। এর ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত গণহত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানিতে আর কোনো বাধা থাকল না।
এদিকে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলায় মিয়ানমারের সামরিক জান্তার আপত্তি নাকচ করে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের (আইসিজে) দেওয়া রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এ আদালতের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।
এর আগে, চলতি বছরের ফেব্রুয়াারিতে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের আপত্তির বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মিয়ানমার দাবি করেছিল, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার করা এই মামলার বিচার করার এখতিয়ার নেই আইসিজের। তবে গতকাল শুক্রবারের রায়ে আন্তর্জাতিক আদালত বলেছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার করার পুরো এখতিয়ার রয়েছে তাদের। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অপরাধ প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত কনভেনশন (পিডিএফ) লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। আইসিজে ইতোমধ্যেই মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারকরা বলেছেন, এটি গোষ্ঠীর অধিকারের ‘অপূরণীয় ক্ষতি করেছে’।
২০১৮ সালে জাতিসংঘের একটি তদন্তে প্রমাণ মেলে মিয়ানমারের সেনাসদস্যরা ‘গণহত্যার উদ্দেশ্য’ নিয়ে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এরাকায় ওই ‘বিশেষ’ অভিযান চালিয়েছিল। এ কারণে দেশটির সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং এবং অপর পাঁচ জেনারেলের বিরুদ্ধে বিচার করার সুপারিশ করা হয়। জাতিসংঘ মিশনের চেয়ারম্যান মারজুকি দারুসমান বলেছেন যে, ভুক্তভোগীদের অ্যাকাউন্টগুলি ‘সবচেয়ে মর্মান্তিক মানবাধিকার লঙ্ঘন’ এর মধ্যে ছিল। যা তিনি দেখেছিলেন এবং ‘আমাদের বাকি জীবনের জন্য সবার মনে একটি চিহ্ন রেখে যাবে’। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে, ধর্ষণ ও হত্যা করে জাতিগত নিধন অভিযান চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেসময় নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। তারা এখনো তাদের জন্মভূমিতে ফিরতে পারেনি।
রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে ২০১৯ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া। ওই বছরের ১০-১২ ডিসেম্বর এই মামলায় প্রথমবার প্রাথমিক শুনানি হয়। এতে গাম্বিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির আইন ও বিচার মন্ত্রী আবুবকর তামবাদু। আর মিয়ানমারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। ২০২০ সালে আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার দলিল দাখিল করে গাম্বিয়া। সেখানে দেখানো হয়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কীভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। তবে এ মামলায় আইসিজের এখতিয়ার নেই দাবি করে একপর্যায়ে চ্যালেঞ্জ জানায় মিয়ানমার সরকার। ২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অং সান সু চি কারাবন্দি থাকায় এ বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত শুনানিতে অংশ নেন মিয়ানমার জান্তার প্রতিনিধিরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিতু হত্যার চার্জশিট চূড়ান্ত, শিগগির আদালতে পেশ
পরবর্তী নিবন্ধচেম্বারে চিকিৎসা নিতে গিয়ে যৌন নিগ্রহের শিকার