চট্টগ্রামে চেম্বারে পরিবারতন্ত্র, স্বৈরশাসন ও ভোটবিহীন বর্তমান কমিটি বাতিল করে নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল সকালে নগরীর আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সামনে নিজেদের বৈষম্যের শিকার দাবি করে ব্যবসায়ীরা এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহ–সভাপতি এস এম নুরুল হক। তিনি বলেন, সম্প্রতি ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। বিগত সরকারের দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো চট্টগ্রাম চেম্বারও একটি নির্দিষ্ট দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। দুই প্রভাবশালী নেতা এম এ লতিফ এবং মাহবুবুল আলম বলয়ের বাইরে এখানে কেউ নির্বাচিত হওয়া দূরে থাক, মনোনয়ন ফরম পর্যন্ত নিতে পারেননি। ফলে তাদের পরিবারের সদস্যরাই এখানে ব্যবসায়িক নেতা হয়েছেন। বলয়ের মধ্যে থাকা ব্যক্তিরাই পরিচালক হয়েছেন। চেম্বারকে ব্যবসায়ীদের বদলে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বানানো হয়েছে। পরিবারতন্ত্রের বাইরে যে ক’জন মনোনীত চেম্বার পরিচালক মনোনীত হয়েছেন, তারা সবাই অর্থের বিনিময়ে মনোনীত হয়েছেন। তৃণমূল ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ ভোটের মাধ্যমে চট্টগ্রাম চেম্বারের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য অনেক লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত সেটি সফল হয়নি। ফলে শতবছরের চট্টগ্রাম চেম্বার এখন অনেকটা ‘মরা বাঘ’ এ পরিণত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে চট্টগ্রাম চেম্বার কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এই চেম্বারের নেতারা রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রের মতোই সব সময় কথা বলেছেন। আমরা চট্টগ্রামের সাধারণ ব্যবসায়ীরা সেই পরিবারতন্ত্রের কবল থেকে চট্টগ্রাম চেম্বারকে মুক্ত করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে চাই। তৃণমূল ব্যবসায়ীদের ভোটে সরাসরি নেতৃত্ব নির্বাচন করতে চাই।
সমাবেশে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেল্স ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, ঐতিহ্যবাহী চিটাগাং চেম্বার অব কমার্সকে দীর্ঘ সময় স্বৈরশাসনের আজ্ঞাবহ করে রাখা হয়েছে। স্বৈরশাসন ও পরিবারতন্ত্র দিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। আজ (গতকাল) নির্যাতিত ও অবহেলিত ব্যবসায়ীরা পরিবারতান্ত্রিক এ কমিটির সবাইকে পদত্যাগের দাবিতে একসাথে মিলিত হয়েছেন।
পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহ–সভাপতি রাকিবুল আলম বলেন, চেম্বারকে সংস্কার করতে হবে। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে পদত্যাগ করতে হবে। পরিবারতন্ত্রের কবলে পড়ে চট্টগ্রাম চেম্বার ব্যবসায়ীদের কথা বলতে পারেনি। ব্যবসায়ীরা যদি ঠিকভাবে ব্যবসা করতে না পারেন তাহলে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নন–প্যাকার ফ্রোজেন ফুড্স এঙপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ–সভাপতি মো. মাহাবুব রানা বলেন, আমরা চট্টগ্রাম চেম্বারের বিনা ভোটের এই কমিটি বাতিল চাই। ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত ব্যবসায়ীরা এই চেম্বারের নেতৃত্ব দিবেন সেটি সাধারণ ব্যবসায়ীদের চাওয়া। তাই অতি শিগগিরই বর্তমান কমিটির পদত্যাগ দাবি করছি।
এদিকে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ৬ দফা দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো হচ্ছে–অবিলম্বে চট্টগ্রাম চেম্বারের বর্তমান ভোটবিহীন অবৈধ কমিটির পদত্যাগ, চট্টগ্রাম চেম্বারের সদস্যপদ প্রাপ্তি সহজীকরণ, সদস্যপদ সঠিক যাচাই–বাছাই করে নির্দিষ্ট ব্যক্তির পকেট ভোট ব্যাংক বিলুপ্ত করে একটি সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন, যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করার জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, একই নেতৃত্ব একাধারে ২ বারের অধিক নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ রহিত করতে প্রয়োজনে আইন সংশোধন ও চট্টগ্রাম চেম্বারের বিগত ১৬ বছরের আর্থিক লেনদেনের নিরপেক্ষ অডিট করা।
বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ–সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, সাবেক পরিচালক মাহফুজুর রহমান, সৈয়দ ছগির আহম্মদ, হাসানুজ্জামান চৌধুরী জোসেফ, আব্দুল মান্নান রানা, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি মো. সালামত আলী, মো. মোস্তাক, জাহিদুল করিম কচি, মোসলেম উদ্দিন, মিজানুর রহমান, মো. রফিক, এম এ রাজ্জাক, দিদারুল আলম, ফোরকান উদ্দিন সিআইপি, সৈয়দ আজম উদ্দিন ও মো. মিজানুর রহমান প্রমুখ।