চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে বোরোর পাকা ধান কাটা শুরু করেছেন কৃষকেরা। গুমাই বিলের পাশাপাশি উপজেলার অন্যান্য কৃষি জমিতেও চলছে পাকা ধান কাটা। এবার ধানের আশানুরূপ ফলন হওয়ায় কৃষকের চোখে–মুখে আনন্দ। তবে শ্রমিক সংকটে দিশেহারা অবস্থা কৃষকের। অন্যদিকে ভালো দাম নিশ্চিতে বাজার মনিটরিংয়ের আহ্বান জানিয়েছেন কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার ৮ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে গুমাইবিল হাইব্রিড জাতের ছক্কা, টিয়া, সুরভী–১, তেজগুল্ড, হিরা–২, হিরা–৬, ইস্পাহানি –৮, সিনজেন্টা ১২০৩ এবং ১২০৫, জনক রাজ, উফশী জাতের ব্রি ধান ৮৮, ২৯, ৭৪, ৮৪, কাটারী জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। উপজেলার অন্যান্য কৃষি জমিতে ব্রি–ধান ২৮ এ নেক ব্লাস্ট রোগে ক্ষতি হলেও গুমাইবিলে এই জাতের চাষাবাদ কম হওয়ায় এবং আগাম ব্যবস্থা নেওয়ায় তেমন রোগবালাই দেখা যায়নি। ফলে গুমাইবিলে ভাল ফলন হবে বলা প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
সরেজমিনে গুমাই বিলে গিয়ে দেখা যায়, সোনালি ধানে ভরে গেছে মাঠ। কৃষকদের কেউ ধান কেটে ঘরে আনছেন, কেউ কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গুমাইবিলে এবার মধ্যমেয়াদী ব্রি ধান ৮৮ জাতের চাষাবাদ বেশি হওয়ায় কৃষকরা দ্রুত বোরো ধান কাটতে পারছেন। ইতিমধ্যে গুমাই বিলের চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, ব্রহ্মোত্তর অংশে এ জাতের ধান কাটা শুরু করেছেন কৃষকরা। ধান কাটা বিষয়ে মরিয়মনগরের কৃষক মো. ফরিদ উদ্দীন বলেন, ‘এবার ৬০ কানি জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। যার বেশিরভাগই ব্রি ধান ৮৮। ইতিমধ্যে ১০ কানি জমির ধান কেটেছি। ফলন কানি প্রতি ১ মে. টন করে পেয়েছি। এ ধান চিকন হওয়ায় বাজার মূল্যও বেশি। তাই এবার চাহিদার তুলনায় লাভ বেশি হবে। তবে শ্রমিক সংকটের পাশাপাশি তাদের মজুরিও বেশি। তাই ধান কাটার সময় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমাদের।’ এই বিষয়ে গুমাইবিলে কর্মরত উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, ‘আমরা কৃষকদেরকে বোরো ধান চাষে ব্রি কর্তৃক উদ্ভাবিত ব্রি ধান ৮৮, ৯২ সহ হাইব্রিড ধান চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করেছি বেশি। কৃষকরা এ জাতগুলো এবার বেশি চাষাবাদ করেছেন গুমাইবিলে। ব্রি ধান ৮৮ জাতটি অন্যান্য জাতের চেয়ে ৭–১০ দিন আগাম হওয়ায় এখন গুমাইবিলে এ জাতটির কর্তন শুরু হয়েছে। ফলন আশানুরূপ হয়েছে, নমুনা শস্য কর্তন করে ৬–৬.৩ টন পর্যন্ত হেক্টর প্রতি ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহের দিকে পুরোদমে কাটা শুরু হবে। যা কাটা হয়েছে তাতে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ব্রি ধান ২৮–এ কিছু রোগ দেখা দিয়েছে। তবে তা একেবারেই নগণ্য। আশা করি, এবারও ধানের উৎপাদন বরাবরের মতো রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।’