করোনার কারণে যানবাহনের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট হালনাগাদে যেখানে হিমশিম খেতে হচ্ছে গাড়ি মালিকদের, সেখানে নতুন করে বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বকেয়া আয়কর। যানবাহন মালিকদের অভিযোগ, বিগত বছরগুলোতে প্রয়োজনীয় আয়কর পরিশোধ করেই ডকুমেন্ট হালনাগাদ করা হয়েছিল। এ বছর ডকুমেন্ট হালনাগাদ করতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে বিআরটিএ। বকেয়া আয়করের নামে অর্থ আদায় করলেও ব্যাংক মেমোতে বিবিধ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। এ নিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১০ বছরের অধিক সময় ফিটনেসবিহীন এমন গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৫৬ হাজারের বেশি। দেশে ফিটনেসবিহীন গাড়ি রয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার। তন্মধ্যে বাস ১৪ হাজার, কার্গোভ্যান দেড় হাজার, কাভার্ডভ্যান ৫ হাজার, ডেলিভারি ভ্যান ৭ হাজার, হিউম্যান হলার ১৪ হাজার, জিপ ১০ হাজার, মাইক্রোবাস ২২ হাজার, মিনিবাস ৯ হাজার, পিকআপ ৫০ হাজার, ট্রাক ৫৫ হাজার, প্রাইভেট কার ৪৮ হাজার, ট্যাক্সিক্যাব ১৬ হাজার এবং অটোরিকশা ১ লাখ ৬০ হাজার ছাড়াও ট্যাঙ্কার, ট্রাক্টর, অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন ফিটনেসবিহীন গাড়ি রয়েছে। তন্মধ্যে চট্টগ্রামে রয়েছে চলমান ২০ হাজার গাড়ি রয়েছে, যেগুলো ফিটনেসবিহীন। তবে দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত ও চলাচল অনুপযোগী গাড়ির সংখ্যা আরো বেশি।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, গত বছরের জানুয়ারিতে ১০ বছরের অধিক সময় ধরে ডকুমেন্ট হালনাগাদ করা হয়নি চট্টগ্রামে নিবন্ধিত এমন ৫৫ হাজার গাড়ির তথ্য নিজেদের সার্ভার থেকে মুছে দেয় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ)। এ তালিকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানের যানবাহনগুলো। তাছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন ট্রাক, হিউম্যান হলার, বাসও রয়েছে এ তালিকায়। ইতোমধ্যে বিআরটিএ’র অনুমোদন নিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গাড়ির ডকুমেন্ট হালনাগাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ।
তাছাড়া চট্টগ্রামে বিভিন্ন মালিক সংগঠনের নামে অন্তত ৮-১০ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান রয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ গাড়ির বেশ কয়েকবছর ধরে ফিটনেস, ট্যাক্সটোকেন কিংবা রুট পারমিট নবায়ন হয়নি। অসংখ্য গাড়ি রয়েছে ‘চার’ ডিজিটের। ফিটনেটবিহীন কিংবা ‘চার’ ডিজিটের হলেও নগরী দাপিয়ে বেড়ায় এসব ট্রাক। ট্রাকগুলোর বড় অংশ বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত। আবার সাইলো ও সিএসডি থেকে খাদ্যপণ্য পরিবহন করে থাকে ফিটনেসবিহীন ট্রাক। আবার জ্বালানি বহনকারী ট্যাংক লরিও রয়েছে এ তালিকায়। বিআরটিএ সূত্র জানায়, ১৯৯১ সাল থেকে ‘ছয়’ ডিজিটের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার শুরু হয়। তবে ‘চার’ ডিজিটের গাড়িগুলোকে সর্বশেষ ২০১৫ সাল পর্যন্ত নবায়ন করা হয়। মানে ‘চার’ ডিজিটের গাড়িগুলো ১৯৯১ সালের আগে নিবন্ধিত। এগুলো কমপক্ষে ৩০ বছরের পুরোনো।
এদিকে আগামি ৩০ জুন শেষ হতে যাচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ পুরোনো যানবাহনের ডকুমেন্ট হালনাগাদ করার সরকারি সুযোগ। এতে মেয়াদোত্তীর্ণ এবং চলমান যানবাহনগুলোর ডকুমেন্ট হালনাগাদে আয়কর বিড়ম্বনার অভিযোগ করছেন মালিকরা। নগরীর বাস মালিক মো. কলিমুল্লাহ বলেন, ২৪ জুন দুইটি বাসের ডকুমেন্ট হালনাগাদ করেছি। করোনাকালে ২০১০-২০২১ অর্থবছরে আমার দুইটি বাসের ডকুমেন্ট মেয়াদোত্তীর্ণ থাকলেও বকেয়া আয়করের অজুহাতে একটিতে সাড়ে ১০ হাজার টাকা এবং আরেকটিতে সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেশি দিতে হয়েছে।
চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব গোলাম রসুল বাবুল দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিগত ২০১৯-২০২০ এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরে যাদের ডকুমেন্ট হালনাগাদ ছিল তাদের ক্ষেত্রেও বকেয়া ৮ হাজার টাকা দাবি করছে বিআরটিএ। অথচ এসব টাকা পরিশোধ করলেও রশিদে “বকেয়া আয়কর” উল্লেখ থাকছে না। টাকা পরিশোধের রশিদে লেখা থাকছে “মিসিলিনিয়াস” (বিবিধ) হিসেবে। এ নিয়ে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললেও তারা কোন সদুত্তর দিতে পারছেন না। এজন্য আমরা বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি বছরের জন্য আড়াই হাজার টাকা আয়কর ধার্য ছিল। বিগত বছরেও এসব আয়কর পরিশোধও করা হয়েছে। আয়কর বেড়েছে এমন কোন সার্কুলারও তারা (বিআরটিএ) আমাদের দেখাতে পারছেন না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল্লাহকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে যোগযোগ করা হলে বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রায়হানা আকতার উর্থী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘প্রাইভেট কারের ক্ষেত্রে এখন দুই বছরের জন্য ফিটনেট দেয়া হচ্ছে। ফিটনেস করাতে গেলে অগ্রিম আয়করও পরিশোধ করতে হয়। এখানে দুই বছরের অগ্রিম আয়কর পরিশোধ করতে হচ্ছে। কিন্তু বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে বকেয়া কিংবা আয়কর জটিলতার বিষয়টি এখনো আমার চোখে পড়েনি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিএ’র ঢাকার একজন উর্ধতন কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘অগ্রিম আয়কর বৃদ্ধির বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আগের একটি পরিপত্র ছিল। ওই বিষয়ে বিআরটিএ’র সার্ভার আপ টু ডেট (হালনাগাদ) করা ছিল না। এখন আপ টু ডেট করার কারণেই জটিলতাটা হয়েছে।’












