পশুর জবাই দিলেই কি কোরবানি হয়ে যায়? তাহলে তো কোরবানি খুব সহজ ব্যাপার। কিন্তু হযরত ইব্রাহিম (আঃ )পুত্র হযরত ইসমাইল (আ🙂কে যে কুরবানী করেছিলেন তা কোন সহজ ব্যাপার নয়। ৮৬ বছর বয়সে হযরত ইব্রাহিমের পুত্র হযরত ইসমাইলের জন্ম হয়। অতঃপর ১৩ বছরের বালক পুত্র ইসমাইলকে বৃদ্ধ পিতা ইব্রাহিম নিজ হাতে কোরবানি করতে নিয়ে যান। এভাবে গল্পটি আমাদের মাঝে প্রচারিত হয়। গল্পটি অসত্য নয়, কিন্তু খণ্ডিত। এখানে পিতা পুত্রে কোরবানির কথা আছে, মায়ের কথা নাই। অথচ মায়ের ত্যাগ কম নয়। মায়ের ত্যাগ টা অন্যরকম সৌন্দর্যপূর্ণ। মা হাজেরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা অনন্য, অনুপম।
কোরআন হাদিস থেকে সম্পূর্ণ ঘটনা জানতে হবে আমাদের। খন্ডিতভাবে কোন বিষয়ে আলোচনা হলে, ইসলামের সম্পূর্ণ শিক্ষা থেকে দূরে সরে যেতে হবে অনেক ক্ষেত্রে।
ইব্রাহিমের মত কোন পিতা আর এভাবে তার ছেলেকে জবাই করতে পারবে না ।আল্লাহ তাআলা ও আর এমন কাউকে এমন হুকুম দিবেন না।
কিন্তু এখানে মায়েদের ত্যাগ আছে এখনো। কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে মায়েদের এ মমত্ব ও কষ্ট স্বীকার। এজন্য কোরবানির ইতিহাস বর্ণনার সময় আমাদের জন্য হযরতর হাজেরা (রা🙂র কষ্টের বিবরণও সামনে রাখা আবশ্যক। তা থেকে আমাদের মায়েদের কষ্ট ও মমত্ব অনুধাবন সহজ হবে। নীরব দুর্গম পাহাড়ে যখন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) মা হাজেরা ও শিশু ইসমাইলকে রেখে চলে যান, তখন চারপাশে শুধু ধুধু মরুভূমি। এক ফোঁটা পানির জন্য শিশু ইসমাইলের যে করুন অবস্থা হয়েছিল, তা দেখে মা হাজেরা ( রাঃ ) যে করুন আর্তনাদ বা আহাজারি ছিল তা যদি আমরা কোরবানির ইতিহাস পর্যালোচনা সময় স্মরণ না করি তাহলে কোরবানের উপলব্ধি কি পূর্ণ হতে পারে? আল্লাহ সুবহানাতায়ালা কিন্তু মায়ের এই কষ্ট, এই ছটফট করা এবং সাফা মারওয়ার এই দৌড়– ঝাপকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছেন।
কোরবানি কেবলমাত্র পশু জবাইয়ের নাম নয়, কুরবানীর সঙ্গে জড়িত আছে একজন মায়ের ত্যাগের শিক্ষা।সন্তান লালন পালনে যেভাবে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়,একটি ভূখণ্ড গড়ে তুলতেও ত্যাগ করতে হয় নারী পুরুষ সবাইকে। এখানে মক্কা শহরের গোড়াপত্তন ও ছোট ইসমাইলকে লালনপালনে বড় ভূমিকা ছিল হযরত হাজেরা (রাঃ)র।
কোরবানি জীবনব্যাপী এক মহান ত্যাগের শিক্ষা নিয়ে হাজির হয়েছে আমাদের সামনে। আমাদের এই শিক্ষা ধারণ করতে হবে হৃদয়ে, তবেই আমাদের কোরবানির ঈদের সার্থক হবে। আল্লাহ আমাদের এই ত্যাগ স্বীকার করার সামর্থ্য সবাইকে দান করুন।