নগরীর খতিবের হাট এলাকার গ্রাহক নুরুল ইসলাম। তার পরিবারে রয়েছে অসুস্থ শিশুও। গতকাল মঙ্গলবার দিনভর অসংখ্যবার যাওয়া আসা করে বিদ্যুৎ। একদিকে ভ্যাপসা গরম, অন্যদিতে বিদ্যুতের যাওয়া আসার মধ্যে নুরুল ইসলামের পুরো পরিবারকে তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হয় সারাদিন। উপায়ান্তর না দেখে মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে ফোন করে দৈনিক আজাদীতে।
নুরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ না থাকাতে অসুস্থ শিশুকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছি। প্রচন্ড গরমে ১০ মাস বয়সী বাচ্চাকে সামলানো দায় হয়ে পড়েছে। শুধু নুরুল ইসলাম নয়, ওই এলাকার হাজারো গ্রাহকদের বিদ্যুতের লোডশেডিং ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে মঙ্গলবার। কালুরঘাট বিক্রয় বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গিয়াস ইবনে আলম বলেন, একটি আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে হয়েছে। তবে কোন লোডশেডিং হয়নি। মঙ্গলবার কালুরঘাট বাদেও নগরজুড়ে শনির দশায় পড়েছে পিডিবির বিদ্যুৎ সরবরাহ। একেকদিন একেক এলাকায় লোডশের্ডিংয়ের কবলে পড়েছে পিডিবির গ্রাহকরা। মঙ্গলবার কালুরঘাট বিতরণ কেন্দ্রের গ্রাহকদের দফায় দফায় লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হয়েছে। মোহরায় আন্ডার ক্যাবলে জটিলতার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্নতা ঘটে। একই সমস্যার কারণে ষোলশহর বিতরণ বিভাগের গ্রাহকদের লোডশেডিং ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাছাড়া নিউমুরিং বিতরণ বিভাগের আওতাধীন গ্রাহকদের মঙ্গলবার লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হয়েছে। ষোলশহর বিক্রয় বিতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী নুর উদ্দীন দৈনিক আজাদীকে বলেন, কালুরঘাট ডিভিশনের একটি লাইনের কাজ করার জন্য বিকেলে মুরাদপুর-মোহাম্মদপুর এলাকার লাইন বন্ধ রাখতে হয়েছিল। সন্ধ্যার পর সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
সোমবার দিবাগত গভীররাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত মধ্যম হালিশহর এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। ওই এলাকার বাসিন্দা নিযাম উদ্দীন দৈনিক আজাদীকে বলেন, রাতে দিনে সবসময় লোডশেডিং লেগে থাকে। সোমবার রাত তিনটা থেকে আজ (মঙ্গলবার) সকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। এ বিষয়ে নিউমুরিং বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামির দৈনিক আজাদীকে বলেন, লোডশেডিং ছিল না। লাইনের ত্রুটি সারানোর জন্য হয়তো বন্ধ রাখা হয়েছিল।
এদিকে সোমবার বাকলিয়া এলাকার গ্রাহকরা দুর্ভোগে পড়েন। ওইদিন একটি খুঁটিতে গাড়ির ধাক্কা লেগে ৩৩/১১ কেভি লাইনের ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়ে। এভাবে প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকার গ্রাহকরা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ছেন।
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে বর্তমানে পিক আউয়ারে ১৪শ থেকে ১৭শ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। গরম বাড়ার সাথে সাথে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়তে থাকে। বর্তমানে চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি ২৩ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পিক আওয়ারে ২ হাজার ৩৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১১ অক্টোবর পিকআওয়ারে ২৩ বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৫২৯ মেগাওয়াট। এদিন বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৬৬৬ মেগাওয়াট। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ দক্ষিণাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইমাম হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, কালুরঘাটের আওতাধীন মুরাদপুরে সাবস্টেশনের একটি আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলে ত্রুটি থাকার কারণে কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়টি জানা নেই।