কাপ্তাই রাস্তার মাথায় দু’গ্রুপে সংঘর্ষ, ফাঁকা গুলি

আধ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ টেক্সির চাঁদাবাজি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল তিনটা, সন্ধ্যা ৭টা ও রাত ৯টার দিকে এ হামলা-সংঘর্ষ ও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় ফাঁকাগুলির অভিযোগ পাওয়া গেলেও পুলিশের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়নি। সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টির অভিযোগে শ্রমিক গ্রুপের তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হল, টেম্পো শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন, সহ-সাধারণ সম্পাদক মামুন ও অফিস সম্পাদক জাহেদ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জসিম চৌধুরী কাপ্তাই রাস্তার মাথায় অটোরিকশা-অটোটেম্পোর চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতো। পরে অটোরিকশা ও অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা অটোরিকশা-অটোটেম্পো স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিলেও জসিম মাসোহারা নিয়ে আসছিল। সাম্প্রতিক সময়ে জসিম পুনরায় স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এতে অটোরিকশা ও অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনের সাথে চান্দগাঁও আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক জসিম চৌধুরীর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। জসিম উদ্দিন স্থানীয় এমপি মোসলেম উদ্দিনের অনুসারী বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেল তিনটার দিকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় লাইনম্যান জাহাঙ্গীরের সাথে গাড়ি পার্কিং নিয়ে স্থানীয় চালক মুরাদের কথা কাটাকাটি হয়। এসময় মুরাদের পক্ষ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা জাফর চৌধুরী গ্রুপের স্থানীয় কয়েকজন মিলে শ্রমিক ইউনিয়নের অফিস সম্পাদক জাহেদসহ কয়েকজনকে মারধর করে। এরপর ঘটনা মীমাংসা হয়ে যায়। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুনরায় হামলা করে আবুল হোসেন গ্রুপের তিনজনকে ধরে নিয়ে যায় জসিম গ্রুপের লোকজন। এরপর সিএনজি শ্রমিকরা কাপ্তাই রাস্তার মাথায় সড়ক বন্ধ করে দিলে পুলিশ এসে শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। পরে রাত ৯টার দিকে পুনরায় হামলা চালায় জসিম গ্রুপের লোকজন। এসময় বেশ কয়েকজন আহত হয়। দুই দফা হামলায় আবুল হোসেন গ্রুপের রাশেদুল (৩৫), জাহাঙ্গীর (৩৫), রহিম (৩৩), চালক ইউসুফ (২৭), চালক জানে আলম (২৫), আকাশ (২০), জাবেদ (৩৬), রুবেল (২৩), অফিস সম্পাদক জাহেদ (৩০)। তন্মধ্যে রাশেদুল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
স্থানীয় শ্রমিক সংগঠনের নেতা মো. জাফর দৈনিক আজাদীকে বলেন, ৭টায় হামলা করে তিনজন শ্রমিককে কুমারপাড়া এলাকায় নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পরে আমাদের লোকজনকে উদ্ধার করার জন্য আমরা কঙবাজার ও কাপ্তাই সড়ক বন্ধ করে প্রতিবাদ মিছিল করেছি। পরে পুলিশ এসে আমাদের সরে যেতে বললে আমরা সরে যাই। পরে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর রাত ৯টার দিকে পুনরায় অতর্কিতে হামলা করেছে। জসিম গ্রুপের অলুদ চৌধুরী, ইকবাল, মুছা, মুরাদের নেতৃত্বে ৩০/৪০ জন সন্ত্রাসী হকিস্টিক, কিরিচ, লোহার রড, লাঠিসোটা নিয়ে কাপ্তাই রাস্তার মাথায় উপস্থিত আমাদের বেশ কয়েকজন অটোরিকশা চালককে মারধর করে। এসময় ফাঁকাগুলিও করেছে সন্ত্রাসীরা। তারা দুটি সিএনজি অটোরিকশা ভাংচুর করে। হামলায় অনেকের হাত, পা ভেঙে গেছে। জাহেদের ঠোঁট, নাক রক্তাক্ত জখম হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজন মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জসিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমি ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানি না। কি হয়েছে তাও জানি না। আমিতো এখন বাড়িতে। ওখানে আমাদের কেউ নেই। বিষয়টি আমাদের এমপি মহোদয় মোসলেম ভাই ভালো জানেন। আমার সাথে কোন সম্পর্কও নেই।’
এ ব্যাপারে চান্দগাঁও থানার ওসি আতাউর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘কাপ্তাই রাস্তার মাথায় দুই পক্ষে কথা কাটাকাটি ও হালকা মারামারি হয়েছে। তেমন বড় ঘটনা নয়। আমরা তিনজনকে আটক করেছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন অভিযোগ করার জন্যও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আটক তিনজনকে আইনের আওতায় আনা হবে।’ ঘটনার সময়ে গুলির শব্দের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি গুলির শব্দের বিষয়টি অস্বীকার করে ‘এটি অতবড় ঘটনা কিংবা রাজনৈতিক ঘটনা নয়’ বলে উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদ্বিতীয় দফায়ও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি দুদক
পরবর্তী নিবন্ধসকালে সিএমপি কমিশনারের পরিদর্শন বিকালে ওসি বদলি