কাগজ আমদানিতে মান পরীক্ষা নিয়ে ধোঁয়াশা

সময়ক্ষেপণ ও হয়রানির অভিযোগ ব্যবসায়ীদের

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৮ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা আমদানি নীতি আদেশ (২০২১-২০২৪) অনুযায়ী রাইটিং এন্ড প্রিন্টিং পেপারস ক্যাটাগরির সব ধরনের পণ্য বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় মান উত্তীর্ণ হলেই বন্দর থেকে খালাস নেয়া যাবে। রাইটিং এন্ড প্রিন্টিং পেপারসের ৪৮.০২ এবং ৪৮.১০ ক্যাটাগরিভুক্ত আমদানি পণ্যের যথাযথ শ্রেণিকরণ কোড (এইচএস কোড) রয়েছে ৬৩টি। এসব এইচএস কোডের অধীনে রয়েছে আবার শতশত পণ্য। এইচএস কোড উল্লেখ না করে কেবল রাইটিং এন্ড প্রিন্টিং পেপারস অধীভুক্ত পণ্য বিএসটিআইয়ের মান পরীক্ষার নিয়ম করায় বিপাকে পড়েছেন খোদ কাস্টমস কর্মকর্তারাও। এছাড়া মান পরীক্ষা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকার নয়াবাজারের পেপার মার্কেটের সাদিক এন্টারপ্রাইজ নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের মান পরীক্ষা সংক্রান্ত এমন ঝামেলায় পড়েছেন। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি চীন থেকে চার কন্টেনার আর্ট পেপার আমদানি করে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের মনোনীত সিএন্ডএফ এজেন্টে বিএন শিপিং এজেন্সি অ্যান্ড ট্রেডিং লিমিটেডের মাধ্যমে গত ২১ জুলাই ও ২৩ জুলাই বিল অব এন্ট্রি নম্বর দাখিল করে। যার নম্বর যথাক্রমে-সি-১২৭৭৫০৭ এবং সি-১২৮৮২৩৮। কাস্টমস কর্মকর্তারা আমদানি নীতি আদেশ মতে, রাইটিং এন্ড প্রিন্টিং পেপারস ক্যাটাগরির কারণে বিএসটিআইয়ের মান পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠিয়ে দেন। তবে পরবর্তীতে বিএসটিআই থেকে জানানো হয়েছে, বিএসটিআইয়ের ২২৯ বাধ্যতামূলক মান সনদের আওতায় আর্ট পেপার নেই। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের দাবি, বিএসটিআইয়ের মান পরীক্ষা সংক্রান্ত এই ঝামেলার কারণে তাদের প্রায় ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত পোর্ট এবং শিপিং কোম্পানি ডেমারেজ গুনতে হয়েছে।
এদিকে গত ১০ আগস্ট বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অনাপত্তিপত্রে উল্লেখ করেছেন, আর্ট পেপার সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত ২২৯টি বাধ্যতামূলক মান সনদের আওতাভুক্ত পণ্য নয় বিধায় পণ্যসমূহের অনুকূলে ছাড়পত্র গ্রহণ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা যেতে পারে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার আবুল কাশেম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আসলে আমদানি নীতি আদেশে (২০২১-২০২৪) রাইটিং এন্ড প্রিন্টিং পেপারসের ৪৮.০২ এবং ৪৮.১০ শিরোনাম উল্লেখ করার কারণে আমরা বুঝতে পারছি না কোন ধরনের কাগজ বিএসটিআইয়ের মান পরীক্ষার আওতাভুক্ত আর কোনটি আওতাভুক্ত নয়। কারণ সব কাগজে কিন্তু লেখাও যায় আবার প্রিন্টও করা যায়। আদেশে শুধুমাত্র এইচএস উল্লেখ থাকলে বুঝতে আরেকটু সুবিধা হতো। এখন আর্ট পেপার যেহেতু বিএসটিআইয়ের মান সনদের আওতাভুক্ত নয় বলেছে, আমরা এই পণ্যটি ভবিষ্যতে আর মান যাচাইয়ের জন্য পাঠাবো না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাদিক এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ফারহান সাদিক দৈনিক আজাদীকে বলেন, কাস্টমসের কর্মকর্তারা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো পণ্য বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় পাঠাচ্ছেন। অনেক সময় ম্যানেজড হয়ে তারা বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় পাঠায় না। আবার কেউ যদি দর কষাকষি করে ম্যানেজ করতে না পারে তাহলে বিএসটিআইয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমরা উচ্চ শুল্ক পরিশোধ করে কাগজ আমদানি করছি। তারপরেও আমরা প্রতিনিয়ত কাস্টমসের বিভিন্ন হয়রানির শিকার হচ্ছি।
এদিকে আমদানি আদেশ (২০২১-২০২৪) থেকে পেপারস অ্যান্ড প্রিন্টিং পেপারসে বিএসটিআইয়ের মান পরীক্ষার নিয়ম প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল গত ১ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, ভোগ্যপণ্য এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধ শিল্পের ব্যবহৃত মোড়ক প্রস্তুত করতে বিদেশ থেকে ‘পেপার এন্ড পেপার বোর্ড’ আমদানি হয়। ইতোপূর্বে এসব পণ্যের আমদানি পর্যায়ে বন্দরে বিএসটিআইয়ের মান যাচাইয়ের প্রয়োজন ছিল না। চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমদানি নীতি আদেশ (২০২১-২০২৪) বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত বাংলাদেশ মান (বিডিএস) অনুযায়ী পণ্য তালিকার পৃষ্ঠা নম্বর ৭৮১৬, ক্রমিক নম্বর ৩৮ মোতাবেক রাইটিং এন্ড প্রিন্টিং পেপারসের পণ্যগুলো বিএসটিআইয়ের মান যাচাই সাপেক্ষে খালাস নেয়ার আদেশ জারি করা হয়েছে। এই আদেশের প্রেক্ষিতে বন্দর থেকে পণ্যগুলো খালাস করতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। যার ফলে জরুরি ভোগ্যপণ্যে মোড়কসহ জীবন রক্ষাকারী ওষুধ শিল্পের উৎপাদনের এই সকল কাঁচামাল সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে। অন্যদিকে সময়মতো পণ্যগুলো খালাস করতে না পারলে পোর্ট ডেমারেজসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে বিধায় আমদানিকারকগণ আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। অতএব ব্যবসায়ীদের স্বার্থে রাইটিং অ্যান্ড প্রিন্টিং পেপারস সংক্রান্ত আদেশটি প্রত্যাহারের অনুরোধ রইলো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজালালাবাদে দুইজনকে আসামি করে মামলা
পরবর্তী নিবন্ধগুম-খুনের অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন সংস্থা চায় জাতিসংঘ