এনবিআরকে ছাড়া আদানির সঙ্গে চুক্তি : আহমদ কায়কাউসের বিরুদ্ধে তদন্তে দুদক

| বুধবার , ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ

বিদ্যুতের জন্য ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের চুক্তিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকেএনবিআর ‘পাশ কাটিয়ে’ শুল্ক ও কর অব্যাহতির মাধ্যমে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ‘ফাঁকি’র হওয়ার অভিযোগ আমলে নিয়ে এবার তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ চুক্তির জন্য সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস (চুক্তির সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিব ছিলেন) ও তার নেতৃত্বাধীন কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধেও তদন্ত করতে দুদকের উপপরিচালক রেজাউল করিমকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

এর আগে তদন্তে নেমে আদানির বিদ্যুৎ আমদানিতে প্রায় ৪০ কোটি ডলারের শুল্ক ‘ফাঁকির’ প্রমাণ পায় এনবিআর; বহুল আলোচিত এ চুক্তির সময় সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে পাশ কাটিয়ে শুল্ক ও কর অব্যাহতি দেওয়ার তথ্যও উঠে এসেছে সংস্থাটির তদন্তে। এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি পাঠিয়ে কর আদায়ের এ সংস্থার প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দলিল চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক।

এর সত্যতা নিশ্চিত করে দায়িত্বপ্রাপ্ত অনুসন্ধান কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে তথ্য ও ফাইল চেয়েছি। তা খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন জমা দেব। এজন্য কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

এনবিআরের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের দল তদন্তে নেমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ প্রবেশ ও সঞ্চালনের সময় আমদানির যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের অংশ হিসেবে কোনো বিল অব এন্ট্রি দাখিলের প্রমাণ পায়নি। এছাড়া তা আইনি পন্থায় নিষ্পত্তি না করার প্রমাণও পায়। এর প্রেক্ষাপটে কর ‘ফাঁকির’ বিপুল এ অর্থ পিডিবির কাছ থেকে আদায়ের সুপারিশ করে এনবিআরের কমিটি। এবারের তদন্তে সেই প্রতিবেদন, বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের নির্ধারিত মূল্য ও তা শুল্ক কর আদায়যোগ্য কি না, প্রযোজ্য হলে শুল্ককর পরিশোধ করা হয়েছে কিনা এবং শুদ্ধ কর ছাড়ের বিষয়ে এনবিআর অনুমতি দিয়েছিল কিনা, দেওয়া হয়ে থাকলে এ সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র বা তথ্যাদি এবং আদানি গ্রুপের সাথে পিডিবির চুক্তি খতিয়ে দেখার জন্য শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃক ৯ সদস্যের কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের ফটোকপি চাওয়া হয়েছে চিঠির মাধ্যমে।

আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার আলোচিত এ চুক্তিতে শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়গুলো কীভাবে সম্পাদন করা হয়েছে, তাতে কোনো ত্রুটি ছিল কিনা, শুল্ক পরিহার বা প্রত্যাহারের বিষয় রয়েছে কিনা; এমন আরও কিছু প্রশ্ন সামনে রেখে তদন্তে নেমেছিল এনবিআরের আট কর্মকর্তার তদন্ত দল। তাদের প্রতিবেদনে ২০২৪২৫ অর্থবছরের জুলাই পর্যন্ত ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের বিপরীতে ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৬৭ ডলারের শুল্ককর ‘ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে তথ্য উঠে আছে।

২০২৩ সালের ৯ মার্চ ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় স্থাপিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। তখন থেকেই আমদানি করা এ বিদ্যুতের শুল্কসহ অন্যান্য কর পরিশোধ করা হয়নি। এনবিআরের দল তদন্তে দেখতে পেয়েছে, ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় আদানির কাছ থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে শুল্ক ও অব্যাহতি দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে এনবিআরসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধনগরে এলজিইডি ভবনে দুদকের অভিযান, নথি সংগ্রহ